বাংলায় ট্রমা (ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট) প্রোটোকল

বাংলায় ট্রমা (ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট) প্রোটোকল

আমি রাজু আকন, একজন মানসিক স্বাস্থ্য পেশাজীবী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল অর্জনকারী কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট। মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত পরিষেবা প্রদানের ক্ষেত্রে কিছু প্রোটোকল এবং কৌশল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে যখন কাউকে মানসিক আঘাত (ট্রমা) বা তীব্র মানসিক চাপের সাথে মোকাবিলা করতে হয়। এখানে আমি একটি মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তার প্রোটোকল তুলে ধরছি যা আপনি একজন মানসিক স্বাস্থ্য পেশাজীবী হিসেবে রোগীর সাথে প্রয়োগ করতে পারেন।

১. নিজের পরিচয় প্রদান এবং সংহতি জ্ঞাপন

প্রথমেই, রোগীর সামনে নিজেকে পরিচয় করিয়ে দিন। তারপরে রোগীকে বুঝিয়ে দিন যে আপনি তার সাথে আছেন এবং তিনি একা নন। এই সংহতি বোধ রোগীর মানসিক অবস্থা স্থিতিশীল করতে সাহায্য করে।

২. সাধারণ মানসিক প্রতিক্রিয়া বৈধতা প্রদান

রোগীর সাধারণ মানসিক প্রতিক্রিয়াগুলিকে বৈধতা দিন। এখানে কোনও বিশদ বিবরণ বা গভীর অন্বেষণে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। রোগীর অনুভূতিগুলোকে স্বীকৃতি দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ, যাতে সে অনুভব করে যে তার আবেগগুলি স্বাভাবিক।

raju akon youtube channel subscribtion

৩. নিরাপত্তা বোধ তৈরি করা

রোগীর মধ্যে ভবিষ্যত সম্পর্কে উদ্বেগ এবং অনিশ্চয়তার মধ্যে নিরাপত্তা বোধ তৈরি করতে কাজ করুন। এটি মানসিক নিরাপত্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং এটি রোগীর মানসিক স্থিতি বাড়াতে সাহায্য করবে।

৪. মানসিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ

রোগীর মানসিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কিছু নির্দিষ্ট কৌশল ব্যবহার করতে পারেন। যেমন:

  • বাটারফ্লাই হাগ: শরীরের অনুভূতির উপর ফোকাস করা।
  • নিয়মিত শ্বাস প্রশ্বাস: স্বাভাবিক শ্বাস গ্রহণ।
  • ৫ ইন্দ্রিয় ব্যবহার: চারপাশের পরিবেশের সাথে নিজেকে সংযুক্ত রাখুন।
  • রিভার্স কাউন্টিং: উল্টো গণনা।
  • বর্তমান অবস্থায় থাকা: বর্তমান মুহূর্তে থাকা এবং তা অনুভব করা।

৫. সাম্প্রতিক ঘটনার ইএমডিআর প্রোটোকল অনুসরণ

সাম্প্রতিক ঘটনাগুলির উপর ইএমডিআর (EMDR) প্রোটোকল অনুসরণ করুন। এটি রোগীর মানসিক চাপ কমাতে এবং তার আবেগীয় স্থিতি স্থিতিশীল করতে সহায়তা করবে।

৬. ধৈর্যশীলতা শক্তিশালীকরণ

রোগীর ধৈর্যশক্তি বাড়ানোর জন্য কিছু নির্দিষ্ট কৌশল ব্যবহার করতে পারেন, যেমন:

  • +ve memory (৮-১০ BLS ধীরে ধীরে): রোগীর ইতিবাচক স্মৃতিগুলো পুনঃসঞ্চার করা।
  • স্পাইরাল টেকনিক: ধীর গতিতে আলো প্রবাহিত করা।

৭. পূর্ববর্তী উদ্বেগ বা মানসিক চাপের মোকাবিলা

রোগী পূর্বে যেভাবে মানসিক চাপ বা উদ্বেগের মোকাবিলা করেছে, সেই পদ্ধতিগুলো নিয়ে আলোচনা করুন এবং সেগুলোকে আরও শক্তিশালী করার উপায় নিয়ে কাজ করুন।

৮. গোপনীয়তা নিশ্চিতকরণ

রোগীর সাথে আপনার আলোচনার সবকিছু গোপন থাকবে এই নিশ্চয়তা দিন। এটি রোগীর বিশ্বাস অর্জনে সহায়ক হবে।

৯. নিজেকে স্থিতিশীল রাখার জন্য আত্ম-গ্রাউন্ডিং

আপনি নিজেও মানসিকভাবে স্থিতিশীল থাকতে নিজেকে গ্রাউন্ডিং করতে পারেন। এটি প্রয়োজনীয় যাতে আপনি রোগীকে সর্বোচ্চ মানসিক সহায়তা দিতে পারেন।

উপসংহার

এই প্রোটোকলগুলো মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার সঙ্গে লড়াইরত রোগীদের জন্য খুবই কার্যকরী হতে পারে। একজন কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট হিসেবে, আমি মনে করি এই কৌশলগুলো রোগীদের মানসিক স্থিতি এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

Resourses:

  1. Trauma (Crisis Management) Protocol for Psychologists (English Web Version)
  2. Trauma (Crisis Management) Protocol for Psychologists (English PDF Version)

আপনার কোনো প্রশ্ন বা প্রয়োজনীয়তা থাকলে, আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

  • রাজু আকন, কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট, এমফিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top