গর্ভাবস্থায় না খেয়ে থাকলে কি হয়? মায়ের ও শিশুর জন্য ঝুঁকি ও করণীয়

গর্ভাবস্থায় মায়ের পুষ্টি শুধু তার নিজের জন্য নয়, অনাগত শিশুর সুস্থ বিকাশের জন্যও অপরিহার্য। কিন্তু অনেক গর্ভবতী মা বিভিন্ন কারণে অনিয়মিত খাবার খান বা দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকেন। এটি মা ও শিশুর উভয়ের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। এই ব্লগে আমরা বিশদভাবে আলোচনা করবো গর্ভাবস্থায় না খেয়ে থাকার ক্ষতিকর প্রভাব, সম্ভাব্য জটিলতা ও করণীয়।

গর্ভাবস্থায় না খেয়ে থাকার কারণসমূহ

অনেক গর্ভবতী নারী বিভিন্ন কারণে খাবার না খেয়ে থাকতে পারেন। কিছু সাধারণ কারণ হলো:

  1. মর্নিং সিকনেস (সকালবেলার বমিভাব ও অরুচি)
  2. অতিরিক্ত স্ট্রেস বা মানসিক চাপ
  3. গ্যাস্ট্রিক বা হজমজনিত সমস্যা
  4. খাবারের প্রতি অনীহা বা স্বাদের পরিবর্তন
  5. সঠিক খাদ্য পরিকল্পনার অভাব
  6. আর্থিক সমস্যা বা খাদ্যসংকট

এমন পরিস্থিতিতে কীভাবে মা ও শিশু সুস্থ থাকতে পারেন, তা জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

গর্ভাবস্থায় না খেয়ে থাকার ক্ষতিকর প্রভাব

১. শিশুর অপর্যাপ্ত বৃদ্ধি ও অপুষ্টি

গর্ভবতী মায়ের পর্যাপ্ত পুষ্টি না পেলে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে। পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাবে শিশুর ওজন কম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যা পরবর্তীকালে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে।

২. গর্ভপাত ও প্রিম্যাচিউর ডেলিভারির ঝুঁকি

গবেষণায় দেখা গেছে, গর্ভাবস্থায় দীর্ঘ সময় না খেলে গর্ভপাতের (miscarriage) ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাছাড়া, অপর্যাপ্ত পুষ্টি সময়ের আগে (preterm birth) প্রসবের কারণ হতে পারে।

৩. গ্লুকোজের ভারসাম্যহীনতা ও মাতৃস্বাস্থ্যের অবনতি

খাবার না খাওয়ার ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে যেতে পারে, যা মাথা ঘোরা, দুর্বলতা এবং অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে এটি ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ায়।

৪. মানসিক চাপ ও হতাশা

অনিয়মিত খাবার গ্রহণের ফলে মানসিক স্বাস্থ্যেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। গবেষণায় দেখা গেছে, অপুষ্টির কারণে গর্ভবতী মায়েদের মধ্যে উদ্বেগ (anxiety) এবং হতাশা (depression) বেশি দেখা যায়।

৫. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া

গর্ভাবস্থায় মায়ের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, তাই পুষ্টিকর খাবার খাওয়া জরুরি। দীর্ঘ সময় না খেলে শরীর সহজেই সংক্রমণের শিকার হতে পারে।

raju akon youtube channel subscribtion

গর্ভাবস্থায় সুস্থ থাকতে করণীয়

১. নির্দিষ্ট সময় পরপর পুষ্টিকর খাবার খান

প্রতি ২-৩ ঘণ্টা পরপর হালকা খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এতে গ্যাসের সমস্যা ও দুর্বলতা এড়ানো যায়।

২. পুষ্টিকর ও সহজপাচ্য খাবার গ্রহণ করুন

  • দুধ, ডিম, ফল, বাদাম, শাকসবজি ও প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খান।
  • অতিরিক্ত তেল-মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।

৩. পর্যাপ্ত পানি পান করুন

দেহের পানির ঘাটতি দূর করতে দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন।

৪. ছোট ছোট মিল খাওয়ার চেষ্টা করুন

অনেক সময় বড় মিল খেলে বমি বমি ভাব হতে পারে, তাই ছোট ছোট পরিমাণে খাবার খান।

৫. ডাক্তারের পরামর্শ নিন

যদি খাবার গ্রহণে সমস্যা হয়, তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন। প্রয়োজন হলে পুষ্টিবিদের কাছ থেকেও ডায়েট চার্ট তৈরি করে নিতে পারেন।

উপসংহার: সুস্থ মা, সুস্থ শিশু

গর্ভাবস্থায় মা যদি পর্যাপ্ত পুষ্টি গ্রহণ না করেন, তবে শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হতে পারে এবং মাতৃস্বাস্থ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই প্রতিদিন সুষম খাবার গ্রহণ করা, পর্যাপ্ত পানি পান করা এবং ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। সুস্থ মা-ই সুস্থ ও সুন্দর ভবিষ্যতের গড়ার প্রথম ধাপ!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top