নারীর স্বাস্থ্য বিশেষ করে প্রজনন স্বাস্থ্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জরায়ু ইনফেকশন (Uterine Infection) নারীদের মধ্যে একটি সাধারণ কিন্তু গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা। এটি সময়মতো চিকিৎসা না করালে বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে, যেমন বন্ধ্যাত্ব, দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা, এবং অন্যান্য শারীরিক সমস্যা। এই ব্লগে আমরা আলোচনা করব জরায়ু ইনফেকশনের লক্ষণ, কারণ, এবং প্রতিকার।
জরায়ু ইনফেকশন কী?
জরায়ু ইনফেকশন মূলত জরায়ুতে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, বা ছত্রাকের সংক্রমণের ফলে ঘটে। এটি প্রায়ই পেলভিক ইনফ্ল্যামেটরি ডিজিজ (PID)-এর অংশ হিসেবে দেখা যায়। সংক্রমণ জরায়ুতে সীমাবদ্ধ হতে পারে বা ডিম্বনালী এবং ডিম্বাশয় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে।
জরায়ু ইনফেকশনের প্রধান লক্ষণ
১. পেলভিক ব্যথা
- তলপেটে ধারাবাহিক ব্যথা বা চাপ অনুভব।
- হঠাৎ করে ব্যথার তীব্রতা বাড়তে পারে।
২. অস্বাভাবিক স্রাব
- সাদা, হলুদ, বা সবুজাভ রঙের স্রাব।
- স্রাবের সঙ্গে দুর্গন্ধ থাকা।
৩. অনিয়মিত মাসিক রক্তস্রাব
- মাসিকের সময় অস্বাভাবিকভাবে বেশি রক্তপাত বা অল্প রক্তপাত।
- মাসিকের মধ্যে হঠাৎ রক্তক্ষরণ।
৪. জ্বর ও শারীরিক ক্লান্তি
- হালকা থেকে মাঝারি জ্বর।
- দুর্বলতা এবং কাজ করার অনীহা।
৫. মূত্রজনিত সমস্যা
- প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া বা ব্যথা।
- ঘন ঘন প্রস্রাব করার প্রয়োজন।
৬. যৌনমিলনের সময় ব্যথা
- যৌন মিলনের সময় বা পরে তলপেটে ব্যথা।
৭. পিঠের নিচের অংশে ব্যথা
- পিঠে বা কোমরে ক্রমাগত ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
৮. অতিরিক্ত ক্লান্তি ও মেজাজের পরিবর্তন
- বারবার মাথা ঘোরা বা ক্লান্তি অনুভব।
- মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া।
জরায়ু ইনফেকশনের কারণ
১. অস্বাস্থ্যকর যৌন অভ্যাস
- অসুরক্ষিত যৌনমিলন বা একাধিক সঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্ক।
২. বাহ্যিক সংক্রমণ
- অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকার কারণে সংক্রমণ।
- অপরিচ্ছন্ন স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার।
৩. গর্ভপাত বা প্রসব পরবর্তী জটিলতা
- অপূর্ণ গর্ভপাতের কারণে সংক্রমণ।
- প্রসবের পর জরায়ুতে ইনফেকশন হওয়া।
৪. জরায়ুর অস্ত্রোপচার
- জরায়ুর ডিভাইস বা অস্ত্রোপচারের সময় জীবাণুর সংক্রমণ।
৫. অন্যান্য রোগের সংক্রমণ
- যোনি বা মূত্রনালির সংক্রমণ জরায়ুতে ছড়িয়ে পড়া।
জরায়ু ইনফেকশনের ঝুঁকি
১. বন্ধ্যাত্ব
- ডিম্বনালী ব্লক হয়ে যাওয়ার কারণে সন্তানধারণে সমস্যা।
২. গর্ভধারণজনিত জটিলতা
- গর্ভাবস্থায় সংক্রমণ হলে মা ও শিশুর ঝুঁকি বেড়ে যায়।
৩. অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্ষতি
- সংক্রমণ বাড়লে জরায়ু, ডিম্বাশয় বা ডিম্বনালী স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
৪. রক্তে সংক্রমণ (সেপ্টিসেমিয়া)
- সংক্রমণ রক্তে ছড়িয়ে পড়লে জীবনঘাতী হতে পারে।
প্রতিকার ও প্রতিরোধ
১. ডাক্তারের পরামর্শ নিন
- তীব্র লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত গাইনোকোলজিস্টের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
- সংক্রমণ নির্ণয়ে আলট্রাসাউন্ড বা অন্যান্য পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে।
২. সঠিক ওষুধ গ্রহণ
- সংক্রমণের ধরন অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ সেবন।
- ওষুধ পুরোপুরি শেষ করা জরুরি।
৩. পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন
- দৈনন্দিন পরিচ্ছন্নতার প্রতি মনোযোগ দিন।
- পরিচ্ছন্ন স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করুন।
৪. নিরাপদ যৌনমিলন
- কন্ডম ব্যবহার করুন এবং সঙ্গীর স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন থাকুন।
৫. পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার খান
- শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি, এবং আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খান।
৬. স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ করুন
- মানসিক চাপ কমানোর জন্য যোগব্যায়াম বা মেডিটেশন করুন।
উপসংহার
জরায়ু ইনফেকশন একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা যা প্রাথমিক পর্যায়ে চিহ্নিত করলে সহজেই চিকিৎসা করা যায়। তাই লক্ষণ দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। নিজের এবং পরিবারের নারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সচেতন থাকুন এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করুন।