কোমর ব্যথা একটি সাধারণ সমস্যা, যা বেশিরভাগ মানুষ তাদের জীবনে কোনো না কোনো সময়ে অনুভব করেন। কোমর ব্যথার কারণ বিভিন্ন হতে পারে যেমন, পেশীর টান, অস্বাস্থ্যকর বসার ভঙ্গি, অতিরিক্ত ভার উত্তোলন, বা দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকা। যদিও এটি অনেক সময়ে স্বাভাবিক এবং স্বল্পমেয়াদি হতে পারে, তবে কিছু সময় এটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যায় পরিণত হয়।
কোমর ব্যথা হলে কী করা উচিত, তা নিয়ে বিস্তারিত পরামর্শ নিচে দেওয়া হলো:
১. বিশ্রাম নিন
কোমর ব্যথা হলে প্রথম করণীয় হলো বিশ্রাম নেওয়া। অতিরিক্ত কাজ বা ভার উত্তোলনের পরই যদি কোমরে ব্যথা হয়, তাহলে কিছুক্ষণ শুয়ে বিশ্রাম নিন। তবে দীর্ঘ সময় শুয়ে থাকা থেকে বিরত থাকুন, কারণ এটি পরিস্থিতি আরও খারাপ করতে পারে।
২. সঠিক ভঙ্গিতে বসুন
কোমর ব্যথার অন্যতম কারণ হলো দীর্ঘ সময় ভুল ভঙ্গিতে বসা। কম্পিউটারে কাজ করার সময় বা দীর্ঘ সময় বসে থাকার সময় পিঠ সোজা রেখে বসার চেষ্টা করুন। এক্ষেত্রে পিঠের নিচের অংশে একটি বালিশ বা রোলড তোয়ালে দিয়ে সাপোর্ট দিতে পারেন।
৩. গরম বা ঠাণ্ডা প্যাক ব্যবহার
কোমরের পেশীর ব্যথা কমাতে গরম বা ঠাণ্ডা প্যাক ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রথমে ঠাণ্ডা প্যাক প্রয়োগ করতে পারেন ২০ মিনিটের জন্য, তারপর গরম প্যাক লাগাতে পারেন। এটি পেশীর ব্যথা ও ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করে।
৪. হালকা ব্যায়াম
কোমর ব্যথা কমানোর জন্য হালকা ব্যায়াম খুবই কার্যকর। যেমন, স্ট্রেচিং, যোগব্যায়াম বা হাঁটা। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে কোমর ও পিঠের পেশীকে নমনীয় ও শক্তিশালী করতে বিশেষ ধরনের ব্যায়াম করতে পারেন।
৫. ওষুধ সেবন
ব্যথা যদি তীব্র হয়, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শে ব্যথা নাশক ওষুধ (যেমন প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন) সেবন করতে পারেন। তবে ওষুধ সেবনের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৬. সঠিকভাবে ভার উত্তোলন
কোমরে ব্যথা এড়াতে ভার উত্তোলনের সময় সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। ভার তোলার সময় পায়ের পেশী ব্যবহার করুন, কোমর নয়। মাটি থেকে কিছু তুলতে হলে প্রথমে হাঁটু মুড়ে বসুন, তারপর ধীরে ধীরে দাঁড়িয়ে তুলুন।
৭. ম্যাসাজ থেরাপি
ম্যাসাজ থেরাপি কোমর ব্যথা কমাতে সহায়ক হতে পারে। পেশী শিথিল করতে এবং রক্ত সঞ্চালন উন্নত করতে ম্যাসাজ কার্যকর। তবে ম্যাসাজ নেওয়ার আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
৮. পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম
পর্যাপ্ত ঘুম আপনার শরীরকে সুস্থ রাখার অন্যতম উপায়। ঘুমের সময় শরীর তার পেশী ও টিস্যু পুনর্নির্মাণ করে। কোমর ব্যথা হলে সঠিক ভঙ্গিতে শোয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ।
৯. পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ
হাড় ও পেশীর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া জরুরি। ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার যেমন দুধ, দই, পনির এবং সূর্যের আলো থেকে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি গ্রহণ করা উচিত।
কোমর ব্যথা খুবই সাধারণ সমস্যা হলেও এটি দীর্ঘ সময় ধরে হলে জীবনের স্বাভাবিক গতিতে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। সঠিকভাবে বিশ্রাম নেওয়া, ব্যায়াম করা, এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়া কোমর ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করতে পারে। তবে যদি ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।