বাচ্চার হার্টবিট না আসার লক্ষণ: কারণ, সতর্কতা ও করণীয়

গর্ভাবস্থায় শিশুর হার্টবিট প্রথমবার শোনা প্রতিটি মায়ের জন্য এক আনন্দের মুহূর্ত। সাধারণত, ৬ থেকে ৯ সপ্তাহের মধ্যে আল্ট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে শিশুর হার্টবিট ধরা পড়ে। তবে কিছু ক্ষেত্রে এই সময়ের মধ্যে হার্টবিট শোনা না গেলে অনেক মা দুশ্চিন্তায় পড়ে যান।

এই ব্লগে আমরা আলোচনা করবো:
বাচ্চার হার্টবিট না আসার কারণ
এর লক্ষণ ও কীভাবে বুঝবেন
এই পরিস্থিতিতে করণীয়

কত সপ্তাহে বাচ্চার হার্টবিট শোনা যায়?

সাধারণত ৬ সপ্তাহের মধ্যে ভ্রূণের হার্টবিট তৈরি হয়, তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি ৭-৯ সপ্তাহের মধ্যে শোনা যেতে পারে।

🔹 ৬ সপ্তাহ: কিছু ক্ষেত্রে খুব দুর্বল হার্টবিট ধরা পড়তে পারে।
🔹 ৭-৮ সপ্তাহ: বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্পষ্ট হার্টবিট শোনা যায়।
🔹 ৯ সপ্তাহের পরেও হার্টবিট না এলে এটি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

raju akon youtube channel subscribtion

বাচ্চার হার্টবিট না আসার প্রধান কারণ

ভ্রূণের স্বাভাবিক বৃদ্ধি হতে দেরি হওয়া
গর্ভধারণের সঠিক সময় হিসাব না মিললে ৬ সপ্তাহের পরিবর্তে ৭-৮ সপ্তাহে হার্টবিট আসতে পারে।

ইমপ্ল্যান্টেশন দেরিতে হওয়া
 নিষিক্ত ডিম্বাণু যদি দেরিতে জরায়ুর সাথে সংযুক্ত হয়, তাহলে হার্টবিট শুরু হতে কিছুটা সময় লাগতে পারে।

ভ্রূণের ক্রোমোজোম সংক্রান্ত ত্রুটি
জেনেটিক সমস্যা বা ক্রোমোজোমাল ত্রুটি থাকলে ভ্রূণের হার্টবিট নাও আসতে পারে।

হরমোনের সমস্যা
প্রোজেস্টেরন কম থাকলে শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

মিসড মিসক্যারেজ (Missed Miscarriage)
গর্ভপাত হলেও মা বুঝতে পারেন না, যা ‘মিসড মিসক্যারেজ’ নামে পরিচিত।

বাচ্চার হার্টবিট না আসার লক্ষণ

গর্ভকালীন উপসর্গ হঠাৎ কমে যাওয়া
বমি বমি ভাব, বুকে টান, স্তনের সংবেদনশীলতা কমে গেলে সতর্ক হতে হবে।

 অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ বা বাদামী রঙের স্রাব
এটি ভ্রূণের সমস্যা নির্দেশ করতে পারে।

তলপেটে ব্যথা বা চাপ অনুভূত হওয়া
বিশেষ করে যদি ব্যথা ধারাবাহিক থাকে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

হার্টবিট না পাওয়া (Ultrasound-এ)
৭-৯ সপ্তাহেও হার্টবিট শোনা না গেলে চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

বাচ্চার হার্টবিট না আসলে করণীয়

১. ধৈর্য ধরুন ও পুনরায় আল্ট্রাসাউন্ড করুন

অনেক সময় হার্টবিট দেরিতে আসতে পারে, তাই ১-২ সপ্তাহ পর পুনরায় স্ক্যান করানো ভালো।

২. ব্লাড টেস্ট করুন (HCG লেভেল চেক করুন)

Beta-hCG টেস্টের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায় যে ভ্রূণ স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠছে কিনা।

৩. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন ও মানসিক চাপ কমান

অতিরিক্ত স্ট্রেস গর্ভের শিশুর বিকাশে বাধা সৃষ্টি করতে পারে, তাই সঠিক বিশ্রাম ও পুষ্টিকর খাবার খান।

৪. চিকিৎসকের পরামর্শ নিন

যদি ৯ সপ্তাহেও হার্টবিট না আসে, তাহলে চিকিৎসক প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

কখন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে?

৯ সপ্তাহ পার হলেও হার্টবিট না আসলে
অনেক বেশি রক্তক্ষরণ হলে
তলপেটে তীব্র ব্যথা থাকলে
আগে মিসক্যারেজের ইতিহাস থাকলে

উপসংহার

প্রথমবার আল্ট্রাসাউন্ডে শিশুর হার্টবিট না আসলে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। অনেক সময় গর্ভধারণের হিসাবের ভুল, দেরিতে ইমপ্ল্যান্টেশন বা স্বাভাবিক কারণেও এটি হতে পারে। তবে ৯ সপ্তাহের মধ্যে হার্টবিট না এলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

আপনার যদি এই বিষয়ে কোনো অভিজ্ঞতা বা প্রশ্ন থাকে, তাহলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *