স্ক্যাবিস একটি সংক্রামক ত্বকের রোগ যা সারকপটিস স্ক্যাবেই (Sarcoptes scabiei) নামক একটি ক্ষুদ্র পরজীবী জীবাণুর কারণে হয়। এই রোগটি সাধারণত ত্বকে তীব্র চুলকানি এবং লালচে র্যাশ সৃষ্টি করে। এটি অত্যন্ত দ্রুত ছড়াতে পারে এবং সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে অন্যদের মধ্যে ছড়ানোর ঝুঁকি থাকে। চলুন, স্ক্যাবিস কেন হয় এবং কীভাবে এটি প্রতিরোধ ও নিরাময় করা যায় তা বিস্তারিতভাবে জেনে নিই।
স্ক্যাবিস কীভাবে হয়?
স্ক্যাবিস মূলত একটি পরজীবীজনিত রোগ, যা সারকপটিস স্ক্যাবেই মাইটের কারণে হয়। এই মাইট ত্বকের নিচে গর্ত খোঁড়ে এবং সেখানে ডিম পাড়ে। ফলে ত্বকে চুলকানি, জ্বালা এবং সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দেয়।
স্ক্যাবিসের কারণসমূহ:
১. সংক্রামিত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা:
- স্ক্যাবিস আক্রান্ত ব্যক্তির সরাসরি ত্বকের সংস্পর্শে এলে এই রোগ ছড়ায়।
২. পোশাক, বিছানা বা তোয়ালে শেয়ার করা:
- আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহার করা পোশাক, বিছানার চাদর বা তোয়ালে থেকে মাইট অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
৩. ভিড়পূর্ণ পরিবেশ:
- স্কুল, হোস্টেল বা শরণার্থী শিবিরের মতো জনাকীর্ণ পরিবেশে স্ক্যাবিস দ্রুত ছড়ায়।
স্ক্যাবিসের লক্ষণ
স্ক্যাবিসের প্রধান লক্ষণগুলো ত্বকে স্পষ্টভাবে দেখা যায়। এগুলো হলো:
- তীব্র চুলকানি:
- বিশেষত রাতে চুলকানি আরও বেড়ে যায়।
- লাল র্যাশ বা ছোট ফোস্কা:
- ত্বকে ছোট ছোট লালচে দাগ বা ফোস্কা দেখা যায়।
- ত্বকে সর্পিল গর্ত:
- মাইটের গর্ত খোঁড়ার ফলে ত্বকে সর্পিল রেখা দেখা যেতে পারে।
- প্রধান সংক্রমণস্থল:
- আঙুলের ফাঁক, কবজি, কোমর, কনুই, বগল, স্তনের চারপাশ এবং কোমর স্ক্যাবিসে বেশি আক্রান্ত হয়।
স্ক্যাবিস প্রতিরোধের উপায়
১. ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা:
- নিয়মিত হাত ধোয়া এবং পরিষ্কার পোশাক পরিধান স্ক্যাবিস প্রতিরোধে সহায়ক।
২. ব্যক্তিগত জিনিসপত্র শেয়ার না করা:
- তোয়ালে, বিছানার চাদর, বা পোশাক অন্যদের সঙ্গে ভাগাভাগি না করা।
৩. বাসস্থান পরিষ্কার রাখা:
- বিছানা, চাদর এবং কভার নিয়মিত গরম পানিতে ধুয়ে রোদে শুকাতে হবে।
৪. ভিড়পূর্ণ স্থান এড়ানো:
- স্ক্যাবিস আক্রান্ত ব্যক্তি থাকলে তার কাছাকাছি ভিড়পূর্ণ পরিবেশে না যাওয়া।
স্ক্যাবিসের চিকিৎসা
১. স্থানীয় চিকিৎসা:
- স্ক্যাবিস নিরাময়ের জন্য বিশেষ ধরনের ক্রিম বা লোশন প্রয়োগ করা হয়, যেমন:
- পারমেথ্রিন (Permethrin) ক্রিম।
- সালফার মলম।
- বেঞ্জাইল বেনজোয়েট (Benzyl Benzoate)।
ব্যবহারবিধি:
- চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পুরো শরীরে মলম লাগিয়ে নির্দিষ্ট সময় পর ধুয়ে ফেলুন।
২. মুখে খাওয়ার ওষুধ:
- কিছু ক্ষেত্রে আইভারমেকটিন (Ivermectin) নামক ওষুধ দেয়া হয়।
৩. চুলকানি উপশমের জন্য:
- অ্যান্টি-হিস্টামিন ওষুধ বা ক্যালামাইন লোশন ব্যবহারে চুলকানি কমানো যায়।
স্ক্যাবিসে করণীয় এবং বর্জনীয়
করণীয়:
- সংক্রমিত ব্যক্তিকে আলাদা রাখুন।
- তার ব্যবহার করা সমস্ত পোশাক, তোয়ালে এবং বিছানা গরম পানিতে ধুয়ে রোদে শুকান।
- চিকিৎসা সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন।
বর্জনীয়:
- চিকিৎসা ছাড়া ঘরোয়া পদ্ধতিতে সম্পূর্ণ নিরাময়ের চেষ্টা করবেন না।
- আক্রান্ত স্থান চুলকানো থেকে বিরত থাকুন, কারণ এটি সংক্রমণ আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
স্ক্যাবিস সম্পর্কে কিছু সাধারণ ভুল ধারণা
- স্ক্যাবিস অপরিষ্কার ব্যক্তিদের হয়:
- এটি সত্য নয়। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ব্যক্তি হলেও সরাসরি সংস্পর্শে এলে স্ক্যাবিস হতে পারে।
- স্ক্যাবিস খুব সহজে সেরে যায়:
- সঠিক চিকিৎসা ছাড়া স্ক্যাবিস সহজে নিরাময় হয় না এবং দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
উপসংহার: স্ক্যাবিস প্রতিরোধ ও সচেতনতার গুরুত্ব
স্ক্যাবিস একটি সাধারণ সংক্রামক রোগ হলেও এটি সম্পর্কে সচেতনতা এবং সঠিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। যদি কোনো লক্ষণ দেখা দেয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জীবনযাপন বজায় রাখুন।
আপনার জন্য প্রশ্ন: স্ক্যাবিস সম্পর্কে আপনার অভিজ্ঞতা বা কোনো প্রশ্ন থাকলে আমাদের জানাতে ভুলবেন না।