শীতকাল বা ঠান্ডার সময় নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি সাধারণ সমস্যা, বিশেষত যখন এক দিকের নাক বন্ধ থাকে। এই সমস্যাটি খুবই অস্বস্তিকর হতে পারে এবং নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। ঠান্ডার কারণে নাকের ভেতরের ঝিল্লিতে প্রদাহ হতে পারে, যা নাক বন্ধ হওয়ার কারণ। তবে সঠিক কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করলে এই সমস্যাটি সহজেই সমাধান করা যায়।
একদিকের নাক বন্ধ হওয়ার কারণ
নাক বন্ধ হওয়ার কয়েকটি প্রধান কারণ আছে, যেমন:
- ঠান্ডা লেগে যাওয়া বা ফ্লু: সাধারণ ঠান্ডার সময় নাকের ঝিল্লি ফুলে ওঠে, ফলে নাক বন্ধ হয়।
- অ্যালার্জি: ধুলো, পরাগরেণু বা ধোঁয়ার কারণে নাক বন্ধ হতে পারে।
- সাইনাস ইনফেকশন: সাইনাসে প্রদাহ হলে নাক বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
- নাকের মধ্যবর্তী পর্দায় ত্রুটি: নাকের মধ্যে থাকা বিভাজন (সেপ্টাম) বাঁকা হলে একটি দিক বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
একদিকের নাক বন্ধ থাকলে করণীয়
নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার সমস্যায় দ্রুত আরাম পেতে কিছু ঘরোয়া ও কার্যকর সমাধান আছে। এগুলো নাকের প্রদাহ কমায় এবং নিঃশ্বাস নিতে সহায়তা করে।
১. গরম পানির ভাপ নিন
গরম পানির ভাপ নাকের ভেতরের মিউকাস পাতলা করে এবং বন্ধ হওয়া নাক খুলতে সাহায্য করে। একটি বাটিতে গরম পানি নিয়ে তার ভাপ মুখের দিকে টেনে নিন এবং একটি তোয়ালে দিয়ে মাথা ঢেকে রাখুন। এতে নাকের প্যাসেজ পরিষ্কার হয়।
২. লবণ পানি ব্যবহার করুন
নাক পরিষ্কার করার জন্য লবণ পানি (স্যালাইন স্প্রে) একটি কার্যকর সমাধান। এটি নাকের ঝিল্লি থেকে মিউকাস দূর করতে সাহায্য করে এবং নাকের পথ খুলে দেয়। নাক বন্ধ হলে দিনে ২-৩ বার লবণ পানি ব্যবহার করতে পারেন।
৩. তাপ সেঁক দিন
গরম তোয়ালে দিয়ে নাকের উপর তাপ সেঁক দিলে নাকের রক্তনালী প্রসারিত হয় এবং মিউকাস নরম হয়ে বের হয়ে আসতে পারে। এটি নাক বন্ধ খুলতে কার্যকর।
৪. বেশি পানি পান করুন
শরীরকে হাইড্রেটেড রাখলে মিউকাস তরল থাকে এবং নাকের পথ বন্ধ হওয়া কমে আসে। তাই প্রচুর পানি, গরম চা বা স্যুপ পান করা উচিত।
৫. অ্যালার্জেন থেকে দূরে থাকুন
যদি নাক বন্ধ হওয়ার কারণ হয় অ্যালার্জি, তবে অবশ্যই অ্যালার্জেন যেমন ধুলো, পরাগরেণু, ধোঁয়া ইত্যাদি থেকে দূরে থাকতে হবে। ঘরবাড়ি পরিষ্কার রাখুন এবং অ্যালার্জির প্রতিকার হিসেবে প্রয়োজনীয় ওষুধ সেবন করুন।
৬. উঁচু বালিশে ঘুমান
রাতে ঘুমানোর সময় উঁচু বালিশ ব্যবহার করুন, যাতে আপনার মাথা কিছুটা উপরে থাকে। এতে নাকের প্যাসেজ খোলা থাকে এবং নাক বন্ধ হওয়ার সমস্যা কিছুটা লাঘব হয়।
৭. হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করুন
ঘরের বাতাস যদি শুষ্ক হয়, তবে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করলে বাতাসে আর্দ্রতা বাড়বে এবং নাকের ঝিল্লি শুষ্ক হবে না। এতে নাকের ভেতরের প্রদাহ কমবে এবং নাকের বন্ধভাব খুলে যাবে।
কখন ডাক্তার দেখাবেন?
যদি নাক বন্ধ হওয়ার সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয়, সাথে প্রচণ্ড মাথাব্যথা, জ্বর, কান ব্যথা বা মুখ ফুলে যাওয়া দেখা দেয়, তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এছাড়াও যদি নাকের মধ্যবর্তী পর্দা ত্রুটির কারণে সমস্যা হয়, তাহলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে সার্জারি করা লাগতে পারে।
উপসংহার
ঠান্ডায় নাক বন্ধ হওয়া খুবই সাধারণ সমস্যা, তবে সঠিক কিছু পদক্ষেপ নিলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। গরম পানির ভাপ, লবণ পানি, এবং পর্যাপ্ত পানি পানের মতো ঘরোয়া উপায় নাক খুলতে সাহায্য করে। তবে, সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ঠিকানা: পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।
ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬.