বাচ্চাদের রক্তশূন্যতার লক্ষণ ও প্রতিকার

রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়া তখন হয় যখন শরীরে রক্তে পর্যাপ্ত হিমোগ্লোবিন থাকে না। হিমোগ্লোবিন হলো একটি প্রোটিন যা লোহিত রক্তকণিকাগুলোকে অক্সিজেন বহন করতে সাহায্য করে। বাচ্চাদের মধ্যে রক্তশূন্যতা হওয়ার বেশ কিছু কারণ রয়েছে, এবং এই সমস্যাটি তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে প্রভাব ফেলতে পারে। সঠিকভাবে চিহ্নিত এবং প্রতিকার করা না হলে এটি দীর্ঘমেয়াদী সমস্যার কারণ হতে পারে।

বাচ্চাদের রক্তশূন্যতার লক্ষণ

১. অবসাদ ও দুর্বলতা: বাচ্চা সবসময় ক্লান্ত বা দুর্বল দেখালে এটি রক্তশূন্যতার লক্ষণ হতে পারে। কারণ শরীরে পর্যাপ্ত অক্সিজেন না পৌঁছালে বাচ্চারা দুর্বলতা অনুভব করে।

raju akon youtube channel subscribtion

২. ফ্যাকাসে ত্বক ও ঠোঁট: রক্তশূন্যতার কারণে বাচ্চাদের ত্বক ও ঠোঁট ফ্যাকাসে হয়ে যায়। রক্তে হিমোগ্লোবিন কম থাকলে ত্বকে স্বাভাবিক রঙ থাকে না।

৩. শ্বাসকষ্ট: অল্প হাঁটাহাঁটি বা কাজ করলেই যদি বাচ্চার শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়, তাহলে এটি রক্তশূন্যতার একটি প্রধান লক্ষণ হতে পারে।

৪. খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন: রক্তশূন্যতায় আক্রান্ত বাচ্চারা সাধারণত খাওয়ার প্রতি আগ্রহ হারায়। অনেক সময় তারা এমন কিছু খেতে চাইতে পারে যা সাধারণত খাবার নয় (যেমন মাটি বা বরফ)।

৫. হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া: যদি বাচ্চার হৃৎপিণ্ড দ্রুত চলতে থাকে বা বুকে ব্যথা হয়, এটি রক্তশূন্যতার লক্ষণ হতে পারে।

৬. স্কুলে মনোযোগের অভাব: রক্তশূন্যতার কারণে বাচ্চাদের মধ্যে মস্তিষ্কে অক্সিজেন কম পৌঁছানোর কারণে মনোযোগ কমে যায় এবং তারা পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়তে পারে।

বাচ্চাদের রক্তশূন্যতার কারণ

১. আয়রনের ঘাটতি: বাচ্চাদের মধ্যে রক্তশূন্যতার সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো আয়রনের অভাব। আয়রন হিমোগ্লোবিন উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় একটি খনিজ।

২. ভিটামিন বি১২ ও ফলিক অ্যাসিডের ঘাটতি: এই দুটি ভিটামিনের অভাব থাকলে রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে।

৩. অপর্যাপ্ত পুষ্টি: বাচ্চাদের ডায়েট যদি পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার না থাকে, তাহলে রক্তশূন্যতা হতে পারে।

৪. জন্মগত কারণ: কিছু বাচ্চা জন্মগতভাবে রক্তশূন্যতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে, যেমন থ্যালাসেমিয়া বা সিকল সেল অ্যানিমিয়া।

৫. সংক্রমণ: বিভিন্ন সংক্রমণ বাচ্চাদের লোহিত রক্তকণিকা ধ্বংস করতে পারে, যার ফলে রক্তশূন্যতা হতে পারে।

রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ ও প্রতিকার

১. আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ানো: বাচ্চাদের খাদ্যতালিকায় আয়রনসমৃদ্ধ খাবার যেমন মাংস, ডিম, শাকসবজি, বাদাম, এবং শিম জাতীয় খাবার অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। আয়রন রক্তের হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে সাহায্য করে।

২. ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার: ভিটামিন সি আয়রনের শোষণ বাড়ায়। তাই বাচ্চাদের খাবারের সাথে লেবু, কমলা, আমলকী, এবং অন্যান্য ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল দিন।

৩. আয়রন সাপ্লিমেন্ট: যদি খাদ্য থেকে প্রয়োজনীয় আয়রন না পাওয়া যায়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শে আয়রন সাপ্লিমেন্ট দেওয়া যেতে পারে।

৪. ভিটামিন বি১২ ও ফলিক অ্যাসিড: বাচ্চাদের ডায়েটে ভিটামিন বি১২ এবং ফলিক অ্যাসিড অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। এই ভিটামিনগুলো রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে সহায়ক।

৫. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা: রক্তশূন্যতা হওয়ার আশঙ্কা থাকলে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা উচিত। এতে রক্তের হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ জানা যায় এবং চিকিৎসা দ্রুত শুরু করা যায়।

৬. পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও শারীরিক কার্যকলাপ: রক্তশূন্যতায় আক্রান্ত বাচ্চাদের পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং হালকা শারীরিক কার্যকলাপ প্রয়োজন। এটি তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।

চিকিৎসা নেওয়ার প্রয়োজন হলে

  • যদি বাচ্চার রক্তশূন্যতা গুরুতর হয় বা কোনো নির্দিষ্ট কারণ সনাক্ত করা না যায়।
  • যদি বাচ্চার হিমোগ্লোবিনের মাত্রা দ্রুত কমে যায়।
  • যদি বাচ্চা খুব দুর্বলতা অনুভব করে বা অন্য কোনো গুরুতর লক্ষণ দেখা দেয়।

বাচ্চাদের রক্তশূন্যতা একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। তবে সঠিকভাবে প্রতিরোধ ও চিকিৎসা করা গেলে এটি সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। পুষ্টিকর খাবার, পর্যাপ্ত বিশ্রাম, এবং নিয়মিত চিকিৎসা পরামর্শের মাধ্যমে বাচ্চাদের রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ করা যায় এবং তাদের স্বাস্থ্য বজায় রাখা সম্ভব।

📌 ঠিকানা:

পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।

📞 ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬।

✎ রাজু আকন, কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top