অনেকেই মনে করেন, দীর্ঘদিন ধরে পাইলস (হেমোরয়েড) থাকলে তা ক্যান্সারে রূপ নিতে পারে। কিন্তু সত্যি কি পাইলস থেকে ক্যান্সার হয়? নাকি এটি শুধুই একটি ভুল ধারণা?
পাইলস একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা, যেখানে মলদ্বারের শিরাগুলো ফুলে যায় এবং অনেক সময় রক্তপাত হতে পারে। অন্যদিকে, কোলন বা রেকটাল ক্যান্সার হলো মলদ্বার বা বৃহদান্ত্রের ক্যান্সারজনিত সমস্যা। এই দুটি অবস্থার মধ্যে পার্থক্য বোঝা এবং বাস্তবসম্মত তথ্য জানা অত্যন্ত জরুরি।
এই ব্লগে আমরা পাইলস ও ক্যান্সারের সম্পর্ক, তাদের লক্ষণ, ঝুঁকি এবং করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
পাইলস ও ক্যান্সার: পার্থক্য বোঝা জরুরি
পাইলস কী?
পাইলস বা হেমোরয়েড হলো মলদ্বারের ভেতরের বা বাইরের রক্তনালী ফুলে যাওয়া, যা ব্যথা, অস্বস্তি এবং কখনও কখনও রক্তপাত সৃষ্টি করতে পারে। এটি সাধারণত দীর্ঘ সময় ধরে কোষ্ঠকাঠিন্য, অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ বা গর্ভাবস্থার কারণে হতে পারে।
কোলোরেক্টাল ক্যান্সার কী?
কোলোরেক্টাল ক্যান্সার মূলত বৃহদান্ত্র (কোলন) বা মলদ্বারে (রেকটাল) অস্বাভাবিক কোষ বৃদ্ধি হওয়ার ফলে হয়, যা ধীরে ধীরে ক্যান্সারে রূপ নিতে পারে। এটি পাইলসের মতো লক্ষণ সৃষ্টি করলেও এটি সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি রোগ।
পাইলস থেকে কি সত্যিই ক্যান্সার হতে পারে?
না, পাইলস থেকে সরাসরি ক্যান্সার হয় না।
তবে, কিছু ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি রক্তপাত বা মলদ্বারে পরিবর্তন হলে তা ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে। পাইলস ও ক্যান্সারের কিছু লক্ষণ একই রকম হওয়ায় অনেকেই বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন।
গবেষণার তথ্য:
✔ আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির মতে, পাইলস কখনও ক্যান্সারের কারণ হয় না।
✔ তবে, দীর্ঘমেয়াদি মলদ্বার সংক্রান্ত সমস্যা অবহেলা করলে ভবিষ্যতে ক্যান্সারের ঝুঁকি কিছুটা বেড়ে যেতে পারে।
পাইলস ও ক্যান্সারের মধ্যে পার্থক্য
| বিষয় | পাইলস | ক্যান্সার |
| মূল কারণ | রক্তনালীর ফুলে যাওয়া | কোষের অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি |
| রক্তপাতের ধরন | সাধারণত টাটকা লাল রক্ত | গাঢ় লাল বা কালচে রক্ত |
| ব্যথা | সাধারণত ব্যথাযুক্ত (বিশেষ করে বাহ্যিক পাইলস) | অনেক সময় ব্যথাহীন |
| মলের রঙ | সাধারণত স্বাভাবিক | মলে রক্ত মিশ্রিত হতে পারে |
| ওজন কমে যাওয়া | সাধারণত হয় না | অনিয়ন্ত্রিত ওজন হ্রাস হতে পারে |
| শারীরিক দুর্বলতা | সাধারণত হয় না | ক্লান্তি ও অবসাদ দেখা দিতে পারে |
| গুরুতর জটিলতা | এনাল ফিশার বা থ্রম্বোসিস হতে পারে | জীবনঘাতী হতে পারে |
কখন চিন্তিত হওয়া প্রয়োজন?
যদি নিচের কোনো লক্ষণ দেখা দেয়, তবে এটি সাধারণ পাইলস নাও হতে পারে এবং দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত:
✔ দীর্ঘদিন ধরে রক্তপাত হচ্ছে
✔ মলে গাঢ় বা কালো রক্ত দেখা যাচ্ছে
✔ অস্বাভাবিক ওজন হ্রাস
✔ দীর্ঘমেয়াদি কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া
✔ মলত্যাগের পরও অসম্পূর্ণ অনুভূতি
✔ তলপেটে বা মলদ্বারে স্থায়ী ব্যথা
এ ধরনের লক্ষণ কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের ইঙ্গিত দিতে পারে, তাই অবহেলা না করে দ্রুত পরীক্ষা করা উচিত।
পাইলস ও ক্যান্সার প্রতিরোধে করণীয়
পাইলস প্রতিরোধে করণীয়:
✔ কোষ্ঠকাঠিন্য এড়ান: প্রচুর ফাইবারযুক্ত খাবার খান (যেমন শাকসবজি, ফল, চিয়া সিড, ওটস)।
✔ পর্যাপ্ত পানি পান করুন: প্রতিদিন কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন।
✔ দীর্ঘ সময় বসে থাকা এড়ান: যারা দীর্ঘ সময় বসে কাজ করেন, তাদের প্রতি ঘন্টায় একবার উঠে হাঁটা উচিত।
✔ শক্তিশালী ল্যাক্সেটিভ (মল নরমকারী) এড়িয়ে চলুন: চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিয়মিত ল্যাক্সেটিভ গ্রহণ করবেন না।
ক্যান্সার প্রতিরোধে করণীয়:
✔ সুস্থ খাদ্যাভ্যাস: প্রক্রিয়াজাত খাবার কমিয়ে তাজা ফল ও সবজি খান।
✔ ধূমপান ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন: এটি কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
✔ নিয়মিত কোলনস্কোপি করান: ৫০ বছরের বেশি বয়স হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কোলনস্কোপি পরীক্ষা করান।
✔ নিয়মিত ব্যায়াম করুন: প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট শরীরচর্চা করলে হজমপ্রক্রিয়া ভালো থাকে।
উপসংহার
পাইলস থেকে সরাসরি ক্যান্সার হয় না, তবে কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের কিছু লক্ষণ পাইলসের মতো হওয়ায় অনেকেই বিভ্রান্ত হন। যদি মলদ্বারের রক্তপাত দীর্ঘস্থায়ী হয়, ওজন কমে যায় বা দীর্ঘমেয়াদী বদহজম থাকে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
সুস্থ জীবনধারা অনুসরণ করলে পাইলস ও কোলোরেক্টাল ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব।
