পাইলস কি: কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার

পাইলস, যা হেমোরয়েড নামেও পরিচিত, একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা যা মলদ্বারের রক্তনালীগুলোর ফোলাভাব বা প্রসারণের কারণে ঘটে। এটি মূলত দীর্ঘমেয়াদী কোষ্ঠকাঠিন্য, অতিরিক্ত চাপ বা অসুস্থ জীবনযাত্রার কারণে হতে পারে। এই সমস্যা পুরুষ ও নারী উভয়ের মধ্যেই দেখা যায় এবং এটি কখনও কখনও ব্যথাযুক্ত হতে পারে।

পাইলসের কারণ

পাইলস সাধারণত নিম্নলিখিত কারণগুলোর জন্য হয়:

  • দীর্ঘমেয়াদী কোষ্ঠকাঠিন্য – কঠিন মলত্যাগের কারণে অতিরিক্ত চাপ পড়ে।
  • ডায়রিয়া – দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া থাকলে মলদ্বারে চাপ সৃষ্টি হয়।
  • গর্ভাবস্থা – নারীদের ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ওজন এবং রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধির কারণে পাইলস হতে পারে।
  • অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা – শরীরের অতিরিক্ত ওজন মলদ্বারের রক্তনালীর ওপর চাপ সৃষ্টি করে।
  • অতিরিক্ত সময় ধরে বসে থাকা – যারা দীর্ঘ সময় ধরে বসে কাজ করেন, তারা পাইলসের ঝুঁকিতে পড়েন।
  • অতিরিক্ত শক্তিশালী ব্যায়াম – ভারোত্তোলনের মতো উচ্চ-চাপযুক্ত ব্যায়াম পাইলসের কারণ হতে পারে।

    raju akon youtube channel subscribtion

পাইলসের লক্ষণ

পাইলসের লক্ষণ গুলো সাধারণত নিম্নরূপ:

  • মলদ্বারে চুলকানি ও জ্বালাপোড়া অনুভব করা।
  • মলত্যাগের সময় বা পরে রক্তপাত হওয়া।
  • মলদ্বারের আশেপাশে ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভব করা।
  • মলদ্বার ফুলে যাওয়া বা সেখানে ছোট ছোট গুটি অনুভব করা।

পাইলসের ধরণ

পাইলস সাধারণত দুই ধরনের হতে পারে:

  1. অভ্যন্তরীণ পাইলস – এটি মলদ্বারের ভেতরে হয় এবং সাধারণত ব্যথাহীন হয়, তবে মাঝে মাঝে রক্তপাত দেখা যায়।
  2. বাহ্যিক পাইলস – এটি মলদ্বারের বাইরের অংশে দেখা যায় এবং এটি অনেক সময় ব্যথাজনিত হতে পারে।

পাইলসের চিকিৎসা

ঘরোয়া প্রতিকার:

  • প্রচুর পানি পান করা এবং আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া।
  • অতিরিক্ত সময় ধরে বসে না থাকা।
  • গরম পানির সিট বাথ নেওয়া।
  • নারকেল তেল বা অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করা।
  • ক্যাফেইন ও মসলাযুক্ত খাবার এড়ানো।

চিকিৎসার পদ্ধতি:

  • ব্যথা ও প্রদাহ কমানোর জন্য ওষুধ গ্রহণ।
  • গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য বা অতিরিক্ত চাপ কমানোর জন্য ফাইবার সাপ্লিমেন্ট নেওয়া।
  • মার্জিত পদ্ধতিতে সার্জারি (যেমন রাবার ব্যান্ড লিগেশন বা ইনফ্রারেড থেরাপি)।
  • গুরুতর ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ফোলা অংশ অপসারণ।

পাইলস প্রতিরোধের উপায়

  • খাদ্যতালিকায় প্রচুর আঁশ যুক্ত খাবার রাখুন।
  • নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করুন।
  • দীর্ঘক্ষণ ধরে বসে থাকা এড়িয়ে চলুন।
  • প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করুন।

উপসংহার

পাইলস একটি অস্বস্তিকর ও কষ্টদায়ক সমস্যা হলেও এটি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চললে এই সমস্যা অনেকাংশে কমানো যায়। তবে গুরুতর অবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top