ইস্ট্রোজেন হরমোন বেড়ে গেলে কি হয়: লক্ষণ, কারণ এবং প্রতিকার

ইস্ট্রোজেন হরমোন মহিলাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ হরমোন, যা প্রজনন, মাসিক চক্র নিয়ন্ত্রণ, এবং অন্যান্য শারীরিক কার্যক্রমের সাথে সংযুক্ত। তবে ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে গেলে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই অবস্থাকে বলে ইস্ট্রোজেন ডমিনেন্স (Estrogen Dominance)। আজকের এই ব্লগে আমরা জানবো ইস্ট্রোজেন হরমোন বেড়ে গেলে কি হয়, এর লক্ষণ, কারণ, এবং প্রতিকার কীভাবে করা যায়।

ইস্ট্রোজেন হরমোন বেড়ে গেলে লক্ষণ:

ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বেশি হলে কিছু সাধারণ লক্ষণ দেখা যায়। এগুলো হলো:

  1. ওজন বৃদ্ধি: ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বেড়ে গেলে ওজন বৃদ্ধি হতে পারে, বিশেষ করে কোমরের আশেপাশে চর্বি জমে। এটি শরীরের মেটাবলিজমকে প্রভাবিত করে, ফলে ওজন দ্রুত বাড়ে।
  2. মাসিক চক্রের অনিয়ম: ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বাড়লে মাসিক চক্র অনিয়মিত হতে পারে। কিছু মহিলার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত রক্তপাত বা খুব হালকা মাসিক হতে পারে।
  3. মেজাজের পরিবর্তন: ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বেড়ে গেলে মেজাজে পরিবর্তন দেখা যায়, যেমন অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, হতাশা, বা বিরক্তি। এটি শরীরের সেরোটোনিন (সুখের হরমোন) উৎপাদনে প্রভাব ফেলে, যা মেজাজে ওঠানামার কারণ হতে পারে।
  4. স্তনের ব্যথা ও ফোলা: ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বেশি হলে স্তনের টিস্যু ফুলে যায় এবং স্তনে ব্যথা বা অস্বস্তি হতে পারে। এটি সাধারণত মাসিক চক্রের আগে দেখা যায়, তবে ইস্ট্রোজেন ডমিনেন্স থাকলে এটি নিয়মিত হতে পারে।
  5. চুল পড়া: ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বেড়ে গেলে চুল পাতলা হতে পারে এবং চুল পড়ার প্রবণতা দেখা দেয়। হরমোনের ভারসাম্যহীনতা চুলের ফলিকলে প্রভাব ফেলে, যার ফলে চুলের স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
  6. অতিরিক্ত ক্লান্তি: শরীরে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বেশি হলে অনেকেই ক্লান্তি বা দুর্বলতা অনুভব করেন। ইস্ট্রোজেন মস্তিষ্কের ওপর প্রভাব ফেলে, যা শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তির কারণ হতে পারে।
  7. ঘুমের সমস্যা: ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বেশি হলে ঘুমের সমস্যা হতে পারে। এটি মস্তিষ্কের মেলাটোনিন হরমোনের (যা ঘুমের জন্য দায়ী) উপর প্রভাব ফেলে, ফলে রাতে ভালো ঘুম হয় না।
  8. পেট ফাঁপা ও বদহজম: ইস্ট্রোজেন বেড়ে গেলে পেটে ফাঁপা, গ্যাস বা বদহজমের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। এটি হজম প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয়, ফলে এ ধরনের সমস্যা তৈরি হয়।

raju akon youtube channel subscribtion

ইস্ট্রোজেন হরমোন বেড়ে যাওয়ার কারণ:

ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বাড়ার পেছনে কিছু নির্দিষ্ট কারণ থাকতে পারে। কিছু সাধারণ কারণ হলো:

  1. হরমোনাল কন্ট্রাসেপটিভস: জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল বা হরমোনাল কন্ট্রাসেপটিভ ব্যবহার করলে শরীরে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। এগুলো সরাসরি শরীরের হরমোনের ভারসাম্য পরিবর্তন করে।
  2. স্ট্রেস: দীর্ঘমেয়াদী মানসিক চাপ শরীরের হরমোন ভারসাম্যহীনতা তৈরি করতে পারে। স্ট্রেস কর্টিসল হরমোনের মাত্রা বাড়ায়, যা ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলে।
  3. অতিরিক্ত ওজন: শরীরে অতিরিক্ত চর্বি থাকলে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বেড়ে যায়, কারণ চর্বি কোষগুলি ইস্ট্রোজেন উৎপাদনে সহায়ক। তাই ওজন বেশি হলে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বাড়ার ঝুঁকি থাকে।
  4. যকৃতের সমস্যা: যকৃত শরীর থেকে অতিরিক্ত ইস্ট্রোজেন নির্গত করতে সাহায্য করে। কিন্তু যকৃতের কার্যকারিতা যদি কমে যায়, তবে শরীরে ইস্ট্রোজেন জমা হতে শুরু করে।
  5. ডায়েট: ইস্ট্রোজেন সমৃদ্ধ খাদ্য, যেমন সয়া, দুগ্ধজাত পণ্য, এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার বেশি খেলে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। এছাড়াও, ফাইবারের অভাব এবং বেশি মাত্রায় চিনি খাওয়াও এর কারণ হতে পারে।

ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের উপায়:

ইস্ট্রোজেন হরমোন নিয়ন্ত্রণে রাখতে কিছু সাধারণ প্রতিকার অবলম্বন করা যেতে পারে। এগুলো হলো:

  1. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: ইস্ট্রোজেন নিয়ন্ত্রণের জন্য পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা জরুরি। ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার যেমন ফল, সবজি, শস্য এবং প্রোটিনসমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। প্রক্রিয়াজাত এবং চিনি সমৃদ্ধ খাবার কম খাওয়ার চেষ্টা করুন।
  2. ওজন নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত ওজন ইস্ট্রোজেন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে, তাই নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম এবং সুষম খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা গুরুত্বপূর্ণ।
  3. স্ট্রেস কমানো: স্ট্রেস ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বাড়াতে পারে, তাই নিয়মিত মেডিটেশন, যোগব্যায়াম বা অন্য কোনো রিলাক্সেশন টেকনিক অবলম্বন করুন। এতে হরমোনের ভারসাম্য বজায় থাকবে।
  4. প্রাকৃতিক সাপ্লিমেন্ট: কিছু প্রাকৃতিক সাপ্লিমেন্ট ইস্ট্রোজেনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে, যেমন ম্যাক্কা রুট, ডিম, ফ্ল্যাক্সসিড, ইত্যাদি। তবে এগুলো গ্রহণের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
  5. চিকিৎসকের পরামর্শ: যদি ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বেশি হওয়ার লক্ষণ দেখা দেয়, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। চিকিৎসক হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে ওষুধ বা হরমোন থেরাপি পরামর্শ দিতে পারেন।

উপসংহার:

ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা বেড়ে গেলে শরীরের বিভিন্ন অস্বস্তিকর লক্ষণ দেখা দিতে পারে, যা স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, এবং জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে এই হরমোন নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। তবে দীর্ঘমেয়াদী সমস্যার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নেয়া জরুরি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top