শিশুর টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ: কারণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধের উপায়

শিশুর টাইফয়েড জ্বর একটি গুরুতর ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ, যা Salmonella Typhi ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়। এটি সাধারণত দূষিত খাবার ও পানির মাধ্যমে ছড়ায়। বাংলাদেশের মতো দেশে টাইফয়েড শিশুদের মধ্যে একটি সাধারণ সমস্যা, যা সময়মতো চিকিৎসা না করলে গুরুতর জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। এই ব্লগে আমরা টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ, কারণ, চিকিৎসা এবং প্রতিরোধ সম্পর্কে বিস্তারিত জানব।

শিশুর টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ

টাইফয়েডের লক্ষণগুলো ধীরে ধীরে প্রকাশ পায় এবং একেক শিশুর ক্ষেত্রে আলাদা হতে পারে।

১. উচ্চ জ্বর

  • ১০১° থেকে ১০৪° ফারেনহাইট পর্যন্ত জ্বর থাকতে পারে।
  • জ্বর সাধারণত দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়।

২. অতিরিক্ত ক্লান্তি ও দুর্বলতা

  • শিশুরা খুবই দুর্বল ও ক্লান্ত অনুভব করে।
  • খেলাধুলা বা স্বাভাবিক কার্যকলাপ করতে অক্ষম হয়ে পড়ে।

৩. পেটের ব্যথা ও অস্বস্তি

  • পেটে ব্যথা, বিশেষত নাভির আশেপাশে।
  • অনেক সময় পেটে গ্যাস জমে যায়।

৪. অবসাদ এবং খিটখিটে মেজাজ

  • শিশুরা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি খিটখিটে হয়ে যায়।
  • খাওয়ায় অনীহা ও মন খারাপ থাকতে পারে।

৫. ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য

  • কিছু ক্ষেত্রে পাতলা পায়খানা হতে পারে।
  • অন্যদিকে, অনেক শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়।

৬. ত্বকের র‌্যাশ

  • শরীরে লালচে ছোট ছোট দাগ (Rose Spots) দেখা দিতে পারে।
  • এই র‌্যাশ সাধারণত ২-৩ দিনের বেশি স্থায়ী হয় না।

৭. বমি বমি ভাব ও বমি

  • শিশুরা খাবার খাওয়ার পর বমি বমি অনুভব করে বা বমি করে।

৮. ক্ষুধামন্দা

  • শিশুদের খাওয়ার রুচি কমে যায় এবং তারা খাবার এড়িয়ে চলে।

৯. স্নায়বিক সমস্যা

  • জ্বরের কারণে শিশুর মানসিক অবস্থা পরিবর্তিত হতে পারে।
  • মাথা ঘোরা বা অস্পষ্টভাবে কথা বলার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।

শিশুর টাইফয়েড জ্বরের কারণ

  • দূষিত পানি বা খাবার খাওয়া।
  • অপরিষ্কার হাতে খাওয়া।
  • স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলা।
  • টাইফয়েড আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা।

শিশুর টাইফয়েড জ্বরের চিকিৎসা

১. ডাক্তারি পরামর্শ

  • চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ সেবন করানো উচিত নয়।
  • টাইফয়েড শনাক্ত করার জন্য ব্লাড টেস্ট (Widal Test) বা স্টুল কালচার প্রয়োজন হতে পারে।

২. অ্যান্টিবায়োটিক

  • Salmonella Typhi সংক্রমণ কমানোর জন্য চিকিৎসক অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে থাকেন।
  • ওষুধ নিয়মমতো শেষ করতে হবে, যদিও লক্ষণগুলো আগে থেকেই কমে যায়।

৩. তরল ও পুষ্টিকর খাবার

  • শিশুদের পর্যাপ্ত পানি, ডাবের পানি এবং তরল খাবার দিতে হবে।
  • হালকা স্যুপ, ভাতের মাড় এবং ফলের রস দেওয়া যেতে পারে।

৪. বিশ্রাম

  • শিশুকে সম্পূর্ণ বিশ্রাম দিতে হবে।
  • জ্বর কমানোর জন্য শিশুকে হালকা পোশাক পরানো উচিত।

টাইফয়েড প্রতিরোধের উপায়

১. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা

  • খাবার ও পানির শুদ্ধতা নিশ্চিত করতে হবে।
  • হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

২. সঠিকভাবে খাবার রান্না করা

  • খাবার ভালোভাবে রান্না করে শিশুদের দিতে হবে।
  • কাঁচা খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত।

৩. টিকা প্রদান

  • টাইফয়েড প্রতিরোধী টিকা (Typhoid Vaccine) শিশুর জন্য সঠিক বয়সে দেওয়া উচিত।

৪. পরিষ্কার পানির ব্যবহার

  • ফিল্টার করা বা ফুটানো পানি পান করানো উচিত।
  • শিশুকে বাইরের পানি থেকে দূরে রাখতে হবে।

৫. দূষণ এড়িয়ে চলা

  • রাস্তায় বিক্রি করা খাবার বা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।

শিশুর টাইফয়েড নিয়ে অভিভাবকদের সতর্কতা

  • শিশুর যদি ৩ দিনের বেশি জ্বর থাকে তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
  • শিশুর খাওয়ার রুচি একেবারে কমে গেলে বা ডিহাইড্রেশনের লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে হাসপাতালে নিয়ে যান।
  • ওষুধ বন্ধ করা বা ডোজ কমানো উচিত নয়।

উপসংহার

শিশুর টাইফয়েড জ্বর একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা, যা সময়মতো চিহ্নিত ও চিকিৎসা না করলে জীবনহানির কারণ হতে পারে। সচেতনতা, সঠিক পুষ্টি, এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার মাধ্যমে এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top