ইউরিক অ্যাসিড আমাদের শরীরের একটি প্রাকৃতিক উপাদান, যা পিউরিন নামক পদার্থ ভাঙার সময় তৈরি হয়। সাধারণত কিডনি এই অ্যাসিড শরীর থেকে বের করে দেয়। তবে, যখন শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যায় বা কিডনি এটি সঠিকভাবে ফিল্টার করতে ব্যর্থ হয়, তখন এটি গাউট (গিঁটের ব্যথা), কিডনিতে পাথর, এবং অন্যান্য জটিলতার কারণ হতে পারে। আজকের এই ব্লগে আমরা জানবো ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধির কারণ, লক্ষণ, এবং এটি নিয়ন্ত্রণের কার্যকর উপায়।
ইউরিক অ্যাসিড কী?
ইউরিক অ্যাসিড হলো এক ধরনের বর্জ্য পদার্থ, যা পিউরিনসমৃদ্ধ খাবার (যেমন লাল মাংস, সামুদ্রিক খাবার, এবং মদ্যপ পানীয়) হজমের সময় তৈরি হয়। রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের স্বাভাবিক মাত্রা হলো:
- পুরুষদের জন্য: ৩.৫-৭.২ mg/dL
- মহিলাদের জন্য: ২.৬-৬ mg/dL
যখন এর মাত্রা বেশি হয়ে যায়, তখন তাকে হাইপারইউরিসেমিয়া বলা হয়।
ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধির কারণ
- খাদ্যাভ্যাস: পিউরিনসমৃদ্ধ খাবার যেমন লাল মাংস, মদ, এবং সামুদ্রিক খাবার অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া।
- কিডনির কার্যকারিতা হ্রাস: কিডনি সঠিকভাবে ইউরিক অ্যাসিড ফিল্টার করতে না পারলে এটি রক্তে জমা হয়।
- ওষুধের প্রভাব: কিছু ওষুধ, যেমন ডায়ুরেটিকস বা নিম্ন রক্তচাপের ওষুধ, ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়াতে পারে।
- অতিরিক্ত ওজন: ওজন বেশি হলে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
- জেনেটিক কারণ: পারিবারিক ইতিহাস থাকলে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেশি হতে পারে।
ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধির লক্ষণ
- গাউট: পায়ের বুড়ো আঙুলে ব্যথা, ফোলা, এবং লালচে হওয়া।
- কিডনিতে পাথর: তীব্র পিঠের ব্যথা, প্রস্রাবে জ্বালা, বা রক্ত।
- জয়েন্টে ব্যথা: বিশেষ করে হাত, পা, এবং হাঁটুতে ব্যথা ও অস্বস্তি।
- ত্বকের নিচে গাঁট: এটি গাউটের দীর্ঘস্থায়ী অবস্থায় হতে পারে।
ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণের উপায়
১. পিউরিনসমৃদ্ধ খাবার এড়িয়ে চলুন
এড়িয়ে চলুন:
- লাল মাংস
- সামুদ্রিক খাবার (চিংড়ি, কাঁকড়া, ইলিশ)
- মদ এবং বিয়ার
২. প্রচুর পানি পান করুন
দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন। এটি ইউরিক অ্যাসিড প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করতে সাহায্য করে।
৩. শাকসবজি এবং ফল খান
- চেরি, স্ট্রবেরি, এবং ব্লুবেরি ইউরিক অ্যাসিড কমাতে সাহায্য করে।
- শসা, পালং শাক, এবং করলা খেতে পারেন।
৪. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন
অতিরিক্ত ওজন শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়াতে পারে। নিয়মিত ব্যায়াম করুন এবং সুষম খাবার খান।
৫. কফি এবং গ্রিন টি পান করুন
কফি এবং গ্রিন টি ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কমাতে সহায়ক।
৬. অ্যালকালাইন খাবার খান
লেবু পানি এবং শসার মতো অ্যালকালাইন খাবার শরীরের পিএইচ ব্যালেন্স ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
৭. ওষুধ গ্রহণ করুন
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণের জন্য ওষুধ নিতে পারেন।
ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধির ঝুঁকি এড়াতে পরামর্শ
- নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা করুন।
- পিউরিনসমৃদ্ধ খাবার সীমিত করুন।
- ধূমপান এবং মদ্যপান এড়িয়ে চলুন।
- কিডনির কার্যকারিতা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করুন।
- স্ট্রেস কমাতে মেডিটেশন বা যোগব্যায়াম করুন।
উপসংহার
ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, এবং পর্যাপ্ত পানি পান করলে এটি সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। যদি ইউরিক অ্যাসিডের কারণে জয়েন্টে ব্যথা বা অন্যান্য সমস্যা দেখা দেয়, তবে দ্রুত একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।