google.com, pub-1016891184419719, DIRECT, f08c47fec0942fa0 অটিজম সম্পর্কিত ভ্রান্ত ও নেতিবাচক ধারণাগুলো কি কি? - Raju Akon

অটিজম সম্পর্কিত ভ্রান্ত ও নেতিবাচক ধারণাগুলো কি কি?

অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার (ASD) নিয়ে সমাজে অনেক ভ্রান্ত ধারণা ও নেতিবাচক মনোভাব রয়েছে। এই ভুল ধারণাগুলো শুধুমাত্র অটিজমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য নয়, তাদের পরিবার ও সমাজের জন্যও ক্ষতিকর হতে পারে। অটিজম সম্পর্কে সঠিক তথ্য না জানা এবং অজ্ঞতার ফলে এগুলো জন্ম নেয়, যা সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দূর করা সম্ভব।

১. “অটিজম মানে মানসিক রোগ”

এটি একটি প্রচলিত ভুল ধারণা। অটিজম কোনও মানসিক রোগ নয়, এটি একটি স্নায়বিক বিকাশগত (neurological developmental) সমস্যা। এর ফলে ব্যক্তির সামাজিক যোগাযোগ, আচরণ এবং ইন্দ্রিয়গত ক্রিয়াকলাপে কিছুটা অস্বাভাবিকতা দেখা যায়। মানসিক রোগ এবং অটিজমের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। অটিজম একটি জীবনব্যাপী অবস্থা, তবে মানসিক রোগগুলি সাধারণত চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

raju akon youtube channel subscribtion

২. “অটিজম আক্রান্তরা অনুভূতিহীন”

অটিজম আক্রান্ত শিশুরা বা প্রাপ্তবয়স্করা অনেক সময় নিজেদের অনুভূতি সঠিকভাবে প্রকাশ করতে পারে না বলে অনেকেই মনে করেন তারা অনুভূতিহীন। তবে বাস্তবে, অটিজম আক্রান্তদেরও অন্যান্য মানুষের মতোই অনুভূতি রয়েছে। তারা কেবল তাদের আবেগ-অনুভূতি প্রকাশের ক্ষেত্রে কিছুটা সীমাবদ্ধতা অনুভব করে, বিশেষ করে মুখের অভিব্যক্তি ও শারীরিক ভাষা দ্বারা তা প্রকাশ করতে।

৩. “অটিজমের জন্য খারাপ প্যারেন্টিং দায়ী”

অনেকেই ভুলভাবে বিশ্বাস করেন যে, অটিজম শিশুর জন্মের পেছনে বাবা-মায়ের খারাপ প্যারেন্টিং বা যত্নহীনতা দায়ী। এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। অটিজমের প্রকৃত কারণ এখনও সম্পূর্ণভাবে জানা যায়নি, তবে এটি জিনগত এবং পরিবেশগত ফ্যাক্টরের সংমিশ্রণে ঘটে। প্যারেন্টিং এর কারণে অটিজম হয় না।

৪. “অটিজম শিশুরা কখনো সফল হতে পারে না”

এটি একটি বড় ভুল ধারণা। অনেক অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তি সমাজে অনেক সফলতা অর্জন করেছেন। তাদের মধ্যে কিছু অসাধারণ প্রতিভা, যেমন গণিত, সংগীত, বিজ্ঞান বা শিল্পে থাকে। যথাযথ থেরাপি, শিক্ষা ও সহযোগিতার মাধ্যমে অটিজম আক্রান্তরা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে এবং কর্মক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করতে পারে।

৫. “অটিজম একটি নিরাময়যোগ্য অবস্থা”

অটিজম নিরাময়যোগ্য নয়, এটি একটি জীবনব্যাপী অবস্থা। তবে এর লক্ষণগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং আক্রান্তদের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন থেরাপি যেমন স্পিচ থেরাপি, অকুপেশনাল থেরাপি, এবং আচরণগত থেরাপি ব্যবহার করা হয়। সঠিক সহায়তা ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তিরা উন্নতি করতে পারে।

৬. “অটিজম শিশুরা অন্যদের থেকে আলাদা এবং এদের সাথে মিশে থাকা সম্ভব নয়”

অটিজম আক্রান্ত শিশুরা বা প্রাপ্তবয়স্করা সমাজের অংশ, এবং সঠিক সমর্থন পেলে তারা অন্যদের মতোই সামাজিকভাবে সক্রিয় হতে পারে। তারা সবসময় মিশতে পারে না বলে মনে হলেও, প্রয়োজনীয় সহযোগিতায় তাদের সাথে সহজেই মিশে থাকা সম্ভব।

৭. “অটিজম আক্রান্তদের সবসময় বিশেষ বিদ্যালয়ে যেতে হবে”

অনেকের মনে এই ধারণা থাকে যে, অটিজম আক্রান্ত শিশুদের শুধুমাত্র বিশেষ বিদ্যালয়ে ভর্তি করতে হবে। তবে এটি সবক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। অনেক অটিজম আক্রান্ত শিশু সাধারণ বিদ্যালয়েও সাফল্যের সাথে পড়াশোনা করতে পারে, যদি তাদের উপযুক্ত সহায়তা এবং রিসোর্স প্রদান করা হয়।

৮. “অটিজম আক্রান্তরা কথা বলতে শিখবে না”

অনেকেই মনে করেন অটিজম আক্রান্ত শিশুরা কখনোই কথা বলতে পারবে না। যদিও কিছু শিশুদের কথা বলায় সমস্যা থাকে, স্পিচ থেরাপি এবং সঠিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের অনেকেই কথা বলা শিখতে পারে এবং তাদের যোগাযোগ দক্ষতা উন্নত করতে পারে।

উপসংহার

অটিজম সম্পর্কে সমাজে প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণাগুলো দুর করতে হলে সচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি। অটিজমকে সঠিকভাবে বুঝতে এবং আক্রান্তদের সহযোগিতায় কাজ করলে তারা সমাজের মূলধারায় আরও সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে পারবে। সঠিক জ্ঞান ও সহানুভূতি নিয়ে এগিয়ে আসা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top