মাথার বাম পাশে ব্যথা হলে করণীয়: কারণ, লক্ষণ ও সমাধান

অনেকেই মাথার বাম পাশে ব্যথা অনুভব করেন, যা কখনো হালকা, কখনো তীব্র হতে পারে। এটি মাইগ্রেন, টেনশন, সাইনাস, উচ্চ রক্তচাপ বা অন্য কোনো গুরুতর সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। তবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই! কারণ চিহ্নিত করে সঠিক সময়ে ব্যবস্থা নিলে সহজেই মাথাব্যথা কমানো সম্ভব।

আজ আমরা জানবো মাথার বাম পাশের ব্যথার সম্ভাব্য কারণ, কখন ডাক্তার দেখানো জরুরি, এবং ঘরোয়া ও চিকিৎসা পদ্ধতি।

মাথার বাম পাশে ব্যথার কারণ

১. মাইগ্রেন (Migraine) – মাথার একপাশে তীব্র ব্যথার মূল কারণ

সাধারণত একপাশে স্পন্দনযুক্ত ব্যথা হয়, বিশেষ করে বাম পাশে।
আলো, শব্দ ও গন্ধে সংবেদনশীলতা বাড়ে।
অনেক সময় বমি বমি ভাব বা ঝাপসা দেখা হতে পারে।
অতিরিক্ত স্ট্রেস, হরমোন পরিবর্তন, ক্যাফেইন বা চকলেট খাওয়ার ফলে মাইগ্রেন হতে পারে।

raju akon youtube channel subscribtion

২. টেনশন হেডেক (Tension Headache) – বেশি চাপের ফলে ব্যথা

মাথার একপাশে হালকা থেকে মাঝারি চাপ অনুভূত হয়।
কাজের চাপ, টেনশন, ঘুম কম হলে এই ব্যথা হয়।
ব্যথা সাধারণত একটু বিশ্রাম নিলেই কমে যায়।

৩. ক্লাস্টার হেডেক (Cluster Headache) – চোখ ও মাথার পাশে তীব্র ব্যথা

বাম চোখের আশপাশে তীব্র ব্যথা হয়।
প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ব্যথা হতে পারে, বিশেষ করে রাতে।
চোখ লাল হয়ে যায় ও পানি পড়তে পারে।

৪. উচ্চ রক্তচাপ (High Blood Pressure) – রক্তচাপ বেড়ে গেলে ব্যথা হয়

মাথার একপাশে ব্যথার সাথে হালকা মাথা ঘোরা, বমি ভাব, ক্লান্তি অনুভূত হয়।
যদি হঠাৎ মাথাব্যথা শুরু হয় এবং প্রেসার মেপে দেখেন বেশি, তবে দ্রুত ডাক্তার দেখানো উচিত।

৫. সাইনাস ইনফেকশন (Sinusitis) – ঠান্ডাজনিত কারণে মাথাব্যথা

নাক বন্ধ থাকলে বা সর্দি হলে মাথার বাম পাশে ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
মাথা নিচু করলে বা সামনে ঝুঁকলেই ব্যথা বেড়ে যায়।

৬. সার্ভাইক্যাল স্পন্ডিলোসিস বা ঘাড়ের সমস্যা

ঘাড়ের মেরুদণ্ডের সমস্যা থাকলে মাথার একপাশে ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
একটানা কম্পিউটার বা মোবাইল ব্যবহার করলে এটি বাড়তে পারে।

মাথার বাম পাশে ব্যথা হলে করণীয়

১. বিশ্রাম ও পর্যাপ্ত ঘুম নিন

ঘুম কম হলে মাথাব্যথা বাড়তে পারে, তাই প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন।
ঘুমানোর আগে ফোন বা ল্যাপটপ কম ব্যবহার করুন।

২. ঠান্ডা বা গরম সেঁক দিন

মাইগ্রেন বা টেনশন হেডেকের জন্য ঠান্ডা সেঁক দিন।
সাইনাসের ব্যথার জন্য গরম পানির ভাপ নিন।

৩. পর্যাপ্ত পানি পান করুন

ডিহাইড্রেশন হলে মাথাব্যথা বাড়তে পারে, তাই দিনে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন।

৪. ক্যাফেইন এড়িয়ে চলুন

অতিরিক্ত চা বা কফি মাইগ্রেন বাড়াতে পারে, তাই ক্যাফেইন কমানো উচিত।

৫. চোখের যত্ন নিন

দীর্ঘক্ষণ স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে ২০-২০-২০ নিয়ম মেনে চলুন (প্রতি ২০ মিনিট পর ২০ সেকেন্ড বিশ্রাম নিন)।
চোখ পরীক্ষা করিয়ে নিন, কারণ পাওয়ারের সমস্যা থাকলেও মাথাব্যথা হতে পারে।

৬. ব্যায়াম ও মেডিটেশন করুন

প্রতিদিন হালকা ব্যায়াম ও মেডিটেশন করলে টেনশন হেডেক কমবে।
ঘাড় ও পিঠের স্ট্রেচিং করলে সার্ভাইক্যাল স্পন্ডিলোসিসজনিত ব্যথা কমে।

৭. ঘরোয়া সমাধান ব্যবহার করুন

আদা চা পান করুন: আদায় থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান মাথাব্যথা কমায়।
পুদিনা পাতা বা লেবু পান করুন: এগুলো মাইগ্রেন ও টেনশন হেডেক কমায়।

৮. কখন ডাক্তার দেখানো উচিত?

যদি ব্যথা দীর্ঘদিন ধরে থাকে এবং ওষুধেও না কমে।
হঠাৎ প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হয় এবং সাথে ঝাপসা দেখা বা কথা বলতে সমস্যা হয়।
উচ্চ রক্তচাপ থাকলে এবং মাথাব্যথার সাথে মাথা ঘোরা অনুভূত হলে।

উপসংহার: মাথাব্যথাকে অবহেলা নয়!

মাথার বাম পাশে ব্যথা সাধারণত মাইগ্রেন, টেনশন বা সাইনাসজনিত কারণে হতে পারে, যা ঘরোয়া সমাধানে ভালো হয়। তবে যদি ব্যথা নিয়মিত হয়, ওষুধেও না কমে বা অন্যান্য গুরুতর উপসর্গ দেখা দেয়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top