চোরা জ্বর (Typhoid Fever) একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রামক রোগ যা সাধারণত দূষিত পানি বা খাদ্যের মাধ্যমে ছড়ায়। বাংলাদেশে এটি একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা। চোরা জ্বরের সঠিকভাবে নির্ণয় এবং প্রাথমিক চিকিৎসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি সময়মতো শনাক্ত না হলে জটিলতা তৈরি করতে পারে।
এই আর্টিকেলে আমরা চোরা জ্বরের লক্ষণ, কারণ এবং করণীয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব, যা আপনার এবং আপনার পরিবারের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সহায়ক হবে।
চোরা জ্বরের প্রধান কারণ
চোরা জ্বর Salmonella Typhi নামক ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়। এটি সাধারণত নিম্নলিখিত কারণগুলোর মাধ্যমে সংক্রমিত হয়:
- দূষিত পানি বা খাবার গ্রহণ।
- ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার অভাব।
- দূষিত পরিবেশে তৈরি রাস্তার খাবার।
- সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা।
চোরা জ্বরের লক্ষণ
চোরা জ্বর সাধারণত ধীরে ধীরে শুরু হয় এবং রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে লক্ষণগুলো সহজে বোঝা যায় না। তবে কয়েকদিন পর স্পষ্ট লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে শুরু করে।
১. দীর্ঘস্থায়ী জ্বর
চোরা জ্বরের অন্যতম প্রধান লক্ষণ হলো দীর্ঘদিন ধরে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া, যা ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠতে পারে।
২. দুর্বলতা ও ক্লান্তি
রোগী সাধারণত অবসন্নতা এবং শারীরিক দুর্বলতার অভিযোগ করে।
৩. মাথাব্যথা
চোরা জ্বরে নিয়মিত এবং তীব্র মাথাব্যথা দেখা দিতে পারে।
৪. পেটের সমস্যা
- পেটে ব্যথা।
- ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য।
- ক্ষুধামন্দা।
৫. ত্বকে র্যাশ
রোগীর ত্বকে লালচে দাগ বা র্যাশ দেখা দিতে পারে।
৬. শারীরিক ওজন কমে যাওয়া
চোরা জ্বরে দীর্ঘমেয়াদে রোগীর ওজন হ্রাস পেতে পারে।
৭. বিভ্রান্তি বা বমি বমি ভাব
কিছু রোগীর ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি বা বমি বমি ভাব দেখা দেয়।
চোরা জ্বরের ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠী
- শিশু এবং বৃদ্ধরা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
- কম পরিচ্ছন্ন এলাকায় বসবাসকারী ব্যক্তিরা।
- দূষিত পানি বা অপরিষ্কার খাদ্য গ্রহণকারীরা।
চোরা জ্বর চেনার পরীক্ষাগুলো
চোরা জ্বর নিশ্চিত করার জন্য নিম্নলিখিত পরীক্ষাগুলো করা হয়:
- ওয়াইডাল টেস্ট: Typhoid নিশ্চিত করার জন্য এটি একটি সাধারণ রক্ত পরীক্ষা।
- স্টুল কালচার: ব্যাকটেরিয়া শনাক্ত করতে ব্যবহার হয়।
- ব্লাড কালচার: সুনির্দিষ্ট ফলাফল দেয়।
চোরা জ্বর প্রতিরোধের উপায়
১. পরিচ্ছন্ন খাবার ও পানি গ্রহণ
- শুধুমাত্র ফুটানো বা ফিল্টার করা পানি পান করুন।
- রাস্তার খাবার এড়িয়ে চলুন।
২. ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য পরিচ্ছন্নতা
- প্রতিবার খাবার খাওয়ার আগে এবং টয়লেট ব্যবহারের পর ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিন।
৩. ভ্যাকসিন গ্রহণ
চোরা জ্বর প্রতিরোধে Typhoid Vaccine গ্রহণ করা যেতে পারে।
৪. দূষিত পরিবেশ এড়িয়ে চলা
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশে থাকুন এবং খাদ্যবস্তু ঢেকে রাখুন।
চোরা জ্বরে করণীয়
১. দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
২. প্রচুর পরিমাণে বিশ্রাম করুন।
৩. তরলজাতীয় খাবার (যেমন স্যুপ, ডাবের পানি) গ্রহণ করুন।
৪. চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করুন।
৫. জ্বর নিয়ন্ত্রণে ঠাণ্ডা পানির ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর মুছুন।
উপসংহার
চোরা জ্বর একটি গুরুতর সংক্রমণ যা সময়মতো চিকিৎসা না করলে মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এর লক্ষণগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।