গলায় কিছু আটকে যাওয়া একটি বিপজ্জনক এবং প্রাণঘাতী পরিস্থিতি হতে পারে। বিশেষ করে খাদ্য বা ছোট কোনো বস্তু আটকে গেলে শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা হতে পারে, যা শ্বাসরুদ্ধ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। এমন অবস্থায় দ্রুত সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ব্লগে আমরা গলায় কিছু আটকে গেলে কী কী করণীয়, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
গলায় কিছু আটকে গেলে সাধারণ লক্ষণ
১. হঠাৎ কাশি শুরু হওয়া: কিছু আটকে গেলে স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে কাশি হতে পারে।
২. শ্বাস নিতে অসুবিধা: শ্বাস নেওয়া কঠিন হয়ে পড়তে পারে বা শ্বাস পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
৩. গলা চেপে ধরা: মানুষ প্রায়ই গলা চেপে ধরে সংকেত দেয় যে কিছু আটকে গেছে।
৪. চোখ-মুখ লাল হয়ে যাওয়া: শ্বাস না নিতে পারলে ত্বক নীলচে হয়ে যেতে পারে।
৫. কথা বলতে না পারা: গলায় কিছু আটকে গেলে মানুষ কথা বলতে সক্ষম নাও হতে পারে।
6. অজ্ঞান হয়ে যাওয়া: শ্বাস বন্ধ থাকলে মস্তিষ্কে অক্সিজেন না পৌঁছানোর কারণে মানুষ অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।
গলায় কিছু আটকে গেলে করণীয়
১. কাশি দিয়ে বের করার চেষ্টা করুন
যদি কোনো বস্তু গলায় আটকে যায় এবং আপনি কাশতে সক্ষম হন, তবে জোরে জোরে কাশি দিয়ে বস্তুটি বের করার চেষ্টা করুন। কাশি প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং অনেক সময় এটির মাধ্যমে আটকে থাকা বস্তু বের হয়ে আসে।
২. হেইমলিচ ম্যানুভার (Heimlich Maneuver) প্রয়োগ করুন
যদি গলা আটকে যাওয়া বস্তু সহজে বের না হয়, তাহলে হেইমলিচ ম্যানুভার নামে পরিচিত একটি প্রাথমিক চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করা যেতে পারে। এটি বিশেষত তখন কার্যকর, যখন ব্যক্তি শ্বাস নিতে পারছে না বা কাশতে পারছে না।
হেইমলিচ ম্যানুভার করার ধাপ:
১. আক্রান্ত ব্যক্তির পিছন দিকে দাঁড়ান। 2. তার কোমরের ঠিক উপরে দুই হাত মুঠি করে রাখুন, এক হাত দিয়ে আরেক হাতের মুঠি ধরে রাখুন। 3. তলপেটের দিকে জোরে চাপ প্রয়োগ করুন, যেন আটকে থাকা বস্তু উপরের দিকে উঠে আসে। 4. এই পদ্ধতি বারবার করুন যতক্ষণ না বস্তুটি বের হয়ে আসে বা ব্যক্তি শ্বাস নিতে সক্ষম হয়।
৩. ব্যক্তি অচেতন হলে CPR প্রয়োগ করুন
যদি ব্যক্তি অজ্ঞান হয়ে যায়, তাহলে অবিলম্বে CPR (Cardiopulmonary Resuscitation) শুরু করতে হবে। এতে বুকে চাপ দেওয়া এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের কৃত্রিম ব্যবস্থা করতে হবে। প্রশিক্ষিত না হলে চিকিৎসা সংক্রান্ত সাহায্য পাওয়া উচিত।
৪. বাচ্চাদের জন্য আলাদা পদ্ধতি
ছোট শিশু বা শিশুদের ক্ষেত্রে হেইমলিচ ম্যানুভার প্রয়োগ করার পরিবর্তে, তাদের পিঠে হালকা চাপ দেওয়া উচিত। বাচ্চাকে উপুর করে তার পিঠে ৫ বার হালকা চাপ দিতে হবে। যদি বস্তু বের না হয়, তবে শিশু চিকিৎসকের সাহায্য নেওয়া উচিত।
৫. ডাক্তারের সাহায্য নিন
যদি কোনো কিছু আটকে থাকা অবস্থা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় এবং প্রাথমিক চিকিৎসা কাজ না করে, তাহলে অবিলম্বে হাসপাতালে বা ডাক্তারের সাহায্য নেওয়া জরুরি। চিকিৎসকরা এন্ডোস্কোপি বা অন্য পদ্ধতি ব্যবহার করে বস্তুটি বের করতে পারেন।
সতর্কতা
১. খাবার আস্ত না গিলে ছোট টুকরো করে চিবিয়ে খাওয়া: বিশেষ করে মাংস, মাছের কাঁটা বা ছোট ফল খাওয়ার সময় সতর্ক থাকা উচিত।
২. ছোট বাচ্চাদের কাছে ছোট বস্তু না রাখা: ছোট বাচ্চারা প্রায়ই খেলনা বা ছোট বস্তু মুখে দেয়, যা তাদের গলায় আটকে যেতে পারে।
৩. ধীরে ধীরে খাওয়া এবং খাওয়ার সময় কথা না বলা: দ্রুত খাওয়া বা কথা বলার সময় খাবার গলায় আটকে যেতে পারে।
উপসংহার
গলায় কিছু আটকে গেলে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হেইমলিচ ম্যানুভার বা CPR-এর মতো প্রাথমিক চিকিৎসা পদ্ধতি দ্রুত প্রয়োগ করলে শ্বাসরুদ্ধ হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়। তবে যদি প্রাথমিক চিকিৎসা ব্যর্থ হয়, তবে অবিলম্বে চিকিৎসা সহায়তা নেওয়া উচিত।