প্রবাসী বাবা-মায়ের ব্যস্ততা: সন্তানদের মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে?

বিশ্বব্যাপী প্রবাসী বাবা-মায়েরা তাদের পরিবারের ভালো ভবিষ্যতের জন্য বিদেশে কাজ করতে যান। যদিও তাদের এই পরিশ্রম ও ত্যাগ তাদের পরিবারকে আর্থিকভাবে সচ্ছল করে তোলে, তবে প্রবাসী বাবা-মায়ের ব্যস্ততার কারণে সন্তানদের মানসিক স্বাস্থ্য বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। প্রবাসী পিতামাতা অনেক সময় তাদের কর্মব্যস্ততার জন্য সন্তানের প্রতি প্রয়োজনীয় মনোযোগ দিতে পারেন না, যা শিশুর মানসিক এবং আবেগিক স্বাস্থ্যে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে।

আজকের ব্লগে, আমরা আলোচনা করব প্রবাসী বাবা-মায়ের ব্যস্ততার কারণে সন্তানদের মানসিক স্বাস্থ্য কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং কীভাবে এই সমস্যাগুলি সমাধান করা সম্ভব।

১. মানসিক অবহেলা ও একাকীত্ব

প্রবাসী বাবা-মায়েরা অনেক সময় তাদের কর্মজীবনের জন্য সন্তানদের প্রতি পর্যাপ্ত মনোযোগ দিতে পারেন না। বাবা-মায়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণের অভাব শিশুদের মধ্যে একাকীত্বের অনুভূতি তৈরি করতে পারে। প্রবাসী বাবা-মায়েরা যখন দীর্ঘ সময়ের জন্য দূরে থাকেন, তখন শিশুরা অনেক সময় নিজেদের অবহেলিত ও একাকী অনুভব করে, যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

raju akon youtube channel subscribtion

এছাড়া, এই অভাব অনুভব করার কারণে শিশুদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের অভাব তৈরি হতে পারে। তারা মনে করতে পারে যে, তাদের প্রয়োজনীয়তা কিংবা অনুভূতিগুলির প্রতি বাবা-মায়ের কোনো গুরুত্ব নেই। এর ফলে শিশুর মধ্যে মানসিক চাপ, উদ্বেগ, এবং হতাশা সৃষ্টি হতে পারে।

২. পিতামাতার উপস্থিতির অভাব এবং আবেগিক সমর্থনের অভাব

শিশুরা সাধারণত বাবা-মায়ের কাছ থেকে আবেগিক সমর্থন, ভালোবাসা, এবং দেখাশোনা পেতে চায়। তবে প্রবাসী বাবা-মায়ের জন্য এই দায়িত্ব পালন করা অনেক সময় কঠিন হয়ে যায়। পিতামাতার শারীরিক উপস্থিতি না থাকলে শিশুর মধ্যে আবেগিক সমর্থনের অভাব দেখা দেয়।

একটি শিশু যখন তার বাবা-মাকে কাছে না পায়, তখন তাদের আবেগিক চাহিদা পূর্ণ হয় না, যা তাদের মানসিক অবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। শিশুরা যখন তাদের বাবা-মায়ের ভালোবাসা ও সহানুভূতি অনুভব করতে পারে না, তখন তারা অনিশ্চয়তা, উদ্বেগ এবং হতাশার মধ্যে পড়ে।

৩. পরিবারের মধ্যে সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব

প্রবাসী বাবা-মায়েরা যখন তাদের দেশে ফিরে এসে সন্তানদেরকে পালক হিসেবে পালন করেন, তখন অনেক সময় তারা নিজেদের সংস্কৃতি, মূল্যবোধ, এবং দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি অত্যন্ত গভীরভাবে প্রভাবিত থাকেন। তবে সন্তানরা যখন পশ্চিমা সমাজে বড় হয়ে ওঠে, তাদের জীবনের মধ্যে ব্রিটিশ বা পশ্চিমা সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ চলে আসে। এই দুটি সংস্কৃতির মধ্যে বিভাজন তৈরি হলে, বাবা-মায়ের সাথে সন্তানদের মধ্যে সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হতে পারে।

এমনকি শিশুদের মধ্যে তাদের পরিচিতি নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। যখন তারা মনে করে যে তাদের সাংস্কৃতিক পরিচয় দুটি সংস্কৃতির মাঝে বিভক্ত, তখন তাদের মধ্যে হতাশা, আত্মবিশ্বাসের অভাব, এবং সামাজিক সম্পর্কের সমস্যা তৈরি হতে পারে।

