Substance-Induced Disorder হলো এমন একটি মানসিক অবস্থা, যা মাদকদ্রব্য বা নেশাজাতীয় পদার্থের অপব্যবহারের কারণে উদ্ভূত হয়। এই অবস্থাটি ব্যক্তির মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর অত্যন্ত ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। সঠিক থেরাপি এবং কৌশলের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব।
Substance-Induced Disorder এর কারণসমূহ
Substance-Induced Disorder সাধারণত নিম্নোক্ত কারণগুলির দ্বারা উদ্ভূত হতে পারে:
- মাদকদ্রব্যের দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহার: মাদকদ্রব্যের দীর্ঘমেয়াদী এবং অতিরিক্ত ব্যবহার মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।
- নেশাজাতীয় পদার্থের অপব্যবহার: নেশাজাতীয় পদার্থ যেমন এলকোহল, কোকেন, হেরোইন ইত্যাদির অপব্যবহার এই সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
- মনোরোগের সাথে মাদকদ্রব্যের সংমিশ্রণ: কিছু মনোরোগ যেমন ডিপ্রেশন বা অ্যানজাইটি ডিসঅর্ডারের সাথে মাদকদ্রব্যের সংমিশ্রণ Substance-Induced Disorder এর সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে।
- পারিবারিক ইতিহাস: পরিবারের মধ্যে মাদকদ্রব্যের ব্যবহার এবং নির্ভরতার ইতিহাস থাকলে Substance-Induced Disorder এর ঝুঁকি বাড়ে।
Substance-Induced Disorder এর লক্ষণসমূহ
Substance-Induced Disorder এর লক্ষণগুলো ব্যক্তির মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর ভিন্ন ভিন্ন প্রভাব ফেলে। কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:
- মেজাজের পরিবর্তন: হঠাৎ করে মেজাজের চরম পরিবর্তন, যেমন অত্যন্ত উত্তেজিত বা বিষণ্ণ হয়ে পড়া।
- ব্যবহারে পরিবর্তন: সামাজিক আচরণে পরিবর্তন, যেমন পরিবারের সদস্যদের থেকে দূরে থাকা বা আগ্রাসী আচরণ করা।
- আবেগীয় অসঙ্গতি: আবেগের উপর নিয়ন্ত্রণ হারানো এবং হঠাৎ করে বিষণ্ণ বা উদ্বিগ্ন হওয়া।
- শারীরিক লক্ষণ: ঘুমের সমস্যা, খাদ্যাভাসে পরিবর্তন, এবং ওজন কমা বা বাড়া।
- অপরাধবোধ ও লজ্জাবোধ: মাদকদ্রব্যের ব্যবহার নিয়ে তীব্র অপরাধবোধ এবং লজ্জা অনুভব করা।
Substance-Induced Disorder এর জন্য সিবিটি থেরাপির সেলফ-হেল্প টেকনিক
১. ট্রিগার চিহ্নিতকরণ এবং পরিহার (Identifying and Avoiding Triggers)
- কীভাবে কাজ করে: Substance-Induced Disorder আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য ট্রিগারগুলো চিহ্নিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো মাদকদ্রব্যের প্রতি আকর্ষণ বাড়ায়।
- নিজের উপর প্রয়োগ: আপনার ট্রিগারগুলো চিহ্নিত করুন, যেমন কিছু বিশেষ স্থান, মানুষ বা পরিস্থিতি যা মাদকদ্রব্যের প্রতি আকর্ষণ বাড়ায়। সেই অনুযায়ী সেগুলো পরিহার করার চেষ্টা করুন।
২. কগনিটিভ রিফ্রেমিং (Cognitive Restructuring)
- কীভাবে কাজ করে: নেতিবাচক চিন্তাভাবনা এবং বিশ্বাসগুলোকে চিহ্নিত করে সেগুলোকে ইতিবাচকভাবে পরিবর্তন করা।
- নিজের উপর প্রয়োগ: প্রতিদিনের নেতিবাচক চিন্তা যেমন “আমি এটি ছাড়া বাঁচতে পারি না” পরিবর্তন করে লিখুন “আমি মাদক ছাড়াই সুস্থ থাকতে পারি।”
৩. ইমোশন রেগুলেশন (Emotion Regulation)
- কীভাবে কাজ করে: আবেগ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে Substance-Induced Disorder-এর নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলা করা।
- নিজের উপর প্রয়োগ: যখনই আপনি উদ্বিগ্ন বা বিষণ্ণ বোধ করেন, তখন শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণের অনুশীলন করুন। ধীরে ধীরে শ্বাস নিন এবং ছেড়ে দিন, এটি আপনার মনকে শান্ত করবে।
৪. বিহেভিয়ারাল অ্যাক্টিভেশন (Behavioral Activation)
- কীভাবে কাজ করে: মাদকদ্রব্যের প্রতি আকর্ষণ কমাতে নতুন কিছু কার্যকলাপের মাধ্যমে নিজেকে ব্যস্ত রাখা।
- নিজের উপর প্রয়োগ: প্রতিদিন একটি করে নতুন কাজ করার পরিকল্পনা করুন, যেমন হাঁটতে যাওয়া, সৃজনশীল কিছু করা, বা বন্ধুদের সাথে সময় কাটানো।
৫. রিলাপ্স প্রতিরোধ পরিকল্পনা (Relapse Prevention Planning)
- কীভাবে কাজ করে: মাদকদ্রব্যের প্রতি পুনরায় আকর্ষণ প্রতিরোধের জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরি করা।
- নিজের উপর প্রয়োগ: একটি রিলাপ্স প্রতিরোধ পরিকল্পনা তৈরি করুন, যেখানে আপনি মাদকদ্রব্যের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করলে কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবেন তা নির্ধারণ করুন। আপনার পরিকল্পনায় আপনার সমর্থনকারী বন্ধু বা পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করার বিকল্প রাখুন।
৬. মাইন্ডফুলনেস (Mindfulness)
- কীভাবে কাজ করে: বর্তমান মুহূর্তের প্রতি মনোযোগ রেখে মাদকদ্রব্যের প্রতি আকর্ষণ কমানো।
- নিজের উপর প্রয়োগ: প্রতিদিন মাইন্ডফুলনেস অনুশীলন করুন, যেমন ধ্যান করা বা শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রতি মনোযোগ দেওয়া। এটি আপনাকে মাদকদ্রব্যের প্রলোভন থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করবে।
উপসংহার
Substance-Induced Disorder একটি জটিল মানসিক অবস্থা, যা সঠিক থেরাপি এবং কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে মোকাবিলা করা সম্ভব। সিবিটি থেরাপির টেকনিক যেমন কগনিটিভ রিফ্রেমিং, ইমোশন রেগুলেশন, এবং রিলাপ্স প্রতিরোধ পরিকল্পনা এই সমস্যার উন্নতিতে সহায়ক হতে পারে। নিয়মিত অনুশীলন এবং সচেতনতার মাধ্যমে আপনি এই অবস্থা থেকে পুনরুদ্ধার করতে পারবেন।