নাকের হাড় বাঁকা বা ডেভিয়েটেড ন্যাজাল সেপটাম (Deviated Nasal Septum) হলো নাকের মাঝের সেপটাম বা বিভাজক অস্থি এবং কার্টিলেজের বিকৃতি, যা শ্বাসপ্রশ্বাসে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। এটি বেশিরভাগ মানুষের মধ্যেই কোনো না কোনোভাবে দেখা যায়, কিন্তু যদি এটি অত্যন্ত বাঁকা হয়, তাহলে এটি শ্বাসনালীতে সমস্যা তৈরি করতে পারে এবং নানান স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে।
নাকের হাড় বাঁকা হওয়ার কারণ
১. জন্মগত সমস্যা
অনেকের ক্ষেত্রে নাকের হাড় বাঁকা থাকা একটি জন্মগত সমস্যা হতে পারে। এটি জন্মের সময় গঠনের ত্রুটির কারণে ঘটে।
২. আঘাত বা দুর্ঘটনা
নাকের হাড় বাঁকা হওয়ার একটি সাধারণ কারণ হলো আঘাত বা দুর্ঘটনা। শিশুদের খেলাধুলা বা বড়দের ক্ষেত্রে দুর্ঘটনা বা মারামারি থেকে এটি হতে পারে।
৩. বয়স বাড়ার সাথে সাথে পরিবর্তন
কিছু ক্ষেত্রে, বয়স বাড়ার সাথে সাথে নাকের হাড়ের গঠন পরিবর্তিত হয়ে বাঁকা হতে পারে।
নাকের হাড় বাঁকা হলে লক্ষণসমূহ
নাকের হাড় সামান্য বাঁকা হলে সাধারণত তেমন কোনো সমস্যা হয় না। তবে যদি এটি গুরুতর আকার ধারণ করে, তাহলে বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দিতে পারে:
- শ্বাস নিতে কষ্ট: নাকের এক পাশ দিয়ে স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে অসুবিধা হতে পারে।
- নাক বন্ধ থাকা: প্রায়ই এক বা দুই পাশের নাক বন্ধ হয়ে থাকা।
- নাসারন্ধ্রে চাপ বা ব্যথা: নাসারন্ধ্রের ভেতরে বা আশেপাশে চাপ অনুভব করা।
- নাক দিয়ে রক্তপাত: নাকের হাড় বাঁকা থাকলে শ্বাসনালী শুষ্ক হয়ে নাক থেকে রক্তপাত হতে পারে।
- মাথাব্যথা: ক্রমাগত শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যার কারণে মাথাব্যথা হতে পারে।
- শোবার সময় শ্বাসকষ্ট: নাকের হাড় বাঁকা থাকলে শোয়ার সময় শ্বাসকষ্ট বা স্লিপ অ্যাপনিয়া (Sleep Apnea) হতে পারে।
নাকের হাড় বাঁকা হলে করণীয়
১. চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
যদি নাকের হাড় বাঁকা থাকার কারণে শ্বাস নিতে সমস্যা হয়, তাহলে একজন নাক-কান-গলা (ENT) বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করা উচিত। তিনি শারীরিক পরীক্ষা করে বা নাকের ভিতরের অবস্থা দেখার জন্য এন্ডোস্কপি বা সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে সমস্যার মাত্রা নির্ধারণ করতে পারেন।
২. নাকের শুষ্কতা কমানোর জন্য স্যালাইন স্প্রে
নাকের ভেতরের শুষ্কতা কমানোর জন্য স্যালাইন ন্যাজাল স্প্রে ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি নাসারন্ধ্রকে আর্দ্র রাখতে সহায়ক এবং শ্বাস নিতে সহায়তা করে।
৩. ডিকনজেস্ট্যান্ট ও অ্যান্টিহিস্টামিন
যদি নাকের হাড় বাঁকা থাকার কারণে নাক বন্ধ হয়ে থাকে বা অ্যালার্জির লক্ষণ দেখা দেয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শে ডিকনজেস্ট্যান্ট বা অ্যান্টিহিস্টামিন ব্যবহার করা যেতে পারে।
৪. ন্যাসাল স্টেরয়েড স্প্রে
নাকের হাড় বাঁকা থাকার কারণে শ্বাসনালীতে প্রদাহ হলে, চিকিৎসকের পরামর্শে ন্যাসাল স্টেরয়েড স্প্রে ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি নাসারন্ধ্রের প্রদাহ কমিয়ে শ্বাস নিতে সহায়তা করে।
৫. সার্জারি (সেপটোপ্লাস্টি)
যদি নাকের হাড় অতিরিক্ত বাঁকা থাকে এবং ঔষধে কাজ না হয়, তবে সার্জারি করা লাগতে পারে। সেপটোপ্লাস্টি নামক একটি শল্যচিকিৎসার মাধ্যমে বাঁকা হাড় সোজা করা হয়। এটি সাধারণত স্থায়ী সমাধান এবং এতে শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা অনেকাংশে দূর হয়ে যায়। সেপটোপ্লাস্টির মাধ্যমে নাকের আকারে পরিবর্তন আসে না, বরং শুধু সেপটাম সোজা করা হয়। তবে, যদি নাকের বাহ্যিক আকারে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন হয়, তবে রাইনোপ্লাস্টি (Rhinoplasty) করা যেতে পারে।
নাকের হাড় বাঁকা না করলে কী সমস্যা হতে পারে?
যদি নাকের হাড় বাঁকা সমস্যাটি অবহেলা করা হয়, তবে এটি বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে, যেমন:
- ক্রমাগত শ্বাসকষ্ট
- স্লিপ অ্যাপনিয়া
- নাক দিয়ে ঘন ঘন রক্তপাত
- কানের ইনফেকশন
- মাথাব্যথা এবং ক্লান্তি
উপসংহার
নাকের হাড় বাঁকা থাকলে অনেকের ক্ষেত্রে তেমন কোনো সমস্যা হয় না। তবে যদি এটি শ্বাস নিতে অসুবিধা সৃষ্টি করে বা অন্যান্য শারীরিক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। প্রয়োজনে সার্জারি করিয়ে সমস্যার স্থায়ী সমাধান করা সম্ভব।