থাইরয়েড হলো শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থি, যা মেটাবলিজম বা বিপাক ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। এই গ্রন্থিটি শরীরে থাইরয়েড হরমোন নিঃসরণ করে, যা শরীরের শক্তি উৎপাদন, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, এবং মস্তিষ্কসহ বিভিন্ন অঙ্গের কার্যকারিতার উপর প্রভাব ফেলে। কিন্তু থাইরয়েডের কার্যকারিতা যখন ব্যাহত হয়, তখন শরীরে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। তবে সঠিক খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে থাইরয়েডের কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
থাইরয়েডের ধরণ ও সমস্যা
থাইরয়েডের দুই ধরনের সমস্যা হতে পারে:
- হাইপোথাইরয়েডিজম (Hypothyroidism): এটি একটি অবস্থা যেখানে থাইরয়েড গ্রন্থি পর্যাপ্ত হরমোন উৎপাদন করে না। ফলে বিপাক ক্রিয়া ধীর হয়ে যায় এবং ওজন বৃদ্ধি, ক্লান্তি, বিষণ্নতা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়।
- হাইপারথাইরয়েডিজম (Hyperthyroidism): এ ক্ষেত্রে থাইরয়েড গ্রন্থি অতিরিক্ত হরমোন উৎপাদন করে, যা বিপাক ক্রিয়াকে বাড়িয়ে দেয়। ফলে ওজন কমে যাওয়া, অনিদ্রা, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়।
থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণে খাদ্যাভ্যাসের ভূমিকা
সঠিক খাদ্যাভ্যাস থাইরয়েডের কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নীচে থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণে সহায়ক কিছু খাবার এবং এড়িয়ে চলা উচিত এমন কিছু খাবারের তালিকা দেওয়া হলো:
থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণে সহায়ক খাবারসমূহ:
- আয়োডিন সমৃদ্ধ খাবার: আয়োডিন থাইরয়েড হরমোন উৎপাদনে সহায়ক। সামুদ্রিক মাছ, ডিম, দুধ এবং আয়োডিনযুক্ত লবণ আয়োডিনের ভালো উৎস।
- সেলেনিয়াম সমৃদ্ধ খাবার: সেলেনিয়াম থাইরয়েডের কার্যকারিতা উন্নত করে। ব্রাজিল নাট, সূর্যমুখীর বীজ, সামুদ্রিক খাবার এবং মুরগির মাংস সেলেনিয়াম সমৃদ্ধ।
- ভিটামিন ডি: থাইরয়েডের কার্যকারিতা উন্নত করতে ভিটামিন ডি সহায়ক। সূর্যালো, ডিমের কুসুম, এবং চর্বিযুক্ত মাছ থেকে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়।
- ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার: ম্যাগনেসিয়াম থাইরয়েড হরমোনের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে। পালং শাক, বাদাম, অ্যাভোকাডো, এবং সয়া পণ্য ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ।
- জিঙ্ক সমৃদ্ধ খাবার: জিঙ্ক থাইরয়েড হরমোনের সমন্বয়ে সাহায্য করে। ডালিম, গরুর মাংস, এবং শস্যসমূহ জিঙ্কের ভালো উৎস।
থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণে এড়িয়ে চলা উচিত খাবারসমূহ:
- সোয়া পণ্য: অত্যধিক পরিমাণে সোয়া গ্রহণ করলে থাইরয়েড হরমোন উৎপাদনে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
- ক্রুসিফেরাস শাকসবজি: বাঁধাকপি, ফুলকপি, ব্রকলি ইত্যাদি বেশি পরিমাণে খেলে থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতায় ব্যাঘাত ঘটতে পারে। তবে কম পরিমাণে বা রান্না করে খাওয়া যেতে পারে।
- গ্লুটেন: গ্লুটেনযুক্ত খাবার (যেমন গম, বার্লি) হাইপোথাইরয়েডিজম রোগীদের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে।
- প্রসেসড খাবার: অতিরিক্ত লবণ ও চিনি যুক্ত প্রসেসড খাবার থাইরয়েডের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এসব খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।
থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণে জীবনযাপনের পরামর্শ
সঠিক খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি কিছু জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা গেলে থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে:
- নিয়মিত ব্যায়াম: প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটি থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
- পর্যাপ্ত ঘুম: নিয়মিত ঘুম থাইরয়েডের কার্যকারিতা উন্নত করে।
- স্ট্রেস কমানো: মানসিক চাপ কমাতে যোগব্যায়াম ও মেডিটেশন সহায়ক হতে পারে।
- নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা: থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করা উচিত।
উপসংহার
থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণে খাদ্যাভ্যাসের গুরুত্ব অপরিসীম। সঠিক খাবার বাছাই এবং জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন আনলে থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব। তাই নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল হয়ে সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি।
ঠিকানা: পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।
ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬.