মাদকাসক্তির জন্য সিবিটি থেরাপির (CBT) ৮টি টেকনিক যা নিজের উপর এপ্লাই করা যায়

মাদকাসক্তি একটি মানসিক ও শারীরিক নির্ভরশীলতা সৃষ্টি করে, যা ব্যক্তি ও তার চারপাশের মানুষের জীবনকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি (CBT) মাদকাসক্তির চিকিৎসায় অত্যন্ত কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। এটি আপনার নেতিবাচক চিন্তা, আবেগ, এবং আচরণ পরিবর্তনে সাহায্য করে, যা মাদকাসক্তি থেকে বেরিয়ে আসার ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।

মাদকাসক্তির জন্য সিবিটির কয়েকটি কার্যকর টেকনিক

১. কগনিটিভ রিস্ট্রাকচারিং (Cognitive Restructuring)

  • পদ্ধতি: মাদকাসক্তি তৈরি করে এমন নেতিবাচক চিন্তা এবং বিশ্বাসগুলো চিহ্নিত করে সেগুলোকে পরিবর্তন করা।
  • কিভাবে করবেন: আপনার মাদক গ্রহণের প্রতি নেতিবাচক বিশ্বাসগুলো চিহ্নিত করুন, যেমন “মাদক ছাড়া আমি থাকতে পারব না” বা “মাদক ছাড়া আমি স্বাভাবিক বোধ করি না”। এরপর এই চিন্তাগুলোকে চ্যালেঞ্জ করুন এবং বাস্তবসম্মত ও ইতিবাচক চিন্তায় পরিবর্তন করুন। উদাহরণস্বরূপ, “মাদক ছাড়া আমি আরও ভালো ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে পারব।”

raju akon youtube channel subscribtion

২. ট্রিগার ম্যানেজমেন্ট (Trigger Management)

  • পদ্ধতি: মাদক গ্রহণের জন্য উদ্দীপনা তৈরি করা ট্রিগার বা কারণগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো থেকে নিজেকে দূরে রাখা।
  • কিভাবে করবেন: মাদকাসক্তির ট্রিগারগুলো চিহ্নিত করুন—যেমন কোনো নির্দিষ্ট পরিবেশ, মানুষ, বা আবেগ। যখন এই ট্রিগারগুলো সামনে আসে, তখন নিজেকে সচেতন করুন এবং সেই পরিস্থিতি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। যদি ট্রিগারগুলোর মুখোমুখি হন, তাহলে ইতিবাচক বিকল্প আচরণ তৈরি করার চেষ্টা করুন।

৩. ইমপালস নিয়ন্ত্রণ (Impulse Control)

  • পদ্ধতি: হঠাৎ করে মাদক গ্রহণের প্রবণতা বা ইচ্ছাকে দমন করার কৌশল।
  • কিভাবে করবেন: মাদক গ্রহণের ইচ্ছা অনুভব করলে কিছু সময় অপেক্ষা করুন। ধীরে ধীরে নিজেকে শান্ত করুন এবং নিজেকে প্রশ্ন করুন, “আমি কেন মাদক গ্রহণ করতে চাই?” এবং “এর পরিণাম কী হতে পারে?” নিজেকে সময় দিন এবং ইচ্ছার শক্তি ব্যবহার করে সেই ইচ্ছা থেকে নিজেকে মুক্ত করার চেষ্টা করুন।

৪. বিহেভিয়ারাল এক্সপোজার (Behavioral Exposure)

  • পদ্ধতি: মাদকাসক্তির কারণে এড়িয়ে চলা পরিস্থিতি বা কাজগুলোতে ধীরে ধীরে নিজেকে অভ্যস্ত করা।
  • কিভাবে করবেন: ছোট পদক্ষেপে মাদকবিহীন জীবনযাপন শুরু করুন। প্রথমে সহজ কাজ বা মাদকাসক্তির সাথে সম্পর্কিত পরিবেশ এড়িয়ে চলুন এবং ধীরে ধীরে মাদকবিহীন পরিস্থিতিতে নিজেকে অভ্যস্ত করুন। এর ফলে আপনি ধীরে ধীরে মাদকবিহীন জীবনযাপন করতে সক্ষম হবেন।

৫. স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট (Stress Management)

  • পদ্ধতি: স্ট্রেস মাদক গ্রহণের একটি বড় কারণ হতে পারে। সিবিটির স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট কৌশলগুলো মাদকাসক্তি কমাতে সাহায্য করে।
  • কিভাবে করবেন: প্রতিদিনের স্ট্রেস কমানোর জন্য মাইন্ডফুলনেস, ধ্যান, শ্বাস-প্রশ্বাসের নিয়ন্ত্রণ, বা যোগব্যায়ামের মতো কৌশল ব্যবহার করুন। এই পদ্ধতিগুলো আপনাকে মাদক ছাড়া মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে সাহায্য করবে।

৬. রিলাপ্স প্রিভেনশন (Relapse Prevention)

  • পদ্ধতি: মাদকাসক্তি পুনরায় ফিরে আসা রোধ করতে কার্যকর কৌশল ব্যবহার করা।
  • কিভাবে করবেন: মাদকাসক্তি পুনরায় শুরু হতে পারে এমন লক্ষণগুলো চিহ্নিত করুন এবং সেই মুহূর্তে কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে তার জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরি করুন। উদাহরণস্বরূপ, মাদক গ্রহণের ইচ্ছা অনুভব করলে একটি বিকল্প কাজ শুরু করুন, যেমন হাঁটাহাঁটি করা বা বন্ধুর সাথে কথা বলা।

৭. আবেগ নিয়ন্ত্রণ কৌশল (Emotion Regulation Techniques)

  • পদ্ধতি: মাদকাসক্তির কারণে সৃষ্ট আবেগগত সমস্যাগুলো নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এই কৌশলগুলো প্রয়োগ করা হয়।
  • কিভাবে করবেন: আবেগ চিহ্নিত করুন এবং সেই আবেগের প্রতি সঠিক প্রতিক্রিয়া জানানোর চেষ্টা করুন। যখন মাদক গ্রহণের প্রবণতা তৈরি হবে, তখন তার মূলে থাকা আবেগগুলো চিহ্নিত করুন এবং সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিন।

৮. রিওয়ার্ড সিস্টেম (Reward System)

  • পদ্ধতি: মাদকাসক্তি থেকে মুক্ত থাকার জন্য নিজের জন্য একটি রিওয়ার্ড সিস্টেম তৈরি করা।
  • কিভাবে করবেন: মাদক গ্রহণ না করলে নিজেকে পুরস্কৃত করার একটি পদ্ধতি তৈরি করুন। এটি হতে পারে আপনার পছন্দের খাবার খাওয়া, প্রিয় সিনেমা দেখা, বা নিজেকে কিছু ভালো কিছু উপহার দেওয়া। পুরস্কার পেতে হলে মাদক থেকে দূরে থাকতে হবে, এমন একটি ইতিবাচক প্রণোদনা তৈরি করুন।

উপসংহার

মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সিবিটি একটি কার্যকর পদ্ধতি। এই কৌশলগুলো নিজের ওপর প্রয়োগ করে আপনি মাদকাসক্তির নেতিবাচক প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে পারেন। তবুও, একজন পেশাদার থেরাপিস্টের সহযোগিতা নিলে এটি আরও কার্যকর হতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top