পাইলস হলে কী কী সমস্যা হয় এবং প্রতিরোধের উপায়

পাইলস, যা হেমোরয়েড নামেও পরিচিত, একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা যা মলদ্বারের শিরাগুলোর ফুলে ওঠা বা স্ফীত হওয়ার কারণে হয়। এটি বিশেষত দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকা, কোষ্ঠকাঠিন্য, এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারণে দেখা দিতে পারে। যদিও পাইলস জীবননাশক নয়, তবে এটি দৈনন্দিন জীবনে প্রচণ্ড অস্বস্তি এবং ব্যথার কারণ হতে পারে। এই ব্লগে আমরা পাইলস হলে কী কী সমস্যা হয়, এর কারণ এবং প্রতিরোধের উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

পাইলস হলে কী কী সমস্যা হয়

১. মলদ্বারে ব্যথা

পাইলস হলে মলদ্বারের চারপাশে ব্যথা এবং অস্বস্তি হতে পারে। বিশেষ করে মলত্যাগের সময় ব্যথা তীব্র হতে পারে।

২. রক্তপাত

মলত্যাগের সময় মলের সঙ্গে রক্তপাত পাইলসের অন্যতম সাধারণ লক্ষণ। এটি সাধারণত উজ্জ্বল লাল রঙের হয়।

৩. চুলকানি এবং জ্বালাপোড়া

মলদ্বারের চারপাশে চুলকানি এবং জ্বালাপোড়া অনুভূত হতে পারে, যা জীবাণুর সংক্রমণের কারণে হতে পারে।

৪. মলদ্বারের চারপাশে ফোলাভাব

পাইলসের কারণে মলদ্বারের আশেপাশে ফুলে ওঠা বা গুটি দেখা দিতে পারে। এটি অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক পাইলসের কারণে হতে পারে।

৫. মলত্যাগে কষ্ট

পাইলসের কারণে মলত্যাগের সময় প্রচণ্ড কষ্ট এবং চাপ অনুভূত হয়। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকলে এটি আরও তীব্র হতে পারে।

৬. স্রাব

মলদ্বার থেকে কিছুটা মিউকাস বা স্রাব নির্গত হতে পারে, যা অস্বস্তি সৃষ্টি করে।

৭. বসার সময় অস্বস্তি

পাইলস থাকলে দীর্ঘ সময় বসে থাকা কষ্টকর হয়ে পড়ে। এটি কর্মজীবনে সমস্যা তৈরি করতে পারে।

৮. সংক্রমণ

যদি পাইলসের গুটি ফেটে যায় বা সঠিক যত্ন নেওয়া না হয়, তবে সেখানে সংক্রমণ হতে পারে। এটি আরও জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।

raju akon youtube channel subscribtion

পাইলসের কারণ

  1. কোষ্ঠকাঠিন্য: দীর্ঘ সময় ধরে মলত্যাগে চাপ দিলে মলদ্বারের শিরাগুলো ফুলে যায়।
  2. ডায়রিয়া: অতিরিক্ত ডায়রিয়ার কারণে মলদ্বারের শিরাগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে।
  3. অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: আঁশযুক্ত খাবার কম খেলে পাইলসের ঝুঁকি বাড়ে।
  4. গর্ভাবস্থা: গর্ভাবস্থায় পাইলস হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে, কারণ জরায়ুর চাপ শিরাগুলোকে ফুলিয়ে তোলে।
  5. দীর্ঘ সময় বসে থাকা: কর্মক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় বসে থাকার ফলে মলদ্বারের শিরাগুলোতে চাপ পড়ে।
  6. ওজনাধিক্য: অতিরিক্ত ওজন মলদ্বারের শিরাগুলোর উপর চাপ সৃষ্টি করে।

পাইলস প্রতিরোধের উপায়

১. আঁশযুক্ত খাবার খান

আঁশসমৃদ্ধ খাবার যেমন শাকসবজি, ফলমূল, এবং সম্পূর্ণ শস্য খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় এবং পাইলস প্রতিরোধে সাহায্য করে।

২. পর্যাপ্ত পানি পান করুন

প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন। এটি মল নরম রাখতে সাহায্য করে।

৩. দীর্ঘ সময় বসে থাকা এড়িয়ে চলুন

কর্মক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় বসে থাকার বদলে মাঝে মাঝে উঠে হাঁটুন।

৪. শারীরিক ব্যায়াম করুন

নিয়মিত ব্যায়াম করলে রক্ত সঞ্চালন ভালো হয় এবং পাইলস প্রতিরোধে সাহায্য করে।

৫. মলত্যাগের সময় চাপ না দেওয়া

মলত্যাগের সময় বেশি চাপ দিলে মলদ্বারের শিরাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

৬. ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন

ওজনাধিক্য পাইলসের ঝুঁকি বাড়ায়, তাই স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ।

৭. টয়লেট ব্যবহারের অভ্যাস উন্নত করুন

মলত্যাগের সময় দীর্ঘক্ষণ টয়লেটে বসে থাকবেন না এবং প্রাকৃতিক তাগিদে সাড়া দিন।

পাইলস হলে করণীয়

  1. ডাক্তারের পরামর্শ নিন: পাইলসের লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
  2. উষ্ণ পানিতে বসুন: উষ্ণ পানিতে ১০-১৫ মিনিট বসে থাকলে ব্যথা এবং ফোলাভাব কমে।
  3. মল নরম করার ওষুধ: প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শে মল নরম করার ওষুধ ব্যবহার করতে পারেন।
  4. ক্রিম বা জেল ব্যবহার করুন: পাইলসের ব্যথা কমাতে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ক্রিম বা জেল ব্যবহার করুন।
  5. সার্জারি: যদি পাইলস খুব গুরুতর হয়, তবে সার্জারি প্রয়োজন হতে পারে।

উপসংহার

পাইলস একটি সাধারণ কিন্তু অস্বস্তিকর সমস্যা, যা সঠিক যত্ন এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়ে সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। পাইলসের ঝুঁকি কমাতে সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন অপরিহার্য। যদি পাইলসের লক্ষণ দেখা দেয়, তবে দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। সুস্থ থাকুন, সচেতন থাকুন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top