উচ্চ রক্তচাপ বা হাই প্রেশার একটি মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা, যা নিয়ন্ত্রণে না রাখলে হৃদরোগ, স্ট্রোক, এবং কিডনি সমস্যার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। রক্তচাপ হঠাৎ বেড়ে গেলে তাৎক্ষণিক কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। এখানে হাই প্রেশার রোগীর রক্তচাপ বেড়ে গেলে কী করা উচিত, সে সম্পর্কে কিছু পরামর্শ দেওয়া হলো।
হাই প্রেশার বেড়ে যাওয়ার কারণসমূহ:
১. অতিরিক্ত লবণ খাওয়া: লবণ বেশি খেলে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে। লবণের অতিরিক্ত গ্রহণ রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা বাড়ায় এবং এটি রক্তচাপ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।
২. মানসিক চাপ বা টেনশন: মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা হঠাৎ করে রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। অনেক সময় টেনশন বা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত অবস্থায় থাকলে রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
৩. শারীরিক কার্যকলাপের অভাব: দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকা বা শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয় থাকার ফলে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে। নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
৪. ধূমপান ও মদ্যপান: ধূমপান এবং অ্যালকোহল রক্তচাপ বৃদ্ধি করে। এ ধরনের অভ্যাস রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বড় বাধা হতে পারে।
৫. ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কিছু ওষুধ যেমন ওষুধ বা ব্যথানাশক ঔষধের কারণে হঠাৎ রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে।
হাই প্রেশার বেড়ে গেলে তাৎক্ষণিক করণীয়:
১. শরীরকে শান্ত রাখুন: রক্তচাপ বেড়ে গেলে সবচেয়ে আগে শরীরকে শান্ত রাখতে হবে। শুয়ে পড়ুন বা কোনো আরামদায়ক স্থানে বসে পড়ুন। ধীরে ধীরে গভীর শ্বাস নিন এবং দুশ্চিন্তা কমানোর চেষ্টা করুন।
২. পানি পান করুন: দ্রুত কিছু পানি পান করুন। পানি রক্তপ্রবাহকে সঠিকভাবে চলাচল করতে সাহায্য করে, যা রক্তচাপ কমাতে পারে।
৩. গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস নিন: ধীরে ধীরে গভীর শ্বাস নিন এবং ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন। এতে মানসিক চাপ কমে যায় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আসে।
৪. লবণ এড়িয়ে চলুন: যদি রক্তচাপ বেড়ে যায়, তাৎক্ষণিকভাবে লবণ খাওয়া বন্ধ করুন। অতিরিক্ত লবণ রক্তচাপ বাড়ায়।
৫. ঠাণ্ডা পানি দিয়ে হাত-মুখ ধোয়া: ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ ধোয়া এবং হাত-পা ধুয়ে নিলে শরীর শীতল হয়, যা রক্তচাপ কিছুটা কমাতে সহায়ক হতে পারে।
দীর্ঘমেয়াদী সমাধান:
১. সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন: খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে। শাকসবজি, ফলমূল, কম চর্বিযুক্ত প্রোটিন, এবং সম্পৃক্ত ফ্যাট কম খাওয়া উচিত। বিশেষ করে, লবণ এবং প্রসেসড খাবার এড়িয়ে চলুন।
২. নিয়মিত ব্যায়াম: নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। হাঁটা, সাইকেল চালানো বা যোগব্যায়াম করা রক্তচাপ কমাতে পারে।
৩. ধূমপান ও মদ্যপান বন্ধ করুন: ধূমপান ও মদ্যপান উচ্চ রক্তচাপের অন্যতম প্রধান কারণ। এগুলো ত্যাগ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৪. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন: অতিরিক্ত ওজন হাই প্রেশারের জন্য একটি বড় কারণ। সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়াম মেনে চললে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
৫. মানসিক চাপ কমান: মানসিক চাপ কমানোর জন্য মেডিটেশন, যোগব্যায়াম বা মাইন্ডফুলনেস অনুশীলন করতে পারেন। মানসিক চাপ কমলে রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
৬. ডাক্তারের পরামর্শ নিন: যদি আপনার রক্তচাপ নিয়মিতভাবে বেড়ে যায়, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ গ্রহণ করুন।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে জীবনধারার পরিবর্তন এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। রক্তচাপ বেড়ে গেলে তাৎক্ষণিক কিছু পদক্ষেপ নিলে এবং সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করলে বড় বিপদ এড়ানো সম্ভব।
ঠিকানা: পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।
ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬.