ফোবিয়ার জন্য সিবিটি থেরাপির (CBT) ৮টি টেকনিক যা নিজের উপর এপ্লাই করা যায়

ফোবিয়া হল কোনো নির্দিষ্ট বস্তু, পরিস্থিতি বা কার্যকলাপের প্রতি অত্যাধিক এবং অযৌক্তিক ভয়। এই সমস্যার জন্য কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি (CBT) অত্যন্ত কার্যকর একটি চিকিৎসা পদ্ধতি। সিবিটি এমন কিছু কৌশল শিখিয়ে দেয়, যা মানুষ নিজের উপর প্রয়োগ করতে পারে এবং ধীরে ধীরে তার ভয়ের উৎসকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখতে পারে।

সিবিটির (CBT) কয়েকটি কার্যকর টেকনিক যা ফোবিয়ার চিকিৎসায় ব্যবহার করা যেতে পারে:

১. গ্র্যাজুয়েটেড এক্সপোজার থেরাপি (Graduated Exposure Therapy)

  • পদ্ধতি: এটি ধাপে ধাপে নিজের ভয়ের মুখোমুখি হওয়ার একটি কৌশল। ছোট ছোট পদক্ষেপে ভয়াবহ পরিস্থিতি বা বস্তুগুলোর সাথে পরিচিত হয়ে সেই ভয় ধীরে ধীরে দূর করা হয়। প্রথমে সামান্য ভয় জাগানো পরিস্থিতির মুখোমুখি হন এবং পরে আরো ভয়াবহ পরিস্থিতিতে এগিয়ে যান।
  • কিভাবে করবেন: ভয়ের কারণগুলোকে বিভিন্ন স্তরে ভাগ করুন। প্রথমে সবচেয়ে কম ভয় জাগানো স্তর থেকে শুরু করুন। ধীরে ধীরে আরও চ্যালেঞ্জিং স্তরের দিকে যান।

raju akon youtube channel subscribtion

২. কগনিটিভ রিস্ট্রাকচারিং (Cognitive Restructuring)

  • পদ্ধতি: এটি হলো নেতিবাচক বা অযৌক্তিক চিন্তাগুলিকে চিহ্নিত করা এবং সেগুলোকে যৌক্তিক চিন্তায় রূপান্তরিত করা। এতে মনোভাব ও প্রতিক্রিয়া বদলানো হয়।
  • কিভাবে করবেন: প্রথমে চিন্তা করুন যে আপনি কেন ভয় পাচ্ছেন এবং সেই চিন্তাটি কতটা বাস্তবসম্মত। এবার সেই নেতিবাচক চিন্তাকে চ্যালেঞ্জ করুন এবং এটি যৌক্তিকভাবে পুনর্গঠন করুন। যেমন, “আমি ভয় পাচ্ছি কারণ আমি উঁচু স্থানে উঠতে পারব না,” এটাকে পরিবর্তন করে বলা যেতে পারে, “আমার সক্ষমতা আছে এবং আমি ধীরে ধীরে উঁচু স্থানে উঠতে পারি।”

৩. রিল্যাক্সেশন টেকনিকস (Relaxation Techniques)

  • পদ্ধতি: ফোবিয়ার সময় শরীরে যে স্ট্রেস বা আতঙ্ক সৃষ্টি হয়, তা কমাতে রিল্যাক্সেশন টেকনিকস ব্যবহার করা হয়। এটি শারীরিক ও মানসিক উভয় ক্ষেত্রেই কাজ করে।
  • কিভাবে করবেন: বিভিন্ন শিথিলকরণ কৌশল, যেমন ডিপ ব্রিদিং (গভীর শ্বাস গ্রহণ), প্রগ্রেসিভ মাসল রিল্যাক্সেশন, অথবা মেডিটেশন চর্চা করুন। ভয়ের মুখোমুখি হলে ধীরে ধীরে এবং গভীরভাবে শ্বাস নেওয়া, আপনার শরীরকে আরামদায়ক করে তোলে এবং আপনার ভয়ের মাত্রা কমিয়ে দেয়।

৪. সেলফ মনিটরিং (Self-Monitoring)