৪. শিক্ষা এবং পারফরমেন্সে প্রভাব

প্রবাসী বাবা-মায়েরা যখন দূরবর্তী স্থানে কাজ করেন, তখন তারা অনেক সময় তাদের সন্তানের শিক্ষাগত বিষয়গুলো নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করতে পারেন না। শিশুদের উপর পিতামাতার নিয়মিত নজরদারি, নির্দেশনা এবং সহায়তা না থাকলে তাদের শিক্ষাগত পারফরমেন্সে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। শিশুদের মধ্যে এক ধরনের অনিয়মিত পড়াশোনার অভ্যেস এবং পিতামাতার প্রতিদিনের নির্দেশনা এবং গাইডলাইন না থাকলে, তাদের শিখন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

এই সমস্যা তাদের আত্মবিশ্বাস এবং স্কুলের প্রতি আগ্রহ কমিয়ে দেয়। যখন শিশুরা পিতামাতার কাছ থেকে প্রয়োজনীয় গাইডলাইন এবং সহায়তা পায় না, তখন তাদের জন্য নিজস্ব শিক্ষা এবং উন্নতির পথ খোঁজা কঠিন হয়ে পড়ে, যা মানসিক চাপ এবং হতাশার কারণ হতে পারে।

৫. দৃষ্টিভঙ্গির অমিল এবং শাসন পদ্ধতির পার্থক্য

প্রবাসী বাবা-মায়েরা অনেক সময় নিজেদের দেশে ফিরে আসা সংস্কৃতি এবং নৈতিকতা অনুসরণ করেন, যখন শিশুরা ব্রিটিশ সমাজের শাসন পদ্ধতি এবং আচরণের মধ্যে বড় হয়ে ওঠে। এই সাংস্কৃতিক পার্থক্য এবং দৃষ্টিভঙ্গির অমিল বাবা-মায়ের সাথে সন্তানদের সম্পর্কের মধ্যে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।

এখনকার প্রজন্মের শিশুরা অনেক সময় বাবা-মায়ের কাছ থেকে কড়া শাসন বা নিয়ম-নীতি আশা করে না, তারা চায় নিজেদের স্বাধীনতা এবং ব্রিটিশ সমাজের শিথিলতা। তাই, যখন বাবা-মা তাদের সন্তানদের শাসন করতে গিয়ে নিজেদের দেশীয় সংস্কৃতির প্রভাব প্রয়োগ করে, তখন তা সন্তানদের মধ্যে ক্ষোভ এবং মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

৬. সমাধান: সঠিক মানসিক সহায়তা এবং পিতামাতার সহানুভূতি

এই সমস্যা মোকাবেলা করার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল পিতামাতার সহানুভূতি এবং আন্তরিক মনোযোগ। প্রবাসী বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের প্রতি মনোযোগী হতে হবে এবং তাদের আবেগিক চাহিদাগুলি পূরণ করতে হবে। তাদের শারীরিকভাবে উপস্থিত না থাকলেও, ভার্চুয়াল মাধ্যমে সঙ্গী হয়ে তাদের পাশে দাঁড়ানো জরুরি।

এছাড়া, শিশুরা যদি মানসিক চাপ বা উদ্বেগ অনুভব করে, তবে তারা একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। আমি, রাজু আকন, অনলাইন কাউন্সেলিং সেবা প্রদান করে থাকি, যাতে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে আপনার সন্তান বা আপনি সহায়ক এবং গোপনীয় সহায়তা পেতে পারেন।

আপনি যদি মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা চান, তবে দয়া করে rajuakon.com/contact পরিদর্শন করুন এবং সাহায্য গ্রহণ করুন।

প্রবাসী বাবা-মায়ের ব্যস্ততা সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, তবে সঠিক সহায়তা, মনোযোগ এবং সহানুভূতির মাধ্যমে এই সমস্যাগুলি সমাধান করা সম্ভব। প্রবাসী বাবা-মায়েরা যদি তাদের সন্তানদের প্রতি এক ধরনের ভালোবাসা ও সহানুভূতি প্রদর্শন করতে পারেন, তবে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নতি করতে পারে এবং তারা একটি সুস্থ এবং আত্মবিশ্বাসী জীবন যাপন করতে সক্ষম হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top