গর্ভাবস্থার সময় গর্ভের শিশুর স্বাস্থ্যের প্রতি মায়েদের বিশেষ নজর দেওয়া জরুরি। একটি সাধারণ এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো শিশুর হার্টবিট বা হৃদস্পন্দন। গর্ভের বাচ্চার হৃদস্পন্দন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হলে (যাকে ফিটাল ট্যাকিকার্ডিয়া বলা হয়), এটি কখনো কখনো উদ্বেগের কারণ হতে পারে। তবে সঠিক তথ্য এবং পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। এই ব্লগে, গর্ভের বাচ্চার হার্টবিট বেশি হওয়ার কারণ, এর প্রভাব এবং করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
গর্ভের শিশুর স্বাভাবিক হৃদস্পন্দন
গর্ভাবস্থার সময় শিশুর হৃদস্পন্দন সাধারণত তার বয়সের উপর নির্ভর করে।
- প্রথম ত্রৈমাসিক (৬-৯ সপ্তাহ): ৯০ থেকে ১৭০ বিট প্রতি মিনিট (BPM)।
- দ্বিতীয় ও তৃতীয় ত্রৈমাসিক: ১১০ থেকে ১৬০ BPM।
যদি হৃদস্পন্দন ১৬০ BPM-এর বেশি হয়, তবে এটি উচ্চ হার্টবিট হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
গর্ভের বাচ্চার হার্টবিট বেশি হওয়ার সম্ভাব্য কারণ
১. মায়ের মানসিক চাপ
গর্ভাবস্থার সময় মায়ের মানসিক চাপ বা উদ্বেগ শিশুর হৃদস্পন্দনে প্রভাব ফেলতে পারে।
২. জ্বর বা সংক্রমণ
মায়ের জ্বর বা কোনো ধরনের ইনফেকশন থাকলে শিশুর হার্টবিট বৃদ্ধি পেতে পারে।
৩. ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
গর্ভবতী মায়ের নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ সেবনের ফলে বাচ্চার হৃদস্পন্দন বেড়ে যেতে পারে।
৪. প্লাসেন্টার রক্ত সঞ্চালন সমস্যা
যদি প্লাসেন্টার মাধ্যমে পর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহ না হয়, তবে শিশুর হার্টবিট বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৫. অন্য শারীরিক জটিলতা
শিশুর হৃদযন্ত্রের গঠনগত কোনো সমস্যা থাকলে এটি হার্টবিট বেড়ে যাওয়ার কারণ হতে পারে।
গর্ভের বাচ্চার হার্টবিট বেশি হলে করণীয়
১. নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ নিন
গর্ভাবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। অস্বাভাবিক হার্টবিট পর্যবেক্ষণ করলে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন।
২. আল্ট্রাসাউন্ড এবং ফিটাল মনিটরিং
- নন-স্ট্রেস টেস্ট (NST): বাচ্চার হার্টবিট পর্যবেক্ষণের জন্য ব্যবহার করা হয়।
- বায়োফিজিক্যাল প্রোফাইল (BPP): বাচ্চার সার্বিক সুস্থতা যাচাই করতে ব্যবহৃত হয়।
৩. মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করুন
প্রতিদিনের জীবনে মানসিক চাপ কমানোর জন্য মেডিটেশন, হালকা ব্যায়াম, এবং পর্যাপ্ত বিশ্রামের ব্যবস্থা করুন।
৪. পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ
গর্ভাবস্থার সময় পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- ফলমূল ও শাকসবজি: ভিটামিন এবং মিনারেল সরবরাহ করে।
- ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড: শিশুর হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী।
- আয়রন ও ফোলেট: রক্তের সঞ্চালন ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
৫. ওষুধ ও ইনফেকশনের চিকিৎসা
যদি মায়ের কোনো ইনফেকশন বা জ্বর থাকে, তবে ডাক্তারের পরামর্শে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করুন।
৬. পর্যাপ্ত পানি পান
ডিহাইড্রেশন মায়ের রক্তচাপ এবং শিশুর হার্টবিটে প্রভাব ফেলতে পারে। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করা উচিত।
হার্টবিট বেশি হলে কখন ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন?
- হৃদস্পন্দনের হার ১৮০ BPM-এর বেশি হলে।
- শিশুর নড়াচড়ায় কোনো পরিবর্তন হলে।
- মায়ের তীব্র জ্বর বা ব্যথা অনুভূত হলে।
- রক্তক্ষরণ বা ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ দেখা দিলে।
উপসংহার
গর্ভের বাচ্চার হার্টবিট বেশি হওয়া সব সময় উদ্বেগের কারণ নয়। তবে সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। নিয়মিত ডাক্তারি পরীক্ষা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা নিশ্চিত করলে গর্ভাবস্থার ঝুঁকি অনেকটাই হ্রাস পায়। আপনার এবং আপনার সন্তানের সুস্থতার জন্য সঠিক যত্ন ও সচেতনতা অপরিহার্য।