স্ক্যাবিস, যা বাংলায় “চুলকানি রোগ” নামেও পরিচিত, একটি অত্যন্ত সংক্রামক চর্মরোগ। এটি প্রধানত Sarcoptes scabiei নামক একটি ক্ষুদ্র মাইটের কারণে হয়। এই মাইট ত্বকের নিচে প্রবেশ করে এবং সেখানে ডিম পাড়ে, যা তীব্র চুলকানি এবং ত্বকের লালচে ফুসকুড়ির কারণ হয়। সঠিক চিকিৎসা এবং প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে স্ক্যাবিস দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে, বিশেষত পরিবারের সদস্যদের মধ্যে।
স্ক্যাবিসের লক্ষণ ও প্রাথমিক সনাক্তকরণ
১. মূল লক্ষণসমূহ
- তীব্র চুলকানি, বিশেষত রাতে।
- ত্বকে ছোট ফুসকুড়ি বা র্যাশ।
- ত্বকের উপর সাদা বা ধূসর রেখার মতো দাগ।
- প্রায়শই আঙুলের ফাঁকে, কবজি, কোমর, বগল, এবং যৌনাঙ্গের আশেপাশে চুলকানি।
২. কারা ঝুঁকিতে থাকে
- যারা স্ক্যাবিস আক্রান্ত ব্যক্তির সরাসরি সংস্পর্শে আসে।
- যেসব এলাকায় জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি।
- স্যানিটেশনের অভাবজনিত পরিবেশে বসবাসকারীরা।
স্ক্যাবিস থেকে মুক্তির উপায়
১. চিকিৎসা পদ্ধতি
- ডাক্তারের পরামর্শমতো ওষুধ: স্ক্যাবিস নিরাময়ে প্রাথমিকভাবে ব্যবহৃত হয় স্ক্যাবিসাইড নামক বিশেষ ধরণের ক্রিম বা লোশন, যেমন:
- পারমেথ্রিন (Permethrin) ক্রিম।
- বেঞ্জাইল বেনজোয়েট (Benzyl Benzoate)।
- সলফার (Sulfur) মলম।
- মুখে খাওয়ার ওষুধ: আইভারমেকটিন (Ivermectin) ব্যবহৃত হতে পারে, বিশেষত গুরুতর সংক্রমণের ক্ষেত্রে।
২. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভ্যাস
- আক্রান্ত ত্বকে প্রতিদিন সাবান ও কুসুম গরম পানি দিয়ে পরিষ্কার করা।
- ব্যবহৃত পোশাক, বিছানার চাদর, এবং তোয়ালে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ততোধিক তাপমাত্রায় ধুয়ে শুকানো।
- আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত আসবাবপত্র এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত জিনিস পরিষ্কার রাখা।
৩. পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা
স্ক্যাবিস অত্যন্ত সংক্রামক হওয়ায় পরিবারের সকল সদস্যকে চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন, এমনকি যদি কারও লক্ষণ না থাকে।
৪. চুলকানি উপশমের ঘরোয়া উপায়
- ঠান্ডা প্যাক: ক্ষতস্থানে ঠান্ডা প্যাক লাগালে সাময়িক আরাম পাওয়া যায়।
- নারকেল তেল: ক্ষতস্থানে প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
- এলোভেরা জেল: ত্বকের প্রদাহ কমাতে কার্যকর।
স্ক্যাবিস প্রতিরোধে করণীয়
১. ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা
- নিয়মিত হাত ধোয়া।
- ব্যক্তিগত পোশাক, তোয়ালে, এবং চিরুনি অন্যদের সাথে ভাগাভাগি না করা।
২. পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা
- ঘর নিয়মিত ঝাড়ু ও পরিষ্কার করা।
- বিছানার চাদর ও কভার প্রায়শই পরিবর্তন করা।
৩. স্কুল এবং অফিসে সচেতনতা বৃদ্ধি
স্ক্যাবিস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং কর্মস্থলে সচেতনতা কর্মসূচি চালু করা জরুরি।
উপসংহার: সচেতন থাকুন, সুস্থ থাকুন
স্ক্যাবিস একটি সাধারণ কিন্তু অস্বস্তিকর চর্মরোগ। সঠিক সময়ে চিকিৎসা এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এটি সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। যদি স্ক্যাবিসের লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি এবং পরিচ্ছন্নতার অভ্যাস গড়ে তুলুন যাতে এই রোগ পুনরায় না ফিরে আসে।