গলায় ব্যথা, গিলতে কষ্ট হওয়া বা কথা বলতে সমস্যা—এ ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে অনেক সময় টনসিল ফুলে যাওয়াকে দায়ী করা হয়। টনসিল হল আমাদের শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একটি অংশ, যা সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে। তবে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের ফলে টনসিল ফুলে যেতে পারে, যা টনসিলাইটিস নামে পরিচিত।
অনেকেই এই সমস্যার সম্মুখীন হন, বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়। তবে বড়দেরও এই সমস্যায় পড়তে হয়। তাই টনসিল ফুলে গেলে কী করা উচিত এবং কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন, তা জানা জরুরি।
১. টনসিল ফুলে যাওয়ার কারণ
টনসিল ফুলে যাওয়ার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে:
✅ ভাইরাস সংক্রমণ – সাধারণ ঠান্ডা, ইনফ্লুয়েঞ্জা বা এডেনোভাইরাসের কারণে হতে পারে।
✅ ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ – স্ট্রেপ্টোকক্কাস (Streptococcus) ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে টনসিলাইটিস হতে পারে।
✅ অ্যালার্জি – ধুলাবালি বা দূষিত বায়ুর কারণে টনসিলের সংক্রমণ বাড়তে পারে।
✅ ধূমপান বা দূষিত পরিবেশ – ধোঁয়া ও দূষণ টনসিলের প্রদাহ বাড়িয়ে দিতে পারে।
২. টনসিল ফুলে গেলে করণীয় (ঘরোয়া প্রতিকার)
টনসিলের ব্যথা ও ফোলা কমানোর জন্য ঘরে বসেই কিছু কার্যকর উপায় অনুসরণ করা যায়।
ক. গরম পানির গার্গল করুন
🧂 এক গ্লাস গরম পানিতে আধা চামচ লবণ মিশিয়ে দিনে ২-৩ বার কুলকুচি করুন।
👉 এটি প্রদাহ কমায় এবং ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ প্রতিরোধ করে।
খ. পর্যাপ্ত পানি পান করুন
💧 শরীর হাইড্রেটেড থাকলে গলার শুষ্কতা কমে এবং সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যায়।
👉 গরম চা বা মধু-মিশ্রিত লেবুর পানি পান করলেও আরাম পাওয়া যায়।
গ. মধু ও আদার মিশ্রণ
🍯 এক চামচ মধুর সঙ্গে সামান্য আদার রস মিশিয়ে দিনে দুইবার খান।
👉 এটি গলা নরম রাখে এবং প্রদাহ কমায়।
ঘ. তুলসী পাতা ও লবঙ্গ চা
🍃 তুলসী পাতা ও লবঙ্গ দিয়ে চা বানিয়ে দিনে ২-৩ বার পান করুন।
👉 এটি গলার সংক্রমণ কমাতে সহায়ক।
ঙ. ঠান্ডা খাবার ও পানীয় এড়িয়ে চলুন
🚫 ফ্রিজের ঠান্ডা পানি, আইসক্রিম বা কোল্ড ড্রিংকস পরিহার করুন।
👉 এগুলো গলার প্রদাহ বাড়িয়ে দিতে পারে।
৩. কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন?
যদি নিচের উপসর্গগুলো দেখা দেয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত—
🚨 টানা ৪-৫ দিন ধরে জ্বর থাকলে।
🚨 গিলতে অসুবিধা হলে বা শ্বাস নিতে কষ্ট হলে।
🚨 গলায় পুঁজ জমলে বা দুর্গন্ধযুক্ত নিঃশ্বাস হলে।
🚨 ঘন ঘন টনসিলাইটিস হলে।
চিকিৎসক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হলে অ্যান্টিবায়োটিক লিখে দিতে পারেন। তবে ওষুধ খাওয়ার নিয়ম অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে।
৪. কীভাবে টনসিল ফুলে যাওয়া প্রতিরোধ করবেন?
✅ নিয়মিত গরম পানির গার্গল করুন।
✅ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন ও ধুলাবালি এড়িয়ে চলুন।
✅ পর্যাপ্ত পানি পান করুন এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খান।
✅ ঠান্ডা খাবার কম খান ও গরম চা-কফি পান করুন।
উপসংহার:
টনসিল ফুলে গেলে তা খুবই কষ্টকর হতে পারে, তবে ঘরোয়া প্রতিকার ও সঠিক চিকিৎসা অনুসরণ করলে দ্রুত আরাম পাওয়া সম্ভব। গলা ব্যথা বা টনসিলাইটিসের সমস্যা নিয়মিত হলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
আপনার মতামত দিন!
আপনার কি কখনো টনসিলের সমস্যা হয়েছে? কোন ঘরোয়া প্রতিকার আপনার জন্য কার্যকর হয়েছে? নিচের কমেন্টে শেয়ার করুন!
