শরীর দুর্বল হয়ে গেলে সঠিক পুষ্টি সরবরাহ করা এবং দ্রুত শক্তি পুনরুদ্ধারের জন্য স্যালাইন খাওয়া একটি কার্যকর উপায়। সাধারণত ডায়রিয়া, অতিরিক্ত ঘাম, ডিহাইড্রেশন বা বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতায় শরীরের পানি ও লবণের ঘাটতি পূরণ করতে স্যালাইন ব্যবহার করা হয়। তবে সব ধরনের দুর্বলতার ক্ষেত্রে স্যালাইন সেবনের পদ্ধতি ভিন্ন হতে পারে।
দুর্বলতার কারণ এবং স্যালাইন
শরীর দুর্বল হলে প্রথমে বুঝতে হবে তার কারণ কী। কখনো ডায়রিয়া বা বমির কারণে শরীরের পানি ও লবণের ঘাটতি হয়, কখনো হাইপারগ্লাইসেমিয়া বা অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে সঠিক ধরনের স্যালাইন সেবন শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কোন স্যালাইন সেবন করা উচিত?
- ওরস্যালাইন-এন (ORS)
শরীরের পানি ও লবণের ঘাটতি পূরণে ওরস্যালাইন-এন (ORS) সবচেয়ে কার্যকর। বিশেষ করে ডায়রিয়া বা বমি হলে শরীর থেকে যে লবণ ও পানি বেরিয়ে যায় তা দ্রুত পুনরুদ্ধার করতে ORS ব্যবহার করা হয়। এতে থাকে সঠিক পরিমাণ লবণ, গ্লুকোজ এবং অন্যান্য ইলেকট্রোলাইট, যা শরীরে শক্তি সরবরাহ করে। - গ্লুকোজ স্যালাইন
অতিরিক্ত দুর্বলতা বা হাইপোগ্লাইসেমিয়ার (রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যাওয়া) ক্ষেত্রে গ্লুকোজ স্যালাইন সেবন করা যেতে পারে। এতে গ্লুকোজ থাকে, যা দ্রুত শক্তি যোগায় এবং শরীরকে পুনরুদ্ধারে সহায়ক হয়। সাধারণত অতিরিক্ত পরিশ্রম বা অনাহারে থাকার কারণে এই স্যালাইন খাওয়া হয়। - মেডিক্যাল স্যালাইন (ইন্ট্রাভেনাস স্যালাইন)
গুরুতর অবস্থায়, যেমন ডিহাইড্রেশন, রক্তচাপ কমে যাওয়া বা শরীরে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য নষ্ট হলে, হাসপাতালের তত্ত্বাবধানে ইন্ট্রাভেনাস (IV) স্যালাইন দেওয়া হয়। এটি শিরার মাধ্যমে সরাসরি শরীরে প্রবেশ করিয়ে দ্রুত দুর্বলতা দূর করা হয়।
স্যালাইন খাওয়ার নিয়মাবলী
- ওরস্যালাইন সেবন পদ্ধতি
এক প্যাকেট ওরস্যালাইন-এন ১ লিটার বিশুদ্ধ পানিতে গুলে নিতে হবে। তারপর তা ছোট ছোট চুমুকে ধীরে ধীরে পান করতে হবে। এতে শরীরের লবণ ও পানি ধীরে ধীরে পূরণ হবে এবং দুর্বলতা দূর হবে। - গ্লুকোজ স্যালাইন খাওয়ার নিয়ম
গ্লুকোজ স্যালাইনও পানির সাথে গুলে খেতে হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নির্ধারিত ডোজ মেনে তা খাওয়া উচিত। হাইপোগ্লাইসেমিয়া বা অতিরিক্ত পরিশ্রমের পর এ স্যালাইন খেলে তা দ্রুত কার্যকর হয়।
স্যালাইন খাওয়ার সময় যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে
- অতিরিক্ত স্যালাইন সেবন করবেন না
স্যালাইন অতিরিক্ত পরিমাণে সেবন করলে তা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। অতিরিক্ত লবণ বা গ্লুকোজ শরীরের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, যেমন- রক্তচাপ বৃদ্ধি পাওয়া বা অতিরিক্ত শর্করার সমস্যা। - শিশুদের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা
শিশুদের ক্ষেত্রে স্যালাইন সেবন করার সময় বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে। শিশুদের জন্য নির্ধারিত ডোজ মেনে ORS বা অন্য কোনো স্যালাইন সেবন করানো উচিত।
শরীর দুর্বল হলে সঠিক স্যালাইন সেবন শরীরকে দ্রুত পুনরুদ্ধারে সহায়তা করে। তবে দুর্বলতার প্রকৃতি এবং কারণ বুঝে স্যালাইন সেবন করতে হবে। ওরস্যালাইন বা গ্লুকোজ স্যালাইন ঘরে সহজেই পাওয়া যায়, যা দ্রুত শক্তি এবং পানিশূন্যতা পূরণে কার্যকর। তবে, গুরুতর অবস্থায় অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে স্যালাইন সেবন করতে হবে।
