ঘুম ঘুম ভাব কিসের লক্ষণ? কারণ ও প্রতিকার

প্রতিদিনের ব্যস্ত জীবনে অনেকেই ঘুম ঘুম ভাব বা অতিরিক্ত ক্লান্তির সমস্যায় ভুগে থাকেন। এটি যদি মাঝে মাঝে হয়, তবে চিন্তার কিছু নেই, তবে যদি সারা দিন ঘুম ঘুম লাগে বা বারবার ঘুম পেলেও ক্লান্তি না কাটে, তাহলে এটি শরীরের কোনো সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।

এই ব্লগে আমরা জানবো ঘুম ঘুম ভাবের সম্ভাব্য কারণ, লক্ষণ এবং প্রতিকার

ঘুম ঘুম ভাবের প্রধান কারণসমূহ

১. ঘুমের অভাব (Sleep Deprivation)

প্রতিদিন ৭-৯ ঘণ্টা ঘুম না হলে মস্তিষ্ক ঠিকমতো বিশ্রাম পায় না।
✔ রাতে ঘুম কম হলে সারাদিন ঝিমুনি আসতে পারে।
✔ মোবাইল, ল্যাপটপের অতিরিক্ত ব্যবহার ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায়।

২. আয়রন বা হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি (রক্তস্বল্পতা / Anemia)

✔ শরীরে আয়রন কমে গেলে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছায় না।
✔ এতে দুর্বলতা, ক্লান্তি ও ঘুম ঘুম ভাব দেখা দেয়।
✔ এটি নারীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।

৩. থাইরয়েড হরমোনের সমস্যা (Hypothyroidism)

✔ থাইরয়েড হরমোন কমে গেলে শরীরের বিপাকক্রিয়া ধীর হয়ে যায়।
✔ এতে অলসতা, ক্লান্তি ও সারাদিন ঘুম ঘুম লাগে।

৪. ডায়াবেটিস বা ব্লাড সুগারের সমস্যা

✔ উচ্চ রক্তে শর্করা থাকলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে।
✔ রক্তে শর্করা কমে গেলেও (Hypoglycemia) অতিরিক্ত ঘুম ঘুম ভাব আসে।

৫. বিষণ্নতা (Depression) ও মানসিক চাপ

✔ মানসিক অবসাদ বা ডিপ্রেশন থাকলে সারাদিন ঘুম পেতে পারে।
✔ এটি ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় এবং দিনভর ক্লান্তির অনুভূতি দেয়।

৬. পানিশূন্যতা (Dehydration)

✔ শরীরে পর্যাপ্ত পানি না থাকলে রক্ত সঞ্চালন কমে যায়।
✔ এতে ব্রেন সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না এবং ঘুম ঘুম লাগে।

৭. স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজন (Obesity)

✔ অতিরিক্ত ওজনের কারণে ঘুমের ব্যাঘাত হয় এবং সারাদিন ঝিমুনি লাগে।
✔ স্থূল ব্যক্তিদের স্লিপ অ্যাপনিয়া (Sleep Apnea) হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

৮. স্লিপ অ্যাপনিয়া (Sleep Apnea)

✔ রাতে ঠিকমতো শ্বাস না নিতে পারার কারণে ঘন ঘন ঘুম ভেঙে যায়।
✔ এতে পর্যাপ্ত ঘুম হয় না, ফলে সারাদিন ক্লান্ত লাগে

৯. দীর্ঘস্থায়ী রোগ বা ওষুধের পার্শপ্রতিক্রিয়া

✔ উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি বা লিভারের সমস্যা থাকলে ঘুম ঘুম ভাব দেখা দিতে পারে।
✔ কিছু ওষুধ যেমন অ্যান্টিহিস্টামিন, ব্যথানাশক বা মানসিক রোগের ওষুধ অতিরিক্ত ঘুম তৈরি করে।

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন?

👉 যদি ঘুম ঘুম ভাবের সাথে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো থাকে, তবে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন:

❗ সারাদিন ঘুম পেলেও ঘুম না আসা বা পরিপূর্ণ বিশ্রাম না পাওয়া।
❗ কোনো কারণ ছাড়াই ক্লান্তি বা অলসতা অনুভব করা।
❗ মাথা ব্যথা, শরীর দুর্বল লাগা, স্মৃতিশক্তি হ্রাস পাওয়া।
❗ রাতের বেলায় শ্বাসকষ্ট হওয়া বা বারবার ঘুম ভেঙে যাওয়া।

ঘুম ঘুম ভাব কমানোর উপায়

১. ঘুমের সময় ঠিক করুন

✔ প্রতিদিন ৭-৯ ঘণ্টা ঘুমানো জরুরি
✔ রাতে ঠিকমতো না ঘুমালে দিনের বেলায় ঘুম ঘুম ভাব আসতে পারে।

২. পুষ্টিকর খাবার খান

✔ আয়রনযুক্ত খাবার (শাক-সবজি, ডাল, মাছ, মাংস) বেশি খান।
✔ বেশি চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন।

raju akon youtube channel subscribtion

৩. পর্যাপ্ত পানি পান করুন

✔ শরীর ডিহাইড্রেটেড হলে ক্লান্তি ও ঘুম ঘুম ভাব বাড়তে পারে
✔ দিনে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন

৪. ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন

✔ চা, কফি বা অ্যালকোহল বেশি খেলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে।
✔ রাতের বেলা চা বা কফি না খাওয়ার চেষ্টা করুন।

৫. নিয়মিত ব্যায়াম করুন

✔ প্রতিদিন ৩০-৪৫ মিনিট হাঁটাহাঁটি বা ব্যায়াম করুন
✔ এতে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় এবং অলসতা দূর হয়।

৬. মানসিক চাপ কমান

✔ মেডিটেশন বা যোগব্যায়াম করলে মানসিক প্রশান্তি আসে।
✔ বই পড়া, গান শোনা বা প্রিয় কাজে ব্যস্ত থাকুন।

৭. যদি ওষুধের পার্শপ্রতিক্রিয়া হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন

✔ কিছু ওষুধ (অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট, ব্যথানাশক, অ্যান্টিহিস্টামিন) ঘুম ঘুম ভাব সৃষ্টি করে।
✔ যদি ঘুম বেশি পেতে থাকে, তবে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে বিকল্প ওষুধ গ্রহণ করুন

উপসংহার

ঘুম ঘুম ভাব সাধারণত অপর্যাপ্ত ঘুম, আয়রনের ঘাটতি, মানসিক চাপ বা থাইরয়েড সমস্যার কারণে হয়ে থাকে। জীবনযাত্রার কিছু পরিবর্তন আনলে এই সমস্যা সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তবে যদি দীর্ঘদিন ঘুম ঘুম ভাব থাকে এবং এর সাথে শারীরিক দুর্বলতা, ওজন কমে যাওয়া বা ঘন ঘন শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ থাকে, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত

👉 আপনার যদি এই সমস্যা থাকে, তবে স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ, পর্যাপ্ত পানি পান ও সঠিক ঘুমের অভ্যাস তৈরি করুন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top