ডায়রিয়া (Diarrhea) একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা, যা শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্ক উভয়ের ক্ষেত্রেই হতে পারে। এটি সাধারণত দূষিত খাবার বা পানীয় গ্রহণের কারণে হয় এবং শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি ও পুষ্টি বেরিয়ে যায়। ডায়রিয়া সময়মতো নিয়ন্ত্রণ করা না হলে ডিহাইড্রেশন, দুর্বলতা এবং অন্যান্য জটিলতার কারণ হতে পারে।
এই আর্টিকেলে আমরা ডায়রিয়ার লক্ষণ, কারণ এবং দ্রুত সুস্থ হওয়ার জন্য করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
ডায়রিয়ার কারণ
১. দূষিত খাবার বা পানীয়
দূষিত বা অপরিষ্কার খাবার এবং পানীয় গ্রহণের মাধ্যমে ডায়রিয়ার সংক্রমণ ঘটে।
২. ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া
Rotavirus, E. coli বা Salmonella-এর মতো জীবাণু ডায়রিয়া সৃষ্টি করে।
৩. খাদ্য অ্যালার্জি
কিছু খাবারের প্রতি অ্যালার্জি বা অসহিষ্ণুতা থেকেও ডায়রিয়া হতে পারে।
৪. হজমের সমস্যা
খাদ্য হজমে অস্বাভাবিকতা থাকলে ডায়রিয়া দেখা দিতে পারে।
৫. ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহার অনেক সময় ডায়রিয়া সৃষ্টি করে।
ডায়রিয়ার লক্ষণ
- পাতলা পায়খানা।
- ঘন ঘন টয়লেটে যাওয়ার প্রয়োজন।
- পেটে ব্যথা।
- গ্যাসের সমস্যা।
- বমি বমি ভাব।
- পানিশূন্যতা (ডিহাইড্রেশন)।
ডায়রিয়া হলে করণীয়
ডায়রিয়া হলে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ, যাতে শরীরের পানির ভারসাম্য বজায় রাখা যায় এবং অবস্থা আরও খারাপ হওয়া এড়ানো যায়।
১. ওআরএস (ORS) পান করুন
- ডায়রিয়ার সময় শরীর থেকে প্রচুর পানি বেরিয়ে যায়, যা পূরণ করার জন্য ওআরএস অত্যন্ত কার্যকর।
- এক গ্লাস পানিতে একটি ওআরএস পাউডার মিশিয়ে দিনে কয়েকবার পান করুন।
২. পর্যাপ্ত পানি এবং তরল গ্রহণ করুন
- বিশুদ্ধ পানি, ডাবের পানি, স্যুপ, বা লবণ-চিনির শরবত পান করুন।
- ডিহাইড্রেশন এড়াতে প্রতি ১-২ ঘণ্টা পরপর তরল গ্রহণ করুন।
৩. হালকা এবং সহজপাচ্য খাবার খান
- পেটের ওপর চাপ কমানোর জন্য সহজপাচ্য খাবার যেমন খিচুড়ি, সেদ্ধ ভাত, ডাল, এবং কলা খান।
- ঝাল, মসলাযুক্ত এবং ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চলুন।
৪. প্রোবায়োটিক গ্রহণ করুন
- দই বা প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার হজমের প্রক্রিয়া স্বাভাবিক করতে সাহায্য করে।
৫. বিশ্রাম নিন
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন, যা শরীরের দ্রুত পুনরুদ্ধারে সহায়ক।
৬. ওষুধ গ্রহণ (ডাক্তারের পরামর্শে)
- ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণে লোপেরামাইড বা অন্য কোনো ওষুধ প্রয়োজন হতে পারে। তবে এটি শুধুমাত্র ডাক্তারের পরামর্শে গ্রহণ করুন।
শিশুদের ডায়রিয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ যত্ন
ডায়রিয়া শিশুদের জন্য বিশেষত ঝুঁকিপূর্ণ। তাদের দ্রুত ডিহাইড্রেশনের শিকার হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
কী করবেন?
- ওআরএস সলিউশন বা ডাবের পানি খাওয়ান।
- বুকের দুধ খাওয়ানো চালিয়ে যান।
- দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান, যদি উপসর্গ গুরুতর হয়।
ডায়রিয়া প্রতিরোধে করণীয়
১. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন
- খাবার খাওয়ার আগে এবং টয়লেট ব্যবহারের পর সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিন।
- ফলমূল ও শাকসবজি ভালোভাবে ধুয়ে নিন।
২. নিরাপদ পানি পান করুন
- শুধুমাত্র ফুটানো বা ফিল্টার করা পানি পান করুন।
৩. রাস্তার খাবার এড়িয়ে চলুন
- রাস্তার খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন, কারণ এগুলো দূষিত হতে পারে।
৪. ভ্যাকসিন গ্রহণ করুন
- ডায়রিয়া প্রতিরোধে Rotavirus Vaccine কার্যকর।
কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন?
ডায়রিয়া যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় বা নিম্নলিখিত উপসর্গগুলো দেখা দেয়, তবে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন:
- ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ডায়রিয়া না কমা।
- ঘন ঘন বমি।
- রক্ত মিশ্রিত মল।
- চরম ডিহাইড্রেশনের লক্ষণ (যেমন শুষ্ক মুখ, চোখের পানির অভাব)।
উপসংহার
ডায়রিয়া হলে দ্রুত এবং সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তরল গ্রহণ, সহজপাচ্য খাবার খাওয়া এবং পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার মাধ্যমে দ্রুত আরোগ্য লাভ করা সম্ভব।
আপনার যদি ডায়রিয়ার সমস্যা দেখা দেয়, তবে দেরি না করে ওআরএস পান করুন এবং প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।