কলেরা একটি সংক্রামক ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ, যা সাধারণত দূষিত পানি ও খাবারের মাধ্যমে ছড়ায়। এটি মূলত Vibrio cholerae ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের ফলে হয় এবং মারাত্মক ডায়রিয়ার কারণ হতে পারে। সময়মতো চিকিৎসা না হলে এটি প্রাণঘাতী হতে পারে। তাই এর লক্ষণ সম্পর্কে জানা জরুরি, যাতে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করা সম্ভব হয়।
কলেরার প্রধান লক্ষণ
১. প্রচণ্ড ডায়রিয়া
- হঠাৎ শুরু হওয়া পাতলা পানিযুক্ত ডায়রিয়া হয়।
- এটি “রাইস ওয়াটার স্টুল” নামে পরিচিত, কারণ এটি দেখতে চাল ধোয়া পানির মতো।
- রোগী দিনে ১০-১৫ বার বা তারও বেশি বার পায়খানা করতে পারে।
- শরীর দ্রুত পানি ও লবণ হারায়, যা ডিহাইড্রেশনের কারণ হতে পারে।
২. বমি বমি ভাব ও বমি
- সংক্রমণের প্রাথমিক পর্যায়ে বমি বমি ভাব থাকতে পারে।
- রোগ গুরুতর হলে একাধিকবার বমি হতে পারে, যা শরীরে পানিশূন্যতা বাড়ায়।
- এটি খাদ্য গ্রহণে অরুচি সৃষ্টি করতে পারে।
৩. তীব্র পানিশূন্যতা (ডিহাইড্রেশন)
- শরীরে প্রচুর পরিমাণ পানি ও লবণ হ্রাস পাওয়ার কারণে দ্রুত ডিহাইড্রেশন দেখা দেয়।
- লক্ষণসমূহ:
- অতিরিক্ত পিপাসা অনুভব করা।
- ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া এবং সহজেই ভাঁজ পড়া।
- চোখ বসে যাওয়া এবং মুখ শুকনো হয়ে যাওয়া।
- মূত্রত্যাগের পরিমাণ কমে যাওয়া বা বন্ধ হয়ে যাওয়া।
- প্রচণ্ড দুর্বলতা ও ক্লান্তি অনুভব করা।
৪. পেশির খিঁচুনি
- শরীরে সোডিয়াম, পটাসিয়াম ও অন্যান্য লবণের ঘাটতি হলে পেশির খিঁচুনি হতে পারে।
- সাধারণত হাত, পা ও পেটের পেশিতে বেশি দেখা যায়।
- এটি ব্যথার অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারে।
৫. রক্তচাপ কমে যাওয়া ও শক (Shock)
- মারাত্মক ডিহাইড্রেশনের কারণে রক্তচাপ কমে যেতে পারে।
- রক্ত সঞ্চালন কমে যাওয়ার ফলে শরীর শকের অবস্থায় চলে যেতে পারে।
- এর ফলে রোগী চেতনা হারাতে পারে বা মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে।
৬. তীব্র অবসাদ ও দুর্বলতা
- শরীরের ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য নষ্ট হলে রোগী প্রচণ্ড দুর্বলতা অনুভব করে।
- রোগী স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে অক্ষম হয়ে পড়ে।
- কিছু রোগীর ক্ষেত্রে মাথা ঘোরা ও চোখে অন্ধকার দেখার মতো সমস্যা হতে পারে।
শিশুদের ক্ষেত্রে কলেরার লক্ষণ
- চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া।
- কাঁদার সময় চোখে পানি না থাকা।
- অত্যন্ত অবসাদগ্রস্ত অনুভূতি।
- ডায়রিয়ার কারণে দ্রুত ওজন হ্রাস।
- চেতনা হারানোর ঝুঁকি।
কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত?
- তীব্র ও নিয়ন্ত্রণহীন ডায়রিয়া হলে।
- শরীর অত্যধিক পানিশূন্য হলে।
- চেতনা হারানোর উপক্রম হলে।
- বারবার বমি হলে।
- শিশু বা বয়স্ক ব্যক্তির মধ্যে লক্ষণ গুরুতর হলে।
কলেরা প্রতিরোধের উপায়
- বিশুদ্ধ পানি পান করা।
- খাবার ভালোভাবে রান্না ও সংরক্ষণ করা।
- রাস্তার অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিহার করা।
- সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধোয়া।
- টিকা গ্রহণ করা।
উপসংহার
কলেরা দ্রুত ছড়াতে পারে এবং সময়মতো চিকিৎসা না হলে মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। তাই কলেরার লক্ষণ সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং প্রাথমিক পর্যায়েই চিকিৎসা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। বিশুদ্ধ পানি পান করা এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা কলেরা প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে।