গলা ও বুক জ্বালা-পোড়ার বিভিন্ন কারণ ও করণীয়

গলা ও বুক জ্বালা-পোড়া একটি অস্বস্তিকর এবং যন্ত্রণাদায়ক সমস্যা যা সাধারণত অ্যাসিডিটির কারণে হয়। এটি সাধারণত খাওয়ার পরে বা শোয়ার সময় বেশি হয় এবং দীর্ঘস্থায়ী হলে এটি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তবে, এই সমস্যা সমাধানের জন্য কিছু সাধারণ পদক্ষেপ মেনে চলা যায়।

গলা ও বুক জ্বালা-পোড়ার কারণসমূহ:

১. অ্যাসিড রিফ্লাক্স (GERD): যখন পাকস্থলীর অ্যাসিড খাদ্যনালীতে উঠে আসে, তখন গলা ও বুক জ্বালাপোড়া হতে পারে। এই সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে হলে একে গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD) বলা হয়।

২. অতিরিক্ত ঝাল বা মশলাদার খাবার: ঝাল বা মশলাদার খাবার পাকস্থলীর অ্যাসিড বৃদ্ধি করে, যার ফলে বুক জ্বালাপোড়া হতে পারে।

৩. চর্বিযুক্ত বা ভাজা খাবার: চর্বিযুক্ত খাবার হজম হতে সময় নেয় এবং পাকস্থলীতে অ্যাসিড নিঃসরণ বাড়ায়, যা বুক জ্বালাপোড়া করতে পারে।

৪. ধূমপান: ধূমপান পাকস্থলীর অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সমস্যা বাড়ায় এবং খাদ্যনালীর রক্ষাকারী প্রবাহকে দুর্বল করে দেয়, যা বুক জ্বালা-পোড়া তৈরি করতে পারে।

৫. অতিরিক্ত খাবার খাওয়া: খুব বেশি খাবার খাওয়ার ফলে পাকস্থলীর উপরের অংশে চাপ পড়ে এবং অ্যাসিড রিফ্লাক্স হতে পারে, যা বুক ও গলায় জ্বালা সৃষ্টি করে।

৬. অতিরিক্ত কফি বা ক্যাফেইনজাতীয় পানীয়: কফি, চা এবং ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় পাকস্থলীর অ্যাসিড বৃদ্ধি করে, যা বুক জ্বালাপোড়ার অন্যতম কারণ।

raju akon youtube channel subscribtion

গলা ও বুক জ্বালা-পোড়া প্রতিরোধে করণীয়:

১. ছোট ছোট অংশে খাবার খান: অতিরিক্ত খাবার না খেয়ে অল্প অল্প করে বারবার খাবার খান। এতে পাকস্থলীতে চাপ কম পড়বে এবং অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সমস্যা কমবে।

২. অ্যাসিড উৎপাদক খাবার এড়িয়ে চলুন: ঝাল, মশলাদার, ভাজা ও চর্বিযুক্ত খাবার কম খান। এই ধরনের খাবার গ্যাস এবং অ্যাসিড বাড়িয়ে দেয়, যা বুক জ্বালা-পোড়া করে।

৩. খাওয়ার পর শোবেন না: খাবার খাওয়ার পরে অন্তত ২-৩ ঘণ্টা বসে থাকুন বা হাঁটাচলা করুন। শোয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাকস্থলীর অ্যাসিড উপরের দিকে উঠে আসে, যা জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করে।

৪. ধূমপান ও মদ্যপান এড়িয়ে চলুন: ধূমপান ও মদ্যপান গলা ও বুক জ্বালাপোড়ার অন্যতম কারণ। এগুলো ত্যাগ করলে এই সমস্যার প্রবণতা অনেকটাই কমবে।

৫. ক্যাফেইন ও চকোলেট কম খান: ক্যাফেইন এবং চকোলেট পাকস্থলীর অ্যাসিড উৎপাদন বাড়ায়। তাই এসব খাবার পরিমিত পরিমাণে খান।

৬. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন: অতিরিক্ত ওজন পাকস্থলীর উপর চাপ সৃষ্টি করে, যা অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সম্ভাবনা বাড়ায়। নিয়মিত ব্যায়াম এবং সুষম খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত।

৭. ঠাণ্ডা দুধ পান করুন: ঠাণ্ডা দুধ বুক জ্বালাপোড়া কমাতে পারে। এটি পাকস্থলীর অ্যাসিডকে প্রশমিত করে এবং অস্বস্তি দূর করতে সাহায্য করে।

৮. হালকা উঁচু বালিশে শোবেন: ঘুমানোর সময় মাথা একটু উঁচু করে শোয়ার জন্য অতিরিক্ত বালিশ ব্যবহার করুন, যাতে অ্যাসিড খাদ্যনালীতে উঠে আসতে না পারে।

চিকিৎসা:

গলা ও বুক জ্বালাপোড়া যদি নিয়মিত হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসক সাধারণত কিছু অ্যান্টাসিড ওষুধের পরামর্শ দেন যা পাকস্থলীর অ্যাসিডের পরিমাণ কমিয়ে দেয় এবং স্বস্তি দেয়।

গলা ও বুক জ্বালাপোড়া অ্যাসিড রিফ্লাক্সের কারণে হলে তা অবহেলা করা উচিত নয়। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা মেনে চললে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।

ঠিকানা: পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।
ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬.

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top