৬ মাসের শিশুর পাতলা পায়খানা হলে করণীয়: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

শিশুর স্বাস্থ্যের প্রতি মা-বাবার সবচেয়ে বেশি যত্নবান হওয়া দরকার, বিশেষ করে যখন শিশুর বয়স ৬ মাস। এই সময়ে শিশুর দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে, তাই পেটের সমস্যা বা পাতলা পায়খানা হলে তা গুরুত্বের সাথে দেখা উচিত। অনেক মা-বাবা চিন্তিত হয়ে পড়েন যখন শিশুর বারবার পাতলা পায়খানা হয়। তবে আতঙ্কিত না হয়ে প্রথমে এর কারণ বুঝতে হবে এবং সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে।

এই ব্লগে আমরা জানবো ৬ মাসের শিশুর পাতলা পায়খানা হওয়ার কারণ, লক্ষণ, ঘরোয়া চিকিৎসা ও কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া দরকার

৬ মাসের শিশুর পাতলা পায়খানা কেন হয়?

৬ মাস বয়সী শিশুর পাতলা পায়খানার পেছনে বেশ কিছু কারণ থাকতে পারে। এর মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ কারণগুলো হলো:

১. নতুন খাবারের সাথে মানিয়ে নিতে সময় লাগা

৬ মাস থেকে শিশু বুকের দুধের পাশাপাশি সলিড খাবার (Complementary Food) খেতে শুরু করে। নতুন খাবারের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সময় লাগতে পারে, ফলে পেটের সমস্যা হতে পারে।

২. ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ

  • রোটা ভাইরাস: শিশুদের মধ্যে সাধারণ একটি সংক্রমণ, যা ডায়রিয়ার অন্যতম প্রধান কারণ।
  • ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন: দূষিত খাবার বা পানি থেকে শিশুর অন্ত্রে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হতে পারে।

    raju akon youtube channel subscribtion

৩. বুকের দুধ বা ফর্মুলা দুধের সমস্যা

যদি মা এমন কোনো খাবার খান যা শিশুর হজমের জন্য উপযুক্ত নয়, তাহলে বুকের দুধের মাধ্যমে শিশুর পেটের সমস্যা হতে পারে। একইভাবে, কিছু শিশুর নির্দিষ্ট ফর্মুলা দুধ হজম করতে সমস্যা হয়।

৪. দাঁত ওঠার সময় হওয়া ডায়রিয়া

শিশুর দাঁত উঠতে শুরু করলে অনেক সময় মুখে বেশি লালা তৈরি হয় এবং তারা বিভিন্ন বস্তু মুখে দেয়। এর ফলে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হতে পারে, যা পাতলা পায়খানার কারণ হতে পারে।

৫. খাবারে অ্যালার্জি বা ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স

কিছু শিশু দুধ বা নির্দিষ্ট খাবারের প্রতি সংবেদনশীল হতে পারে, যা ডায়রিয়ার কারণ হতে পারে।

৬. হজমের সমস্যা বা অতিরিক্ত পানি খাওয়া

অনেক সময় শিশুকে অতিরিক্ত পানি খাওয়ানো হলেও হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে, যা পাতলা পায়খানার কারণ হতে পারে।

পাতলা পায়খানার লক্ষণ ও সতর্কতা

সব শিশুর শরীরের প্রতিক্রিয়া একরকম হয় না। তবে কিছু লক্ষণ আছে যা বিপজ্জনক হতে পারে।

স্বাভাবিক লক্ষণ:

✔ দিনে ২-৩ বার পাতলা পায়খানা হওয়া
✔ সামান্য কষ্ট হওয়া, তবে শিশু স্বাভাবিক থাকা
✔ ক্ষুধা বা দুধ খাওয়ার ইচ্ছা কমে যাওয়া

গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতামূলক লক্ষণ:

 দিনে ৫-৬ বার বা তার বেশি পানি মিশ্রিত পাতলা পায়খানা
 শিশুর শরীর পানিশূন্য (ডিহাইড্রেশন) হয়ে যাওয়া (মুখ শুকিয়ে যাওয়া, কান্নার সময় চোখে পানি না থাকা)
 শিশুর শরীর নিস্তেজ হয়ে যাওয়া বা অতিরিক্ত ঘুম ঘুম ভাব
 বমি বা জ্বর হওয়া
 মলের সঙ্গে রক্ত বা কটু গন্ধ থাকা

যদি উপরোক্ত কোনো লক্ষণ দেখা যায়, তবে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।

৬ মাসের শিশুর পাতলা পায়খানা হলে করণীয়

১. শিশুকে বেশি করে তরল খাবার দিন

শিশুর শরীরের পানির ভারসাম্য ঠিক রাখা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। পাতলা পায়খানার সময় শিশুকে বুকের দুধ বেশি করে খাওয়ানো উচিত।

২. ওআরএস (ORS) বা স্যালাইন খাওয়ানো

ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধে শিশুদের জন্য বিশেষ ওআরএস (ORS) বা ঘরোয়া স্যালাইন দেওয়া যেতে পারে। এটি শরীরের লবণ ও পানি শোষণের ক্ষমতা বাড়ায়।

৩. হালকা ও সহজপাচ্য খাবার দিন

  • মুড়ি ভেজানো পানি বা চালের ফ্যান – হজমে সহায়ক ও শক্তি বাড়ায়।
  • কলা ও আপেলের পিউরি – ডায়রিয়া কমাতে সাহায্য করে।
  • সেদ্ধ আলু বা গাজরের পেস্ট – পেটের সমস্যা কমায় ও শিশুকে শক্তি দেয়।

৪. দূষিত খাবার বা পানীয় এড়িয়ে চলুন

  • শিশুকে শুধুমাত্র ফুটানো ও বিশুদ্ধ পানি খাওয়ান।
  • বাইরে তৈরি ফর্মুলা দুধ খাওয়ালে তা একবারের বেশি গরম না করা ভালো।

৫. হাত পরিষ্কার রাখা ও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা

  • শিশুর খাবার তৈরি ও খাওয়ানোর আগে ভালোভাবে হাত ধুতে হবে।
  • শিশুর খেলনা বা ব্যবহারের জিনিস পরিষ্কার রাখতে হবে, যাতে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ না হয়।

৬. নতুন খাবার ধীরে ধীরে চালু করুন

  • একবারে অনেক নতুন খাবার দেওয়া উচিত নয়।
  • এক সপ্তাহে একটি নতুন খাবার দেওয়া এবং শিশুর প্রতিক্রিয়া দেখা উচিত।

কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া দরকার?

✔ যদি পাতলা পায়খানা ২৪-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কমে না আসে।
✔ শিশুর শরীরে পানিশূন্যতার লক্ষণ দেখা দিলে।
✔ বমি বা উচ্চ মাত্রার জ্বর থাকলে।
✔ মলের সঙ্গে রক্ত বা দুর্গন্ধযুক্ত মল হলে।

উপসংহার

৬ মাসের শিশুর পাতলা পায়খানা সাধারণত নতুন খাবারের সাথে মানিয়ে নেওয়ার সময় দেখা যায়। তবে যদি এটি দীর্ঘস্থায়ী হয় বা শিশুর শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। শিশুর শরীরের পানিশূন্যতা প্রতিরোধে বেশি পরিমাণে তরল খাবার দিতে হবে এবং খাবারের পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে হবে।

আপনার মতামত জানান

আপনার শিশুর যদি কখনও এই সমস্যাটি হয়ে থাকে, তাহলে আপনি কীভাবে সামলেছেন? কমেন্টে আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন। শিশুর যত্ন সংক্রান্ত আরও তথ্য পেতে আমাদের ব্লগ সাবস্ক্রাইব করুন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top