  • পদ্ধতি: নিজেকে পর্যবেক্ষণ করার মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনার কোন পরিস্থিতিতে ফোবিয়া সক্রিয় হয় এবং আপনি কিভাবে সাড়া দেন। এটি চিন্তা এবং প্রতিক্রিয়ার একটি নোট রাখার প্রক্রিয়া।
  • কিভাবে করবেন: একটি জার্নাল বা নোটবুক রাখুন, যেখানে আপনি লিখে রাখবেন যে কোন কোন পরিস্থিতিতে আপনার ভয় সৃষ্টি হয়, তখন আপনি কী চিন্তা করেন এবং কিভাবে প্রতিক্রিয়া দেখান। পরে সেই পরিস্থিতিগুলো বিশ্লেষণ করে সমাধান খুঁজুন।

৫. ডিসেনসিটাইজেশন (Systematic Desensitization)

  • পদ্ধতি: এটি ধীরে ধীরে আপনার ভয়ের প্রতি আপনার সংবেদনশীলতা কমানোর প্রক্রিয়া। এটি এক্সপোজার থেরাপির একটি বিশেষ রূপ, যেখানে ভয়ের সঙ্গে একযোগে রিল্যাক্সেশন কৌশল ব্যবহার করা হয়।
  • কিভাবে করবেন: ফোবিয়া সম্পর্কিত পরিস্থিতির একটি তালিকা তৈরি করুন এবং সবচেয়ে কম ভয়াবহ থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে বেশি ভয়াবহতার দিকে অগ্রসর হোন। ভয়াবহ পরিস্থিতিতে নিজেকে এক্সপোজ করার সময় রিল্যাক্সেশন কৌশল ব্যবহার করুন।

৬. প্রতিক্রিয়া প্রতিরোধ (Response Prevention)

  • পদ্ধতি: ভয়ের সময় যেসব স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া আসে, যেমন এড়িয়ে যাওয়া বা পালানো, তা প্রতিরোধ করার জন্য নিজেকে প্রশিক্ষিত করা।
  • কিভাবে করবেন: যখনই আপনি ভয় পাবেন, তখন পালানোর বা পরিস্থিতি এড়ানোর পরিবর্তে সচেতনভাবে স্থির থাকুন এবং নিজের প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করুন। ধীরে ধীরে আপনার ভয়ের প্রভাব কমে আসবে।

৭. পজিটিভ ভিজ্যুয়ালাইজেশন (Positive Visualization)

  • পদ্ধতি: নিজের মনে এমন একটি ছবি তৈরি করা, যেখানে আপনি ভয়াবহ পরিস্থিতি সফলভাবে মোকাবিলা করছেন। এটি ফোবিয়া কমাতে সাহায্য করতে পারে।
  • কিভাবে করবেন: প্রতিদিন কিছু সময় নিন এবং কল্পনা করুন যে আপনি আপনার ফোবিয়ার মুখোমুখি হচ্ছেন এবং সফলভাবে সেটি অতিক্রম করছেন। এই চিত্রগুলো আপনার মনকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করবে।

৮. সোশ্যাল সাপোর্ট (Social Support)

  • পদ্ধতি: পরিবার, বন্ধু বা সাপোর্ট গ্রুপের সাথে আপনার ভয়ের অভিজ্ঞতা শেয়ার করা এবং তাদের কাছ থেকে মানসিক সমর্থন পাওয়া।
  • কিভাবে করবেন: এমন মানুষের সাথে যোগাযোগ রাখুন যারা আপনাকে সমর্থন করে। তাদের সাথে খোলামেলা কথা বলুন এবং আপনার চিন্তা এবং ভয় শেয়ার করুন।

উপসংহার

ফোবিয়া থেকে মুক্তি পেতে সিবিটির (CBT) বিভিন্ন কৌশলগুলো অত্যন্ত কার্যকরী হতে পারে। তবে, এগুলো নিজের উপর প্রয়োগ করার সময় ধৈর্য ও নিয়মিত চর্চা প্রয়োজন। ফোবিয়ার জন্য যদি সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে একজন পেশাদার থেরাপিস্টের পরামর্শ নেওয়াও বাঞ্ছনীয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top