রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার লক্ষণ: কারণ ও প্রতিকার

হিমোগ্লোবিন হলো এক ধরনের প্রোটিন, যা রক্তের লোহিত কণিকায় থাকে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন পরিবহন করে। শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ হিমোগ্লোবিন না থাকলে, শরীর সঠিকভাবে অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে না, যার ফলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গেলে এটিকে অ্যানিমিয়া বলা হয়। অ্যানিমিয়া একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এটি নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার কারণ:

১. আয়রনের অভাব:
আয়রন হিমোগ্লোবিনের অন্যতম প্রধান উপাদান। যদি শরীরে আয়রনের অভাব হয়, তাহলে হিমোগ্লোবিনের উৎপাদন কমে যায়, যার ফলে অ্যানিমিয়া দেখা দেয়।

raju akon youtube channel subscribtion

২. ভিটামিন বি১২ এর অভাব:
হিমোগ্লোবিন তৈরিতে ভিটামিন বি১২ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই ভিটামিনের অভাব হলে শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যেতে পারে।

৩. ফলিক এসিডের ঘাটতি:
ফলিক এসিডও রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয়। এর অভাব হলে রক্তের লোহিত কণিকা কমে যেতে পারে।

৪. রক্তপাত:
দুর্ঘটনা, শল্যচিকিৎসা বা অভ্যন্তরীণ কোনো সমস্যা যেমন পেপটিক আলসার, হেমোরয়েড ইত্যাদি থেকে অতিরিক্ত রক্তপাত হলে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ হ্রাস পায়।

৫. হাড়ের মজ্জা সমস্যা:
রক্তের কণিকা উৎপাদনের প্রধান উৎস হলো হাড়ের মজ্জা। হাড়ের মজ্জায় যদি কোনো সমস্যা থাকে, তবে পর্যাপ্ত হিমোগ্লোবিন উৎপাদিত হয় না।

রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার লক্ষণ:

১. অতিরিক্ত ক্লান্তি ও দুর্বলতা:
শরীরে পর্যাপ্ত অক্সিজেন না পৌঁছানোর কারণে সব সময় ক্লান্তি বা দুর্বলতা অনুভব করা অ্যানিমিয়ার অন্যতম প্রধান লক্ষণ।

২. শ্বাসকষ্ট:
শরীরে অক্সিজেনের অভাব হলে দ্রুত শ্বাসকষ্ট হতে পারে, বিশেষ করে শারীরিক পরিশ্রমের সময়।

৩. হৃদস্পন্দনের গতি বেড়ে যাওয়া:
হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি থাকলে হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়, কারণ শরীর অক্সিজেনের অভাব পূরণের চেষ্টা করে।

৪. মাথা ঘোরা ও মাথাব্যথা:
মস্তিষ্ক পর্যাপ্ত অক্সিজেন না পেলে মাথা ঘোরা বা মাথাব্যথা অনুভব হতে পারে।

৫. হাত ও পায়ের ঠান্ডাভাব:
শরীরে রক্ত সঞ্চালন ঠিকমতো না হলে হাত ও পায়ে ঠান্ডা ভাব অনুভূত হয়।

৬. ত্বকের ফ্যাকাশে ভাব:
রক্তে হিমোগ্লোবিনের অভাব হলে ত্বক ফ্যাকাশে দেখাতে পারে, বিশেষ করে মুখ, হাত ও নখে।

হিমোগ্লোবিন কমে গেলে করণীয়:

১. আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া:
আয়রন সমৃদ্ধ খাবার যেমন পালং শাক, মাংস, ডিম, ডাল ইত্যাদি খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ানো যায়। এছাড়া আয়রন সাপ্লিমেন্টও নেওয়া যেতে পারে, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী।

২. ভিটামিন বি১২ এবং ফলিক এসিড গ্রহণ:
দুধ, ডিম, মাছ, মাংস ইত্যাদি খাবার ভিটামিন বি১২ এর ভালো উৎস। ফলিক এসিডের জন্য পালং শাক, ব্রকলি, সবুজ শাকসবজি এবং ফলমূল খাওয়া উচিত।

৩. ভিটামিন সি গ্রহণ:
ভিটামিন সি আয়রন শোষণে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন লেবু, কমলা, আমলকী, টমেটো ইত্যাদি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত।

৪. রক্ত পরীক্ষা করা:
যদি হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে তৎক্ষণাৎ রক্ত পরীক্ষা করে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা চেক করা উচিত।

৫. ডাক্তারের পরামর্শ:
দীর্ঘদিন ধরে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি দেখা দিলে এবং খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনেও উন্নতি না হলে, ডাক্তারি পরামর্শ গ্রহণ করা জরুরি। প্রয়োজনে আয়রন ইনজেকশন বা অন্য কোনো চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে।

হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর কিছু ঘরোয়া উপায়:

১. চিনাবাদাম ও খেজুর খাওয়া:
চিনাবাদাম ও খেজুর আয়রন সমৃদ্ধ এবং হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সহায়ক।

২. তাহিনীর পানি পান করা:
তাহিনী (তিলের বীজ) আয়রনের ভালো উৎস। তিলের বীজ ভিজিয়ে সেই পানি প্রতিদিন পান করলে হিমোগ্লোবিন বাড়ে।

৩. অমলকী এবং মধু:
অমলকী এবং মধু মিশিয়ে খাওয়া হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর একটি ভালো উপায়।

রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়া শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতায় বিঘ্ন ঘটায়। তাই সঠিক খাবার এবং চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত। যদি কোনো লক্ষণ দেখা দেয়, তবে দেরি না করে দ্রুত রক্ত পরীক্ষা এবং ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।

📌 ঠিকানা:

পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।

📞 ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬।

✎ রাহু আকন, কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top