শিশুর জন্মের পর থেকে তার পুষ্টির প্রধান উৎস হলো মায়ের বুকের দুধ। তবে অনেক সময় বিভিন্ন কারণে মায়েরা শিশুকে বোতল বা ফিডারে খাওয়ানোর পদ্ধতি অবলম্বন করেন। যদিও এটি সময় সাশ্রয়ী এবং সুবিধাজনক মনে হতে পারে, তবে শিশুকে বোতল বা ফিডারে খাওয়ানোর মাধ্যমে কিছু স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্মুখীন হতে হয়। এ ধরনের খাওয়ানোর প্রভাব শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের ওপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে।
১. সংক্রমণের ঝুঁকি
বোতল বা ফিডারের মাধ্যমে খাওয়ানোর ক্ষেত্রে শিশুর সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। ফিডার বা বোতল ঠিকমতো পরিষ্কার না হলে বা জীবাণুমুক্ত না করলে এতে ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, ও অন্যান্য ক্ষতিকারক জীবাণু জন্মাতে পারে। এতে শিশুর ডায়রিয়া, পেটের সমস্যা ও সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে।
২. পুষ্টির ঘাটতি
মায়ের বুকের দুধে শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত পুষ্টি উপাদান থাকে, যা শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। কিন্তু ফিডারের মাধ্যমে খাওয়ালে বুকের দুধের সঠিক পুষ্টিগুণ থেকে শিশু বঞ্চিত হতে পারে। এর ফলে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে পারে।
৩. ফুসফুসের সংক্রমণ ও শ্বাসকষ্ট
ফিডারে খাওয়ানোর সময় শিশুর মধ্যে ভুলভাবে তরল ঢোকার সম্ভাবনা থাকে, যা শ্বাসনালিতে পৌঁছে ফুসফুসের সংক্রমণ ঘটাতে পারে। এতে শিশুর শ্বাসকষ্ট বা নিউমোনিয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৪. দাঁতের সমস্যা
শিশুকে দীর্ঘদিন ধরে বোতল বা ফিডারে খাওয়ানোর ফলে তার দাঁতের গঠন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ফিডারের মাধ্যমে দুধ পান করার সময় শর্করাযুক্ত দুধ দাঁতে লেগে থাকে, যা ক্যাভিটি এবং অন্যান্য দাঁতের রোগ সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে রাতে বোতল দিয়ে খাওয়ানো হলে এই সমস্যা আরও গুরুতর হতে পারে।
৫. ওজন বৃদ্ধির সমস্যা
ফিডার দিয়ে খাওয়ানোর সময় শিশুর ওজন অনিয়ন্ত্রিতভাবে বেড়ে যেতে পারে। ফিডারের মাধ্যমে খাওয়ালে শিশু অনেক সময় অতিরিক্ত দুধ পান করে ফেলে, যা অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। এর ফলে শিশুর স্থূলতা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৬. মায়ের সঙ্গে সংযোগের অভাব
বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় মা ও শিশুর মধ্যে এক বিশেষ মানসিক সংযোগ তৈরি হয়, যা শিশুর মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বোতল বা ফিডারের মাধ্যমে খাওয়ানোর ফলে এই সংযোগের অভাব হয়, যা শিশুর মানসিক বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
৭. ফিডার নির্ভরতা
শিশু ফিডারে খেতে অভ্যস্ত হলে পরে তা ছাড়ানো কঠিন হয়ে পড়ে। শিশুরা ফিডারের সঙ্গে অতিরিক্ত মানসিকভাবে সংযুক্ত হতে পারে, যা পরবর্তীতে মায়ের বুকের দুধ বা অন্যান্য সলিড খাবারে অভ্যস্ত হতে সমস্যা সৃষ্টি করে।
৮. বুকের দুধের উৎপাদন কমে যাওয়া
যদি মায়েরা শিশুকে ফিডারে খাওয়াতে বেশি অভ্যস্ত হয়ে যান, তাহলে ধীরে ধীরে বুকের দুধের উৎপাদন কমে যেতে পারে। বুকের দুধ উৎপাদন শিশুর স্তন্যপান করার ওপর নির্ভর করে। ফিডারে খাওয়ানোর কারণে মায়ের দুধ উৎপাদন কমে গিয়ে শিশুকে বুকের দুধ থেকে বঞ্চিত করা হতে পারে।
৯. গ্যাস্ট্রিক সমস্যা
ফিডারের মাধ্যমে খাওয়ানোর সময় শিশুর মধ্যে বাতাস প্রবেশের সম্ভাবনা থাকে, যা শিশুর পেটে গ্যাসের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এতে শিশু অস্বস্তিতে ভোগে এবং পেটব্যথা বা বমি করার প্রবণতা দেখা দিতে পারে।
১০. জলশূন্যতার ঝুঁকি
ফিডারে খাওয়ানোর সময় দুধের সাথে অতিরিক্ত পানি মেশানোর প্রবণতা থাকে, যা শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এতে শিশুর শরীরে পানি বেশি প্রবেশ করে এবং পুষ্টির ঘাটতি দেখা দেয়, যা তার শরীরকে দুর্বল করে দেয়।
উপসংহার
শিশুকে বোতল বা ফিডারে খাওয়ানো অনেক সময় সুবিধাজনক মনে হতে পারে, তবে এর সঙ্গে যুক্ত স্বাস্থ্য ঝুঁকিগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মায়ের বুকের দুধ শিশুর জন্য সর্বোত্তম এবং এটি শিশুর সঠিক পুষ্টি ও মানসিক বিকাশে সাহায্য করে। যদি কোনো কারণে ফিডার বা বোতল ব্যবহার করতেই হয়, তবে সেগুলো ভালোভাবে জীবাণুমুক্ত এবং সঠিক পদ্ধতিতে ব্যবহার করা উচিত। মায়েরা যেন ফিডারের পরিবর্তে শিশুদের প্রাকৃতিক উপায়ে খাওয়ানোর চেষ্টা করেন।
ঠিকানা: পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।
ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬.