শিশুর জ্বর হলে করণীয়: কারণ, লক্ষণ ও সঠিক যত্নের উপায়

শিশুর জ্বর অভিভাবকদের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে। সাধারণত, জ্বর নিজেই একটি রোগ নয়, বরং শরীরে সংক্রমণ বা অন্য কোনো অসুস্থতার লক্ষণ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি গুরুতর কিছু নয়, তবে কখনও কখনও এটি মারাত্মক সংক্রমণের ইঙ্গিত দিতে পারে। তাই শিশুর জ্বর হলে কী করতে হবে, কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং কীভাবে সঠিকভাবে যত্ন নিতে হবে, তা জানা জরুরি।

শিশুর জ্বর কত হলে চিন্তার কারণ?

শিশুর শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৭°F থেকে ৯৯°F (৩৬.১°C – ৩৭.২°C) এর মধ্যে থাকে। জ্বর সাধারণত তখনই ধরা হয় যখন তাপমাত্রা নিম্নলিখিত মাত্রা অতিক্রম করে—

  • মলদ্বারের (Rectal) মাপ অনুযায়ী: ১০০.৪°F (৩৮°C) বা এর বেশি
  • কান (Ear) বা কানের থার্মোমিটার অনুযায়ী: ১০০.৪°F (৩৮°C) বা এর বেশি
  • মুখ (Oral) অনুযায়ী: ৯৯.৫°F (৩৭.৫°C) বা এর বেশি
  • বগল (Armpit) অনুযায়ী: ৯৯°F (৩৭.২°C) বা এর বেশি

    raju akon youtube channel subscribtion

⚠️ কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?
৩ মাসের কম বয়সী শিশু: ১০০.৪°F (৩৮°C) বা তার বেশি হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৩-৬ মাস বয়সী শিশু: ১০১°F (৩৮.৩°C) বা তার বেশি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৬ মাসের বেশি বয়সী শিশু: ১০২°F (৩৮.৯°C) বা তার বেশি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
যদি জ্বরের সাথে খিঁচুনি, শ্বাসকষ্ট, তীব্র দুর্বলতা, বা খাওয়া-দাওয়ায় অনীহা দেখা দেয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যান।

শিশুর জ্বরের সাধারণ কারণ

শিশুর জ্বরের পিছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে, যেমন—

ভাইরাস সংক্রমণ (Viral Infection):

  • সাধারণ ঠান্ডা, ফ্লু, বা ভাইরাল জ্বরের কারণে হতে পারে।
  • সাধারণত ৩-৫ দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়।

ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ (Bacterial Infection):

  • কানে ইনফেকশন, গলা ব্যথা, নিউমোনিয়া, বা মূত্রনালী সংক্রমণের (UTI) কারণে হতে পারে।
  • এন্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হতে পারে।

টিকা নেওয়ার পর জ্বর:

  • শিশুর টিকা নেওয়ার পর সামান্য জ্বর হওয়া স্বাভাবিক।
  • এটি সাধারণত ২৪-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কমে যায়।

দাঁত ওঠার কারণে জ্বর:

  • দাঁত ওঠার সময় কিছু শিশু সামান্য জ্বরে আক্রান্ত হতে পারে।
  • তবে এটি সাধারণত ১০০°F (৩৭.৮°C)-এর বেশি হয় না।

অতিরিক্ত গরম বা পানিশূন্যতা:

  • শিশু যদি অতিরিক্ত গরম পরিবেশে থাকে বা শরীরে পানির অভাব হয়, তবে জ্বর আসতে পারে।

শিশুর জ্বর হলে করণীয়

১. শিশুর শরীরের তাপমাত্রা মাপুন

  • ডিজিটাল থার্মোমিটার ব্যবহার করে জ্বর পরিমাপ করুন।
  • মলদ্বার (Rectal) বা কানের থার্মোমিটার ৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য।

২. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিশ্চিত করুন

  • শিশুকে আরামদায়ক ও ঠাণ্ডা পরিবেশে রাখুন।
  • অতিরিক্ত কাপড় বা কম্বল না দিয়ে হালকা পোশাক পরান।

৩. বেশি করে তরল খাবার দিন

  • মায়ের দুধ বা ফর্মুলা দুধ (৬ মাসের কম বয়সী শিশুদের জন্য)।
  • পানি, ফলের রস, স্যুপ, ও ডাবের পানি (৬ মাসের বেশি বয়সী শিশুদের জন্য)।

৪. শরীর মুছে দিন (Sponging)

  • কুসুম গরম পানি দিয়ে শিশুর শরীর মুছে দিন।
  • বরফ বা অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি ব্যবহার করবেন না, এটি শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে।

৫. জ্বরের ওষুধ দিন (চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী)

  • প্যারাসিটামল (Paracetamol): শিশুর ওজন অনুযায়ী ডোজ দিন।
  • আইবুপ্রোফেন (Ibuprofen): ৬ মাসের বেশি বয়সী শিশুদের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • অ্যাসপিরিন এড়িয়ে চলুন: এটি শিশুদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

৬. শিশুকে হালকা খাবার দিন

  • তরল ও সহজপাচ্য খাবার দিন, যেমন—খিচুড়ি, স্যুপ, ডাল-ভাত।
  • যদি শিশুর ক্ষুধামন্দা হয়, তবে জোর করে খাওয়ানোর দরকার নেই।

জ্বর হলে কী করবেন না?

❌ শিশুকে অতিরিক্ত গরম কাপড় পরাবেন না।
❌ বরফ বা অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি ব্যবহার করবেন না।
❌ শিশুকে এন্টিবায়োটিক না দিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
❌ শিশুকে জোর করে খাবার খাওয়াবেন না।

জ্বর প্রতিরোধের উপায়

✅ শিশুকে নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন।
✅ সংক্রমণ এড়াতে হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
✅ শিশুর টিকা সময়মতো দিন।
✅ শিশুকে পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার ও বিশুদ্ধ পানি দিন।

উপসংহার

শিশুর জ্বর সাধারণত স্বল্পমেয়াদী এবং নিজে থেকেই ভালো হয়ে যায়। তবে যদি জ্বর বেশি দিন স্থায়ী হয় বা গুরুতর লক্ষণ দেখা দেয়, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। শিশুর যত্ন নেওয়ার সময় সচেতনতা ও ধৈর্য্য জরুরি।

আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে, তাহলে কমেন্টে জানান!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top