অনেক নারী বিভিন্ন কারণে মাসিকের অনিয়মিত চক্রে ভুগতে পারেন। এই ধরনের সমস্যার পেছনে হরমোনজনিত কারণ, স্ট্রেস, শরীরের ওজনের পরিবর্তন, স্বাস্থ্য সমস্যা বা জীবনের ধকল থাকতে পারে। অনেক সময় এই সমস্যাগুলোর সমাধান হিসেবে কিছু নির্দিষ্ট পিল বা ওষুধ নেওয়া হয় যা হরমোনকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং মাসিক চক্র নিয়মিত করতে সাহায্য করে। এই ব্লগে আমরা আলোচনা করব কোন পিল খেলে মাসিক হয় এবং এ সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক।
মাসিক নিয়মিত করার জন্য ব্যবহৃত পিল:
১. মেড্রোক্সিপ্রজেস্টেরন (Medroxyprogesterone): এই পিলটি প্রজেস্টেরনের অনুরূপ একটি হরমোন যা প্রোজেস্টিন নামে পরিচিত। এটি মাসিক নিয়মিত করতে ব্যবহৃত হয়। নারীদের অনিয়মিত মাসিক চক্র থাকলে চিকিৎসকরা অনেক সময় এই পিলটি সেবন করার পরামর্শ দেন। সাধারণত, এটি ৫ থেকে ১০ দিনের কোর্স হিসেবে দেওয়া হয়।
২. নরেথিস্টেরন (Norethisterone): এটি প্রোজেস্টিন হরমোনযুক্ত একটি পিল, যা মাসিকের তারিখ পরিবর্তন বা মাসিক শুরু করতে সাহায্য করে। এই পিলটি মাসিক নিয়মিত করতে বা বিশেষ দিনে মাসিক বন্ধ রাখার জন্য ব্যবহৃত হয়। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এই পিল ব্যবহার করা উচিত নয়।
৩. কম্বাইন্ড কন্ট্রাসেপ্টিভ পিল (Combined Contraceptive Pill): এই পিলগুলোতে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোন থাকে, যা মাসিক চক্র নিয়মিত করতে ব্যবহৃত হয়। নারীরা যারা দীর্ঘমেয়াদি অনিয়মিত মাসিক চক্রের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের চিকিৎসক এই ধরনের পিল ব্যবহারের পরামর্শ দিতে পারেন।
৪. ইমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপ্টিভ পিল (Emergency Contraceptive Pill): সাধারণত এই পিলগুলো গর্ভধারণ এড়াতে ব্যবহৃত হয়, তবে কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে মাসিক শুরু করতে সাহায্য করে। এই পিল ব্যবহারের সময় শরীরে প্রচুর মাত্রায় হরমোন সরবরাহ করা হয়, যা মাসিকের তারিখ পরিবর্তন বা মাসিক দ্রুত শুরু করতে সহায়ক হতে পারে। তবে এই ধরনের পিল একেবারে অপ্রয়োজনীয় হলে ব্যবহার করা উচিত নয়।
মাসিক শুরু হওয়ার জন্য পিল ব্যবহারের আগে যেসব বিষয় মনে রাখতে হবে:
- ডাক্তারি পরামর্শ:
মাসিক শুরু করতে বা মাসিক নিয়মিত করতে যে কোনো ধরনের হরমোন পিল ব্যবহারের আগে অবশ্যই একজন গাইনোকোলজিস্ট বা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। স্বেচ্ছায় ওষুধ ব্যবহার করলে শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে। - পিলের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:
হরমোন পিলগুলো ব্যবহারের ফলে মাথাব্যথা, মেজাজ খিটখিটে হওয়া, বমিভাব, ওজন বৃদ্ধি, স্তনব্যথা ইত্যাদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তাই পিল ব্যবহারের আগে এগুলো সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া জরুরি। - স্বাস্থ্য পরীক্ষা:
মাসিকের সমস্যা দীর্ঘমেয়াদি হলে এবং বারবার হরমোন পিল ব্যবহারের প্রয়োজন হলে শরীরের পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষা করা উচিত। মাসিকের অনিয়মিত চক্রের পিছনে অন্য কোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যা আছে কি না তা নির্ধারণ করা জরুরি।
মাসিক নিয়মিত রাখার ঘরোয়া উপায়:
১. পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ:
শরীরের হরমোন ব্যালান্স ঠিক রাখতে নিয়মিত স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। পর্যাপ্ত প্রোটিন, ভিটামিন, এবং মিনারেলসমৃদ্ধ খাবার খেলে মাসিক নিয়মিত থাকে।
২. শরীরচর্চা:
নিয়মিত শরীরচর্চা, যোগব্যায়াম বা হালকা ব্যায়াম করলে শরীরের হরমোন নিয়ন্ত্রিত হয় এবং মাসিকের সময় ঠিক থাকে। বেশি ওজন বা অত্যধিক চিকনতা মাসিকের তারিখে প্রভাব ফেলতে পারে।
৩. স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ:
মানসিক চাপ বা উদ্বেগ মাসিক চক্রকে ব্যাহত করতে পারে। তাই মানসিক চাপ কমাতে মেডিটেশন, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম এবং পর্যাপ্ত ঘুমের অভ্যাস গড়ে তুলুন।
অনিয়মিত মাসিক সমস্যায় ভুগলে হরমোন পিল প্রয়োগের মাধ্যমে মাসিক নিয়মিত করা যায়। তবে যে কোনো ওষুধ সেবনের আগে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হরমোন পিল ছাড়াও স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা এবং পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস মাসিকের তারিখ ঠিক রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
📌 ঠিকানা:
পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।