এনিমিয়া (Anemia) হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যায়। হিমোগ্লোবিন হলো একটি প্রোটিন যা রক্তে অক্সিজেন বহন করে। যখন হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যায়, তখন শরীরে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ হয় না, যার ফলে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি হয়। এনিমিয়ার বিভিন্ন ধরনের কারণ থাকতে পারে, যেমন: আয়রনের অভাব, ভিটামিন বি১২-এর অভাব, রক্তক্ষরণ বা জেনেটিক সমস্যা।
এনিমিয়ার সাধারণ লক্ষণ:
১. দুর্বলতা ও অবসাদ:
এনিমিয়া হলে সাধারণত রোগীরা অতিরিক্ত দুর্বলতা এবং অবসাদ অনুভব করেন। রক্তে হিমোগ্লোবিন কম থাকলে শরীরে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছায় না, যার ফলে রোগী সব সময় ক্লান্ত বোধ করেন।
২. শ্বাসকষ্ট:
অল্প পরিশ্রমের পরও শ্বাসকষ্ট হতে পারে। হিমোগ্লোবিনের অভাবে শরীরে পর্যাপ্ত অক্সিজেন না পৌঁছানোর কারণে এই সমস্যা হয়। শ্বাসকষ্টের পাশাপাশি বুক ধড়ফড় করতে পারে।
৩. হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি:
শরীরে অক্সিজেনের অভাব হলে হৃৎপিণ্ড বেশি পরিমাণে রক্ত পাম্প করতে থাকে, যার ফলে হৃদস্পন্দন দ্রুত হয় এবং বুক ধড়ফড় করে।
৪. ত্বকের রঙ ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া:
এনিমিয়া হলে ত্বক ফ্যাকাশে হয়ে যায় এবং ঠোঁট ও নখের রঙ পরিবর্তন হতে থাকে। রক্তের লোহিত কণিকার অভাবের কারণে ত্বক এবং অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের রঙ ফ্যাকাশে দেখায়।
৫. মাথা ঘোরা ও মাথাব্যথা:
এনিমিয়া হলে প্রায়ই মাথা ঘোরার সমস্যা দেখা দিতে পারে। মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত অক্সিজেন না পৌঁছানোর কারণে মাথাব্যথা হতে পারে।
৬. হাত ও পায়ে ঠান্ডাভাব:
রোগীদের অনেক সময় হাত ও পা ঠান্ডা অনুভূত হয়। এটি মূলত রক্তে পর্যাপ্ত অক্সিজেনের অভাবে হয়।
৭. মনোযোগের অভাব:
এনিমিয়া হলে রোগীর মনে মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। কাজের মধ্যে একাগ্রতা থাকে না, যা দৈনন্দিন কাজকর্মে প্রভাব ফেলে।
৮. অতিরিক্ত রক্তপাত:
মহিলাদের ক্ষেত্রে মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত হওয়ার কারণেও এনিমিয়া দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে শরীরে আয়রনের অভাব হয়, যা হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমায়।
৯. অস্বাভাবিক রুচি (Pica):
এনিমিয়ার আরেকটি লক্ষণ হলো অস্বাভাবিক খাবারের প্রতি আকর্ষণ, যেমন মাটি, বরফ বা কাদামাটি খাওয়ার ইচ্ছা। এটিকে পিকা (Pica) বলে।
১০. হাঁপানি ও শ্বাসকষ্টের অনুভূতি:
গুরুতর এনিমিয়ার ক্ষেত্রে রোগী হাঁপানি অনুভব করতে পারেন। হাঁটাহাঁটি বা অল্প পরিশ্রমের পর শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
এনিমিয়ার ধরণ অনুযায়ী লক্ষণ:
- আয়রন ঘাটতি এনিমিয়া: চুল পড়া, নখ ভঙ্গুর হওয়া, ঠোঁটে ঘা, এবং ঠান্ডা অনুভূতি।
- ভিটামিন বি১২ ঘাটতি এনিমিয়া: ঝিমঝিম অনুভূতি, স্মৃতিভ্রংশ, এবং মানসিক সমস্যা।
- অ্যাপ্লাস্টিক এনিমিয়া: সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা বেশি এবং রক্তক্ষরণের সময় রক্ত বন্ধ হতে সমস্যা।
এনিমিয়া প্রতিরোধে করণীয়:
- আয়রনসমৃদ্ধ খাবার: পালং শাক, কলা, ডালিম, বিটরুট, ডিম, লাল মাংস ইত্যাদি খাবার আয়রনের ঘাটতি পূরণ করতে সহায়ক।
- ভিটামিন বি১২: মাংস, মাছ, ডিম, এবং দুগ্ধজাত খাবারে ভিটামিন বি১২ থাকে যা রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে কার্যকর।
- ফলিক এসিড: ফলিক এসিড হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সহায়ক। শাকসবজি, ডাল, বাদাম প্রভৃতি ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার।
চিকিৎসকের পরামর্শ:
এনিমিয়ার লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। রক্ত পরীক্ষা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে চিকিৎসা শুরু করতে হবে। এনিমিয়া গুরুতর হলে আয়রন সাপ্লিমেন্ট বা ইনজেকশন দেওয়া যেতে পারে।
📌 ঠিকানা:
পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।