নবজাতকদের খাওয়ানোর সময় অনেক সময় দেখা যায়, তাদের গলায় দুধ আটকে যায় বা শ্বাসকষ্ট হয়। এটি অত্যন্ত ভীতিকর এবং কখনো কখনো বিপজ্জনক হতে পারে। নবজাতকের খাবার গ্রহণের সঠিক পদ্ধতি জানা জরুরি, যাতে এই ধরনের সমস্যা এড়ানো যায়। আজকের ব্লগে আমরা নবজাতকের গলায় দুধ আটকে গেলে করণীয় এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত জানব।
নবজাতকের গলায় দুধ আটকে যাওয়ার কারণ
নবজাতকের গলায় দুধ আটকে যাওয়ার কয়েকটি সাধারণ কারণ রয়েছে:
✅ খাওয়ানোর ভুল পদ্ধতি: শিশুকে ভুলভাবে স্তন্যপান করানো হলে দুধ গলায় আটকে যেতে পারে।
✅ বেশি পরিমাণে দুধ পান: শিশুকে খুব বেশি দুধ খাওয়ানো হলে সে ঠিকমতো গিলতে না পারলে দুধ আটকে যেতে পারে।
✅ ফিডারের ভুল ব্যবহার: যদি শিশুকে বোতল থেকে দুধ খাওয়ানো হয় এবং ফিডারের ছিদ্র বড় হয়, তাহলে দুধ অতিরিক্ত প্রবাহিত হয়ে গলায় আটকে যেতে পারে।
✅ শিশুর হজম সমস্যা: কিছু নবজাতকের হজম ক্ষমতা দুর্বল হওয়ার কারণে তারা দুধ সঠিকভাবে গলাধঃকরণ করতে পারে না।
✅ শ্বাসনালীতে দুধ চলে যাওয়া: শিশুর গলার পথ খুব সরু, তাই একটু অসতর্কতা হলে দুধ শ্বাসনালীতে চলে যেতে পারে।
নবজাতকের গলায় দুধ আটকে গেলে তা বোঝার উপায়
যদি আপনার শিশুর গলায় দুধ আটকে যায়, তবে কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে:
🔴 শিশুর হঠাৎ করে কাশি শুরু হওয়া
🔴 মুখ লাল বা নীলচে হয়ে যাওয়া
🔴 শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া
🔴 কোনো শব্দ ছাড়াই হাঁ করে থাকার চেষ্টা করা
🔴 অস্থিরভাবে হাত-পা নাড়ানো
যদি এই লক্ষণগুলো লক্ষ্য করেন, তাহলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
নবজাতকের গলায় দুধ আটকে গেলে করণীয়
নবজাতকের গলায় দুধ আটকে গেলে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করুন:
১. শিশুকে কাঁধের উপর উঁচু করে রাখুন
শিশুকে কাঁধের উপর ধরে পিঠে হালকা চাপ দিয়ে আলতোভাবে থাপড়ান। এতে শ্বাসনালীতে আটকে থাকা দুধ বেরিয়ে আসতে পারে।
২. শিশুকে নিচের দিকে মুখ করে ধরুন
শিশুকে এমনভাবে ধরুন যাতে তার মাথা নিচের দিকে ঝুঁকে থাকে (মুখ নিচে ও পা উপরে)। এরপর পিঠের মাঝে হালকা চাপ দিন। এটি শ্বাসনালী পরিষ্কার করতে সাহায্য করবে।
৩. মুখের ভিতর আঙুল ঢোকাবেন না
অনেকে শিশুর গলা পরিষ্কার করতে মুখের ভিতর আঙুল ঢোকানোর চেষ্টা করেন, কিন্তু এটি বিপজ্জনক হতে পারে। এটি দুধকে আরও গভীরে ঠেলে দিতে পারে।
৪. কাশি হলে তাকে বাধা দেবেন না
শিশু স্বাভাবিকভাবে কাশি দিয়ে শ্বাসনালী পরিষ্কার করার চেষ্টা করবে। তাই কাশি থামানোর চেষ্টা করবেন না। বরং শিশুকে সোজা করে রাখুন।
৫. যদি শিশু নিস্তেজ হয়ে যায়, তাহলে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসকের কাছে যান
যদি শিশুর মুখ নীল হয়ে যায় বা সে নিস্তেজ হয়ে পড়ে, তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান।
নবজাতকের গলায় দুধ আটকে যাওয়া প্রতিরোধের উপায়
✅ শিশুকে সঠিকভাবে খাওয়ান: শিশুকে কোলে বসিয়ে বা আধশোয়া অবস্থায় খাওয়ান, যাতে সে সহজে দুধ গিলতে পারে।
✅ স্তন্যপান করানোর সময় বিরতি দিন: কিছুক্ষণ খাওয়ানোর পর বিরতি দিন এবং শিশুর পিঠে হালকা চাপ দিয়ে ঢেকুর তুলতে সাহায্য করুন।
✅ সঠিক ফিডার ব্যবহার করুন: যদি শিশুকে বোতলের দুধ খাওয়ানো হয়, তাহলে ফিডারের ছিদ্র খুব বড় বা ছোট যেন না হয়।
✅ শিশুকে শুইয়ে খাওয়াবেন না: শিশুকে শুইয়ে দুধ খাওয়ালে গলায় আটকে যাওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
✅ খাওয়ানোর পরপরই শিশুকে বিছানায় শুইয়ে দেবেন না: খাওয়ানোর পর কিছুক্ষণ ধরে রাখুন, যাতে দুধ হজম হতে পারে।
উপসংহার
নবজাতকের গলায় দুধ আটকে যাওয়া খুবই ভয়াবহ হতে পারে, তবে সচেতন থাকলে এ সমস্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব। সঠিকভাবে শিশুকে খাওয়ানো এবং সতর্কতা অবলম্বন করলে দুধ আটকে যাওয়ার ঝুঁকি কমানো যায়। যদি কোনো গুরুতর সমস্যা হয়, তবে দেরি না করে নিকটস্থ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
