জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য অনেক নারী নিয়মিত জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল বা কন্ট্রাসেপটিভ পিল গ্রহণ করেন। তবে অনেক সময় দেখা যায়, পিল খাওয়ার পরেও মাসিক সময়মতো হয় না বা অনিয়মিত হয়ে যায়। এটি অনেক নারীর মধ্যে দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
কিন্তু পিল খাওয়ার পর মাসিক বন্ধ বা দেরিতে হওয়া সবসময় গর্ভধারণের লক্ষণ নয়। এর পেছনে আরও বেশ কিছু কারণ থাকতে পারে। আজকের এই ব্লগে আমরা জানবো পিল খাওয়ার পর মাসিক না হলে কী করণীয়, এর সম্ভাব্য কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা পরামর্শ।
পিল খাওয়ার পর মাসিক বন্ধ হওয়ার কারণ
১. হরমোনের পরিবর্তন
জন্মনিয়ন্ত্রণ পিলে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোন থাকে, যা ডিম্বাণুর নির্গমন ও জরায়ুর অভ্যন্তরীণ স্তরকে প্রভাবিত করে। কখনও কখনও পিল খাওয়ার কারণে শরীরে হরমোনের সাময়িক ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হতে পারে, যা মাসিক দেরিতে হওয়ার কারণ হতে পারে।
২. গর্ভধারণের সম্ভাবনা
যদি পিল খাওয়ার সময় কোনও দিন ভুলে যান বা অনিয়মিতভাবে গ্রহণ করেন, তাহলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা থেকে যায়। যদি মাসিক না হয় বা দেরিতে হয়, তাহলে গর্ভধারণ পরীক্ষার (প্রেগনেন্সি টেস্ট) মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া উচিত।
৩. স্ট্রেস ও মানসিক চাপ
চরম মানসিক চাপ বা উদ্বেগের কারণে শরীরের কোর্টিসল (Cortisol) ও অন্যান্য স্ট্রেস হরমোন বেড়ে যায়, যা মাসিক চক্রে প্রভাব ফেলে।
৪. ওজন কমে যাওয়া বা অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি
শরীরের অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি বা কমে যাওয়া হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে, যা মাসিক বন্ধের কারণ হতে পারে।
৫. পিসিওএস (PCOS) বা হরমোনজনিত সমস্যা
যদি পিসিওএস বা পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম থাকে, তবে জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল বন্ধ করার পর অনেক সময় মাসিক দেরিতে আসে বা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
৬. থাইরয়েড সমস্যা
থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্যহীনতা মাসিক চক্রে প্রভাব ফেলে। হাইপোথাইরয়েডিজম বা হাইপারথাইরয়েডিজম থাকলে মাসিক অনিয়মিত হতে পারে।
৭. দীর্ঘদিন ধরে পিল খাওয়া
যারা দীর্ঘদিন ধরে জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খাচ্ছেন, তাদের শরীর পিলের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পড়তে পারে। ফলে হঠাৎ পিল বন্ধ করলে কিছুদিনের জন্য মাসিক বন্ধ হতে পারে।
৮. প্রাকৃতিক শারীরিক পরিবর্তন
কখনও কখনও শরীর স্বাভাবিকভাবেই কিছু পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়, যা মাসিক চক্রকে প্রভাবিত করতে পারে।
পিল খাওয়ার পর মাসিক না হলে কী করণীয়?
১. প্রথমে অপেক্ষা করুন
অনেক সময় পিল বন্ধ করার পর মাসিক হতে ২-৩ সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। তাই অযথা দুশ্চিন্তা না করে কিছুদিন অপেক্ষা করুন।
২. গর্ভধারণ পরীক্ষা করুন
- যদি মাসিক ৭ দিনের বেশি দেরি হয়, তাহলে গর্ভধারণ পরীক্ষা করুন।
- প্রেগনেন্সি টেস্ট নেগেটিভ হলে এবং মাসিক না হলে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে পারেন।
৩. খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করুন
- পুষ্টিকর খাবার খান, যাতে শরীরের হরমোন ব্যালান্স ঠিক থাকে।
- প্রচুর পানি পান করুন এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন।
৪. শরীরচর্চা ও স্ট্রেস কমান
- অতিরিক্ত শরীরচর্চা বা শারীরিক পরিশ্রম কমিয়ে আনুন।
- মেডিটেশন ও পর্যাপ্ত ঘুমের মাধ্যমে মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করুন।
৫. নিয়মিতভাবে পিল গ্রহণ নিশ্চিত করুন
- যদি জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল নেন, তবে একই সময়ে প্রতিদিন খাওয়ার অভ্যাস করুন।
- কোনো দিন পিল নিতে ভুলে গেলে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রহণ করুন।
৬. চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
- যদি মাসিক ৩ মাসের বেশি সময় বন্ধ থাকে, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
- যদি অন্যান্য লক্ষণ যেমন বেশি চুল পড়া, ওজন বেড়ে যাওয়া, ব্রণ হওয়া ইত্যাদি দেখা যায়, তাহলে এটি হরমোনজনিত সমস্যা হতে পারে, যা চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে সমাধান করা দরকার।
কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি?
✔ যদি মাসিক ২-৩ মাসের বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকে।
✔ মাসিক বন্ধের পাশাপাশি বুকে ব্যথা, মাথা ঘোরা বা প্রচণ্ড ক্লান্তি অনুভূত হয়।
✔ মাসিক শুরু হলেও যদি অতিরিক্ত ব্লিডিং বা অস্বাভাবিক রক্তপাত হয়।
✔ যদি পিসিওএস বা থাইরয়েড সমস্যা থাকার সন্দেহ হয়।
উপসংহার
পিল খাওয়ার পর মাসিক বন্ধ বা দেরিতে হওয়া সাধারণ একটি ঘটনা, যা বিভিন্ন কারণে ঘটতে পারে। হরমোনজনিত পরিবর্তন, স্ট্রেস, ওজন পরিবর্তন বা গর্ভধারণের সম্ভাবনার কারণে এমনটা হতে পারে। তাই আতঙ্কিত না হয়ে প্রথমে গর্ভধারণ পরীক্ষা করুন এবং জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে হরমোন ব্যালান্স বজায় রাখার চেষ্টা করুন। তবে যদি মাসিক ২-৩ মাসের বেশি দেরি হয় বা অন্যান্য জটিল লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
আপনার মতামত জানান
আপনার যদি এই সমস্যা সম্পর্কিত কোনো অভিজ্ঞতা থাকে, তাহলে কমেন্টে শেয়ার করুন। নারীদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে আরও তথ্য পেতে আমাদের ব্লগ সাবস্ক্রাইব করুন।