গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত পানি পান করা মা ও শিশুর সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শরীরের প্রায় ৬০ শতাংশই পানি দিয়ে গঠিত, এবং গর্ভাবস্থায় এটি আরও বেশি প্রয়োজন হয়। কারণ, এই সময়ে শরীরে রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, এমনিয়োটিক ফ্লুইড (গর্ভের পানি) তৈরি হয়, এবং বাচ্চার বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত পুষ্টি সরবরাহ করতে হয়।
তবে অনেক গর্ভবতী নারী বিভিন্ন কারণে পর্যাপ্ত পানি পান করেন না, যা মা ও অনাগত শিশুর জন্য নানা রকম জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। এই ব্লগে আমরা গর্ভাবস্থায় পানি কম খেলে কী কী সমস্যা হতে পারে এবং কীভাবে তা প্রতিরোধ করা যায়, সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
গর্ভাবস্থায় পানি কম খেলে যে সমস্যাগুলো হতে পারে
গর্ভাবস্থায় শরীরের পানির ঘাটতি হলে নানা রকম শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে, যার মধ্যে কয়েকটি হলো:
১. ডিহাইড্রেশন (পানিশূন্যতা) ও তার প্রভাব
গর্ভবতী নারীদের শরীরে পর্যাপ্ত পানি না থাকলে ডিহাইড্রেশন (Dehydration) হতে পারে। এর ফলে—
- মাথা ঘোরা, দুর্বলতা ও ক্লান্তি অনুভূত হয়
- রক্তচাপ কমে যেতে পারে
- বারবার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দিতে পারে
- প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যেতে পারে, যা কিডনির সমস্যা তৈরি করতে পারে
২. এমনিয়োটিক ফ্লুইডের পরিমাণ কমে যাওয়া
গর্ভের শিশুকে রক্ষা করার জন্য এমনিয়োটিক ফ্লুইড খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পর্যাপ্ত পানি না পান করলে এই ফ্লুইডের পরিমাণ কমে যেতে পারে, যা শিশুর বৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
৩. গর্ভকালীন কোষ্ঠকাঠিন্য ও হেমোরয়েড (পাইলস)
গর্ভাবস্থায় অনেক নারীর হজম সমস্যা হয়, যা পানি কম খেলে আরও বেড়ে যেতে পারে।
- পর্যাপ্ত পানি না খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়
- দীর্ঘমেয়াদে এটি হেমোরয়েড (পাইলস) এর কারণ হতে পারে
৪. প্রসবকালীন জটিলতা ও অকাল প্রসবের ঝুঁকি
গর্ভাবস্থায় পানি কম খেলে জরায়ু সংকোচনের (contraction) হার বেড়ে যায়, যা অকাল প্রসবের (Preterm Labor) সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
৫. রক্তচাপের ওঠানামা ও কিডনি সমস্যার ঝুঁকি
পর্যাপ্ত পানি না খেলে রক্তচাপের ওঠানামা হতে পারে এবং প্রস্রাবের মাধ্যমে টক্সিন বের না হলে কিডনির সমস্যা, ইউরিন ইনফেকশন (UTI) বা কিডনি স্টোন হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
গর্ভাবস্থায় পানি কম খাওয়া প্রতিরোধের উপায়
১. পর্যাপ্ত পানি পান করুন
- প্রতিদিন কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত
- অতিরিক্ত গরম আবহাওয়ায় বা বেশি ঘাম হলে আরও বেশি পানি পান করুন
২. পানীয়তে বৈচিত্র্য আনুন
যদি স্বাভাবিক পানি পান করতে কষ্ট হয়, তাহলে—
- লেবুর শরবত বা নারকেল পানি পান করতে পারেন
- পানিতে পুদিনা পাতা বা শসা যোগ করে ডিটক্স ওয়াটার তৈরি করতে পারেন
৩. পানির বোতল সঙ্গে রাখুন
- সারাদিন সঙ্গে একটি পানির বোতল রাখুন, যাতে নিয়মিত পানি পান করা যায়
- একবারে বেশি পানি না খেয়ে ছোট ছোট চুমুকে খান
৪. জলীয় খাবার খান
- তরমুজ, শসা, কমলা, আনারস, স্ট্রবেরি, দই, এবং স্যুপের মতো জলীয় খাবার খেলে শরীরে পানির ভারসাম্য রক্ষা হয়
৫. কফি বা ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় কম পান করুন
- অতিরিক্ত ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় (যেমন চা, কফি, সফট ড্রিঙ্ক) পান করলে শরীরে পানির ঘাটতি হতে পারে
উপসংহার
গর্ভাবস্থায় পানি কম খেলে মা ও শিশুর জন্য নানা ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে, যেমন ডিহাইড্রেশন, কোষ্ঠকাঠিন্য, এমনিয়োটিক ফ্লুইডের পরিমাণ কমে যাওয়া, প্রসবকালীন জটিলতা ও কিডনি সমস্যার ঝুঁকি। তাই গর্ভবতী মায়েদের প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আপনি যদি গর্ভাবস্থায় পানির ঘাটতি অনুভব করেন বা ডিহাইড্রেশনের কোনো লক্ষণ দেখতে পান, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
আপনার গর্ভকালীন অভিজ্ঞতা আমাদের সঙ্গে শেয়ার করুন বা কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন।