গর্ভাবস্থার সময় একজন নারীর সঠিক পুষ্টি প্রয়োজন মা এবং গর্ভের সন্তানের সুস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে খাদ্যাভ্যাসে সচেতনতা অত্যাবশ্যক, কারণ সঠিক পুষ্টি গর্ভের শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সহায়ক। তবে কিছু খাবার আছে যা এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ সেগুলো মা এবং শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। আসুন জেনে নিই গর্ভাবস্থায় কী খাবার খাবেন এবং কী খাবার এড়িয়ে চলবেন।
গর্ভাবস্থায় খাওয়া উচিত এমন পুষ্টিকর খাবার:
১. ফল এবং সবজি
ফল এবং সবজি ভিটামিন, মিনারেল, ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের চমৎকার উৎস। এগুলো গর্ভবতী মায়ের ইমিউন সিস্টেমকে মজবুত করে এবং হজম শক্তি বাড়ায়।
- পুষ্টিকর ফল: আপেল, কমলা, কলা, পেয়ারা, পেঁপে, বেরি
- সবজি: পালং শাক, ব্রকলি, গাজর, শসা
২. ফোলেট সমৃদ্ধ খাবার
ফোলেট বা ভিটামিন বি৯ শিশুর মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে ফোলেট সমৃদ্ধ খাবার খেলে নিউরাল টিউব ডিফেক্টের ঝুঁকি কমায়।
- পালং শাক, ব্রকলি, ডাল, মটরশুঁটি, অ্যাভোকাডো
৩. প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার
প্রোটিন মা এবং শিশুর কোষগুলোর গঠন ও বিকাশে সহায়ক। পর্যাপ্ত প্রোটিন খেলে শিশুর পেশী, অঙ্গ এবং মস্তিষ্কের উন্নতি ঘটে।
- মুরগির মাংস, ডাল, মাছ, ডিম, দুধ
৪. ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার
ক্যালসিয়াম গর্ভের শিশুর হাড় ও দাঁতের গঠনে সহায়ক। ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হলে মায়ের হাড় দুর্বল হতে পারে।
- দুধ, চিজ, টক দই, ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ বাদাম
৫. আয়রন সমৃদ্ধ খাবার
আয়রন গর্ভাবস্থায় জরুরি, কারণ এটি রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়িয়ে তোলে, যা শিশুর অক্সিজেন সরবরাহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- লাল মাংস, পালং শাক, ব্রকলি, ডাল, বাদাম
৬. ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার
ওমেগা-৩ শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য সহায়ক। এটি শিশুর চোখের গঠনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- চর্বিযুক্ত মাছ (স্যামন, সার্ডিন), আখরোট, চিয়া সিড, ফ্ল্যাক্স সিড
৭. ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার
ফাইবার হজম শক্তি বাড়ায় এবং গর্ভাবস্থায় সাধারণ হজমজনিত সমস্যা যেমন কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সহায়ক।
- শস্যজাতীয় খাবার, ওটস, শাকসবজি, বাদাম
গর্ভাবস্থায় এড়িয়ে চলা উচিত এমন খাবার:
১. কাঁচা বা অপরিপক্ব মাছ ও মাংস
কাঁচা বা অপরিপক্ব মাছ ও মাংসে জীবাণু থাকতে পারে, যা গর্ভের শিশুর জন্য ক্ষতিকর। এছাড়া কাঁচা সামুদ্রিক মাছ খেলে পারদ (মার্কারি) সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে, যা শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
২. অতিরিক্ত ক্যাফেইন
অতিরিক্ত ক্যাফেইন খেলে গর্ভপাতের ঝুঁকি বেড়ে যায় এবং শিশুর কম ওজনের সম্ভাবনা থাকে। দিনে ২০০ মিলিগ্রামের বেশি ক্যাফেইন গ্রহণ করা উচিত নয়।
- কফি, চা, চকলেট, কোল্ড ড্রিংকস
৩. অ্যালকোহল
গর্ভাবস্থায় অ্যালকোহল একদম এড়িয়ে চলা উচিত। এটি শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে এবং জন্মগত ত্রুটি তৈরি করতে পারে।
৪. কাঁচা ডিম
কাঁচা ডিমে স্যালমোনেলা নামক ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে, যা গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুর জন্য ক্ষতিকারক। রান্না করে ডিম খাওয়া নিরাপদ।
৫. প্রসেসড এবং জাঙ্ক ফুড
প্রসেসড খাবার এবং জাঙ্ক ফুডে অতিরিক্ত চিনি, লবণ এবং অস্বাস্থ্যকর ফ্যাট থাকে, যা মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে।
৬. নরম চিজ
যেসব চিজ পাস্তুরাইজড হয়নি, সেগুলো গর্ভাবস্থায় এড়িয়ে চলা উচিত। এতে ক্ষতিকর জীবাণু থাকতে পারে, যা মা ও শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
৭. অতিরিক্ত চিনি ও লবণযুক্ত খাবার
অতিরিক্ত চিনি ও লবণ গর্ভাবস্থায় ওজন বৃদ্ধি এবং রক্তচাপের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, যা মায়ের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় কিছু স্বাস্থ্যকর টিপস:
- নিয়মিত ছোট খাবার খান, যাতে অতিরিক্ত ক্ষুধা না লাগে।
- প্রচুর পানি পান করুন, কারণ পানিশূন্যতা গর্ভাবস্থায় সমস্যা তৈরি করতে পারে।
- নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন।
- অতিরিক্ত প্রসেসড খাবার, জাঙ্ক ফুড ও মিষ্টিজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন।
উপসংহার
গর্ভাবস্থায় মা এবং শিশুর সুস্থতার জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পুষ্টিকর খাবার খেলে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সহায়ক ভূমিকা পালন করে এবং মা সুস্থ থাকে। তাই গর্ভাবস্থায় সঠিক খাবার নির্বাচন ও অস্বাস্থ্যকর খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।
ঠিকানা: পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।
ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬.