শ্বাসকষ্ট বা শ্বাস নিতে অসুবিধা হওয়া সাধারণত শারীরিক সমস্যার সঙ্গে যুক্ত একটি লক্ষণ। তবে অনেক সময় শ্বাসকষ্ট মানসিক রোগের ফলেও হতে পারে। মানসিক চাপ, উদ্বেগ, বা আতঙ্কের সময় শ্বাসকষ্ট অনুভূত হতে পারে এবং এটি ব্যক্তি বিশেষে ভিন্ন ভিন্নভাবে প্রকাশ পায়। মানসিক রোগের কারণে সৃষ্ট শ্বাসকষ্টকে প্রায়ই সাইকোজেনিক ডিসপনিয়া বা সাইকোজেনিক ব্রিদিং ডিজঅর্ডার বলা হয়।
শ্বাসকষ্ট এবং মানসিক রোগের কারণসমূহ
১. অ্যাংজাইটি (Anxiety): অ্যাংজাইটি বা উদ্বেগ হল এমন একটি মানসিক অবস্থা যেখানে ব্যক্তি অতিরিক্ত ভয় বা আতঙ্কে ভোগেন। এই অবস্থায় শরীরের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়াগুলোর মধ্যে অন্যতম হল শ্বাসের গতি বেড়ে যাওয়া। উদ্বেগের সময় শরীর অতিরিক্ত অক্সিজেন গ্রহণের চেষ্টা করে, যার ফলে শ্বাসকষ্ট বা শ্বাস নিতে অসুবিধা হতে পারে।
লক্ষণসমূহ:
- দ্রুত শ্বাস নেয়া বা শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া
- বুক ধড়ফড় করা
- মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার অনুভূতি
- বমি বমি ভাব

২. প্যানিক অ্যাটাক (Panic Attack): প্যানিক অ্যাটাক হল আকস্মিকভাবে আসা প্রবল ভয় বা আতঙ্কের একটি পর্ব, যা শারীরিক লক্ষণগুলির মাধ্যমে প্রকাশ পায়। এই অবস্থায় শ্বাসকষ্ট খুব সাধারণ একটি উপসর্গ। প্যানিক অ্যাটাকের সময় ব্যক্তি অনুভব করতে পারেন যে তার শ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বা তিনি শ্বাস নিতে পারছেন না।
লক্ষণসমূহ:
- শ্বাস নিতে প্রচণ্ড অসুবিধা
- বুক ব্যথা
- হার্টবিট দ্রুত হয়ে যাওয়া
- শারীরিকভাবে দুর্বল বা অসাড় অনুভব করা
৩. হাইপারভেন্টিলেশন (Hyperventilation): হাইপারভেন্টিলেশন হল এমন একটি অবস্থা যেখানে ব্যক্তি দ্রুত এবং গভীর শ্বাস নেন, যা শরীর থেকে অতিরিক্ত কার্বন ডাই অক্সাইড বের করে দেয়। এই অবস্থায় শরীর অক্সিজেনের অভাব অনুভব করে, যা শ্বাসকষ্টের কারণ হতে পারে।
লক্ষণসমূহ:
- অতিরিক্ত শ্বাস নিতে থাকা
- বুকের মধ্যে অস্বস্তি
- মাথা ঘোরা বা ক্লান্তি
- হাত-পা অসাড় বা কাঁপতে থাকা
৪. অবসাদ (Depression): অবসাদ বা ডিপ্রেশনের সময় শারীরিক অসুস্থতার সাথে সাথে শ্বাসকষ্টও দেখা দিতে পারে। অবসাদের কারণে মন ও শরীরের মধ্যে অসামঞ্জস্যতা দেখা দেয়, যা শ্বাসের সমস্যা তৈরি করতে পারে।
লক্ষণসমূহ:
- শ্বাস নিতে ক্লান্তি অনুভব করা
- সারাক্ষণ ক্লান্ত থাকা
- মনোযোগের অভাব
- নিজের মধ্যে হতাশা বা নিরাশা
করণীয়
মানসিক রোগের কারণে সৃষ্ট শ্বাসকষ্টের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি:
১. মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন: উদ্বেগ বা ডিপ্রেশনের মতো মানসিক সমস্যার চিকিৎসা করা জরুরি। থেরাপি, কাউন্সেলিং, বা প্রয়োজন অনুযায়ী মেডিকেশনের মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটানো যেতে পারে।
- শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণের কৌশল শিখুন: শ্বাস-প্রশ্বাসের সঠিক কৌশল শিখে তা প্রয়োগ করতে পারেন, যা শ্বাসকষ্ট কমাতে সাহায্য করবে। উদাহরণস্বরূপ, ধীর এবং গভীর শ্বাস নেওয়া, ৪-৭-৮ কৌশল, বা প্রগতিশীল শিথিলতা (Progressive Relaxation) অনুশীলন করা যেতে পারে।
- ধ্যান এবং যোগব্যায়াম: ধ্যান এবং যোগব্যায়াম মানসিক চাপ কমাতে এবং শ্বাসকষ্ট নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। এটি মানসিক প্রশান্তি আনার পাশাপাশি শরীরকে আরাম দেয়।
- সামাজিক সহায়তা: পরিবার এবং বন্ধুদের সহায়তা মানসিক চাপ এবং শ্বাসকষ্ট কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তাদের সাথে আপনার অনুভূতি শেয়ার করুন এবং প্রয়োজনে তাদের সাহায্য নিন।
- চিকিৎসকের পরামর্শ: যদি শ্বাসকষ্ট নিয়মিত এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। মানসিক রোগের কারণে সৃষ্ট শ্বাসকষ্টকে অবহেলা করা উচিত নয়, কারণ এটি শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
শ্বাসকষ্ট শুধুমাত্র শারীরিক সমস্যার লক্ষণ নয়, এটি মানসিক রোগের ফলেও হতে পারে। উদ্বেগ, প্যানিক অ্যাটাক, হাইপারভেন্টিলেশন, এবং ডিপ্রেশনের মতো মানসিক অবস্থার কারণে শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে। এই সমস্যাগুলোকে গুরুত্ব সহকারে নিয়ে সঠিক চিকিৎসা ও পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল হয়ে শ্বাসকষ্টের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।