শরীর কাঁপা বা body shivering এমন একটি অবস্থা যেখানে শরীর অনিয়ন্ত্রিতভাবে কাঁপতে থাকে। এটি শারীরিক বা মানসিক কোনো সমস্যার কারণে হতে পারে এবং কখনো কখনো এটি গুরুতর রোগের লক্ষণ হতে পারে। বাংলাদেশে অনেকেই এই সমস্যাটিকে সাধারণ মনে করে উপেক্ষা করেন, কিন্তু সঠিকভাবে কারণ চিহ্নিত করে চিকিৎসা না করলে এটি বিপজ্জনক হতে পারে। আজকের এই লেখায় আমরা শরীর কাঁপার প্রধান কারণ, লক্ষণ এবং এর প্রতিকার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
শরীর কাঁপার কারণ (Causes of Body Shivering)
শরীর কাঁপার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। এর মধ্যে কিছু সাধারণ এবং কিছু গুরুতর কারণ রয়েছে:
১. শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সমস্যা (Hypothermia)
- যখন শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কমে যায়, তখন শরীর কাঁপা শুরু হয়।
- সাধারণত ঠান্ডা আবহাওয়ায় দীর্ঘ সময় কাটালে এটি হতে পারে।
২. জ্বর বা সংক্রমণ (Fever or Infection)
- জ্বরের সময় শরীর নিজে থেকে তাপমাত্রা বাড়ানোর জন্য কাঁপা সৃষ্টি করে।
- সাধারণত ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, টাইফয়েড, বা ভাইরাল ফ্লু-এর মতো সংক্রমণের ক্ষেত্রে এটি দেখা যায়।

৩. মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ (Stress and Anxiety)
- অতিরিক্ত মানসিক চাপ, আতঙ্ক, বা উদ্বেগ শরীরের স্নায়ুতন্ত্রকে উত্তেজিত করে এবং কাঁপার সৃষ্টি করতে পারে।
- এটি কখনো কখনো আতঙ্কিত আক্রমণের (Panic Attack) লক্ষণ হতে পারে।
৪. রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যাওয়া (Low Blood Sugar)
- ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ কমে গেলে শরীর কাঁপা শুরু হতে পারে।
- এটি সাধারণত খাবার দেরি করে খাওয়ার কারণে হয়।
৫. স্নায়ুতন্ত্রের রোগ (Neurological Disorders)
- পারকিনসনস ডিজিজ (Parkinson’s Disease), মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস (Multiple Sclerosis), বা অন্যান্য স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যার কারণে শরীর কাঁপা দেখা যেতে পারে।
৬. মাদকদ্রব্য বা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (Drug or Medication Side Effects)
- কিছু ওষুধ বা মাদকের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় শরীর কাঁপতে পারে।
- বিশেষ করে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট বা স্নায়ুবিক ওষুধে এই লক্ষণ দেখা যায়।
৭. ক্লান্তি বা শারীরিক দুর্বলতা (Fatigue or Weakness)
- অতিরিক্ত কাজ বা ঘুমের অভাব শরীরকে দুর্বল করে এবং অনিয়ন্ত্রিত কাঁপা সৃষ্টি করতে পারে।
৮. থাইরয়েডের সমস্যা (Thyroid Problems)
- হাইপারথাইরয়েডিজমের কারণে শরীরের বিপাকক্রিয়া বেড়ে যায়, যা কাঁপার কারণ হতে পারে।
শরীর কাঁপার সঙ্গে থাকা অন্যান্য লক্ষণ (Associated Symptoms)
শরীর কাঁপার পাশাপাশি কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে, যা সমস্যার কারণ নির্ণয়ে সহায়ক হতে পারে:
- উচ্চ জ্বর।
- দুর্বলতা এবং মাথা ঘোরা।
- ঘাম হওয়া।
- বুকে ধড়ফড় বা দ্রুত হৃদস্পন্দন।
- বমি বমি ভাব বা বমি।
- অনিয়ন্ত্রিত পেশি সংকোচন।
করণীয় (What to Do When Your Body Shivers)
১. শরীর গরম রাখুন:
- যদি ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে কাঁপা শুরু হয়, তবে তৎক্ষণাত গরম কাপড় পরুন এবং একটি উষ্ণ স্থানে যান।
- হালকা গরম পানীয় পান করুন।
২. চিকিৎসকের পরামর্শ নিন:
- যদি জ্বর বা অন্য কোনো অসুস্থতার কারণে কাঁপা হয়, তাহলে দ্রুত একজন চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
- ইনফেকশনের ক্ষেত্রে ওষুধ নির্ধারণে চিকিৎসকের পরামর্শ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৩. রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করুন:
- যদি আপনি ডায়াবেটিস রোগী হন, তবে রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করুন এবং চিকিৎসকের দেওয়া নির্দেশ অনুযায়ী খাবার বা ওষুধ গ্রহণ করুন।
৪. মানসিক চাপ কমান:
- যোগব্যায়াম, মেডিটেশন, এবং গভীর শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে মানসিক চাপ হ্রাস করুন।
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন এবং চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করুন।
৫. পর্যাপ্ত পুষ্টি গ্রহণ করুন:
- সুষম খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে শরীরকে শক্তিশালী রাখুন।
- পানি এবং ইলেক্ট্রোলাইটস গ্রহণ নিশ্চিত করুন।
কখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন? (When to See a Doctor)
- যদি শরীর কাঁপা দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকে।
- জ্বর, বুকে ব্যথা বা শ্বাসকষ্টের মতো গুরুতর লক্ষণ দেখা দেয়।
- বারবার কাঁপা দেখা যায় এবং কারণ বুঝতে পারছেন না।
- মস্তিষ্কের বিভ্রান্তি বা জ্ঞান হারানোর লক্ষণ দেখা দেয়।
উপসংহার (Conclusion)
শরীর কাঁপা সাধারণ সমস্যা হলেও এর পেছনে লুকিয়ে থাকতে পারে গুরুতর রোগের কারণ। তাই এটি অবহেলা না করে দ্রুত কারণ শনাক্ত করা উচিত। প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করুন। স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং সঠিক জীবনযাপনের মাধ্যমে অনেক সমস্যা এড়ানো সম্ভব।