আমি ২৩ বছর বয়সী একজন যুবক। আমি প্রায় ১৩ বছর যাবত মাস্টারবেশন এবং পর্ণ এডিক্টেড। বাসায় মা বাবার সাথে রাতে থাকার মাধ্যমে , বন্ধু বান্ধব, বাসার মোবাইল, ল্যাপটপে ফ্যামিলির লোকজন এগুলো দেখতো এইভাবে ও আমার নজরে আসে।
বলতে গেলে আমি ওই ছোটবেলায় প্রায় সব মাধ্যমে এই জঘন্য বিষয়গুলোর সান্নিধ্যে চলে আসি। বলতে গেলে আমি এখনো পর্যন্ত কোনো নারীর সাথে বাস্তবে সংস্পর্শে আসি নি বা আমার ইচ্ছে ও জাগে নাই কথা ও বলি নাই প্রয়োজনীয় কোনো হেল্প ছাড়া। কিন্তু আমি বছরের পর বছর ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে এই কাজ করেই আসতেছি।
আজ থেকে প্রায় চার বছর আগে আমি এটার বাজে প্রভাব বুঝতে শুরু করি দেখা যাচ্ছি আমি কোনোভাবে মনযোগ দিতে পারতেসি নাহ পড়াশোনায়। তারপর থেকে ছাড়ার অনেক চেষ্টা করেও বৃথাই থেকে গেছে। পড়াশোনা রিলেটেড কিছু করতে আমার রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয় পড়তে বসলেই দেখা যাচ্ছে সেক্স ঘুরপাক খাচ্ছে মাথায়, কেউ কিছু বললে দেখা যাচ্ছে অন্যমনস্ক হয়ে পড়ি, অনেক বেশি উগ্র, মনে থাকে নাহ ঠিকঠাক, দেখা যাচ্ছে অনেকক্ষণ পড়ার পরেও প্রথমদিকের কয়েকটা লাইনেই থেকে যাচ্ছি।
আমি উপজেলায় প্রথম হয়েছি এমন একটা স্টুডেন্ট সেখানে পাশ ও করতে পারি নাহ। ইউনিভার্সিটি থেকে ড্রপ আউট হলাম এই বছর। কারো সাথে মিশতেও ইচ্ছে করে নাহ কারণ যাদের সাথেই মিশি তাদের কাছে নারী রিলেটেড কথাবার্তা বেশি শুনি। কার ক্রাশ কে, কে কয়টা সেক্স করেছে এখন পর্যন্ত ইত্যাদি ইত্যাদি। অর্থাৎ আমি জীবদ্দশায় ভালো মানুষের সংস্পর্শ পাই নি বললেই চলে।
আমার সাথে কথা বললে বা একাকীত্ব পরিহার করে চললে আমি ভালো থাকি বা সেক্স ও মাথায় আসে নাহ। আমি অনেক ডাক্তার ও দেখিয়েছি কিন্তু আমার ফ্যামিলি মেম্বারদের বুঝাতে পারি নাহ আমার সব সমস্যা সেক্সুয়াল। আমি অনেকবার আত্মহত্যার ও চেষ্টা করেছি এই সমস্যা থেকে বাঁচতে। কিন্তু আমি একা ছাড়তে পারি নাহ কারো সাহায্য দরকার এই সমস্যা থেকে বাঁচতে।
ইদানীং আমি আরোও জঘন্য সব সেক্সে এডিক্টেড হয়ে পড়েছি যেমন – মেয়ে আর মেয়ে, মেয়েদের সাথে প্রাণীর। কীভাবে বাঁচা সম্ভব এই জগত থেকে? আমি নিঃশেষ হয়ে গেলাম এই জগতে থেকে থেকে।
পরামর্শ:
এখান থেকে বের হওয়া সম্ভব। তবে তার জন্য আপনার কিছু প্রাথমিক ইনিশিয়েটিভ নিতে হবে। মাস্টারবেশন কোন রোগ নয়। প্রায় প্রতিটা প্রাণীরই সেক্সচুয়াল অনুভূতি হয়। আমাদের দেশে আইনগতভাবে বৈধ উপায়ে সেক্সচুয়াল ইচ্ছা পূরণ করার একমাত্র অবলম্বন হচ্ছে বিয়ে।
সেক্সুয়াল ইচ্ছা আমাদের মনে জাগার ফিজিওলজিক্যাল কারণ হচ্ছে, সিমেন বা বীর্য টেস্টইজ বা অন্ডকোষে উৎপন্ন হয় যা এপিডিডিমাইস বা নালীতে জমা হয়। যখন পর্যাপ্ত বীর্য এপিডিডাইমিস জমা হয় তখন সেক্সচুয়াল অ্যাক্টিভিটির মাধ্যমে বীর্য বের করার ইচ্ছা জাগে।
বীর্য বের করার তিনটি উপায় হচ্ছে:
১. কারো সাথে সেক্স করা,
২. মাস্টারবেশন,
৩. স্বপ্নদোষ বা নাইটমেয়ার ।
মেডিকেল সাইন্সে এই তিনটির একটিকেও দোষের হিসেবে দেখেনা। তবে আপনার ভিতরে যদি এডিকশন হয় কিংবা আপনি যদি এগুলোকে দোষ যেমন অপরাধবোধ হিসেবে দেখেন তখন এটির জন্য সঠিক চিকিৎসা দরকার। যদি সমস্যাটি তীব্র হয় সেক্ষেত্রে সাইক্রিয়াটিস্ট মেডিসিন প্রেসক্রাইব করবেন এবং একজন কাউন্সিলিং সাইকোলজিস্ট সাইকোথেরাপি বা কাউন্সিলিং দিবেন। অনেক সময় যেকোনো একটি অথবা একই সাথে এই দুটি চিকিৎসায় দরকার হতে পারে। তাই যত দ্রুত সম্ভব একজন সাইক্রিয়াটিস্ট অথবা একজন কাউন্সিলিং সাইকোলজিস্টের শরণাপন্ন হন এবং সঠিক চিকিৎসা নিন। সেলফ টেকনিক হিসেবে আপনি নিয়মিত মেডিটেশন, শ্বাসের ব্যায়াম ও ফিজিক্যাল এক্সারসাইজ করতে পারেন।
পরামর্শ দিয়েছেন আসাদুজ্জামান রাজু, কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট, এম ফিল রিসার্চ ফেলো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পাইনাল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার।