স্ট্রোক হলো এক ধরনের মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা, যা মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হলে বা মস্তিষ্কের রক্তনালী ফেটে গেলে ঘটে। স্ট্রোক দ্রুত চিকিৎসা না পেলে মস্তিষ্কের কোষ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং রোগীর জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। স্ট্রোকের প্রাথমিক লক্ষণগুলো দ্রুত চিহ্নিত করতে পারলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীকে জীবনহানির হাত থেকে রক্ষা করা যায়। এই ব্লগে আমরা স্ট্রোক চেনার লক্ষণ এবং কীভাবে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত তা নিয়ে আলোচনা করবো।
স্ট্রোকের প্রধান লক্ষণগুলো:
১. মুখের অঙ্গভঙ্গির সমস্যা:
স্ট্রোক হলে মুখের একপাশে আকস্মিক পরিবর্তন দেখা দিতে পারে। রোগীর মুখের একপাশ ঢলে পড়তে পারে, হাসার চেষ্টা করলে মুখের একপাশ নেমে যেতে পারে। রোগীর মুখ এবং ঠোঁটের সচলতা হারানোর লক্ষণ থাকলে স্ট্রোকের সম্ভাবনা থাকতে পারে।
২. হাত বা পায়ে দুর্বলতা:
স্ট্রোক হলে শরীরের একপাশে আকস্মিক দুর্বলতা বা অসাড়ভাব দেখা দেয়। রোগী এক হাত বা এক পা তুলতে অক্ষম হতে পারেন বা এক হাত বা এক পা সম্পূর্ণভাবে দুর্বল হয়ে যেতে পারে। হাত বা পায়ে অবশ হয়ে গেলে দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন।
৩. বাকশক্তি হ্রাস বা কথা জড়িয়ে আসা:
স্ট্রোকের ফলে হঠাৎ করে কথা বলায় অসুবিধা হতে পারে, রোগীর কথা অস্পষ্ট শোনাতে পারে, বা তিনি একেবারেই কথা বলতে না পারেন। কথা জড়িয়ে আসা, বা বাকশক্তি হারানো স্ট্রোকের অন্যতম প্রধান লক্ষণ।
৪. দৃষ্টি সমস্যা:
স্ট্রোক হলে রোগীর চোখে আকস্মিক ঝাপসা দেখা দিতে পারে বা দৃষ্টি আংশিকভাবে হারিয়ে যেতে পারে। এটি এক চোখ বা দুই চোখেই ঘটতে পারে। স্ট্রোকের কারণে অনেক সময় জিনিসপত্র দ্বিগুণ দেখা যায়।
৫. মাথা ঘোরা বা ভারসাম্যহীনতা:
হঠাৎ করে মাথা ঘোরা, ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে যাওয়া, অথবা চলাফেরায় সমস্যা স্ট্রোকের লক্ষণ হতে পারে। রোগীর এই ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন।
৬. অসহনীয় মাথাব্যথা:
স্ট্রোকের অন্যতম প্রধান লক্ষণ হলো আকস্মিক এবং অসহনীয় মাথাব্যথা, যা কোনো কারণ ছাড়াই শুরু হয়। রোগী যদি হঠাৎ তীব্র মাথাব্যথায় ভোগেন, এটি স্ট্রোকের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে।
৭. সচেতনতা হারানো:
স্ট্রোক হলে রোগী হঠাৎ জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে পারেন। অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাওয়া বা সংজ্ঞাহীন অবস্থায় যাওয়া স্ট্রোকের মারাত্মক লক্ষণগুলোর মধ্যে অন্যতম।
FAST পদ্ধতি ব্যবহার করে স্ট্রোক চেনা:
FAST হলো স্ট্রোকের প্রধান লক্ষণগুলো চেনার সহজ একটি উপায়। এটি মুখ, হাত এবং কথা বলার অস্বাভাবিকতার দ্রুত পর্যবেক্ষণের উপর ভিত্তি করে তৈরি। এর পূর্ণরূপ হলো:
- F – Face (মুখ): রোগীর মুখের একপাশ ঢলে পড়ছে কি? হাসতে বলুন।
- A – Arms (হাত): দুই হাত তুলতে বলুন। এক হাত নিচে ঝুলে পড়ছে কি?
- S – Speech (কথা): রোগীকে একটি সহজ বাক্য বলতে বলুন। তার কথা জড়িয়ে যাচ্ছে কি?
- T – Time (সময়): সময় নষ্ট না করে দ্রুত অ্যাম্বুলেন্স বা চিকিৎসা সেবা নিন।
স্ট্রোক হলে কী করবেন?
১. দ্রুত চিকিৎসা নিন:
স্ট্রোকের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা নিন। যত দ্রুত স্ট্রোক রোগীকে হাসপাতালে নেওয়া যায়, মস্তিষ্কের ক্ষতি ততটাই কমানো সম্ভব। স্ট্রোকের ক্ষেত্রে চিকিৎসা নেয়ার জন্য “গোল্ডেন আওয়ার” অর্থাৎ প্রথম কয়েক ঘণ্টা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
২. অ্যাম্বুলেন্স ডাকুন:
যদি স্ট্রোকের কোনো লক্ষণ দেখা দেয়, সঙ্গে সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্স ডাকুন বা রোগীকে নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যান। অপেক্ষা করার সময় নেই।
৩. রোগীকে শুইয়ে রাখুন:
যদি রোগী স্ট্রোকের কারণে পড়ে যান বা ভারসাম্য হারান, তাকে কোনো সোজা স্থানে শুইয়ে রাখুন এবং মাথা সামান্য উঁচুতে রাখার চেষ্টা করুন।
৪. চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলুন:
স্ট্রোকের পর চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। স্ট্রোক থেকে সেরে উঠার জন্য নিয়মিত চিকিৎসা, থেরাপি, এবং জীবনযাপন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।
স্ট্রোক একটি জীবননাশক রোগ হতে পারে, তবে দ্রুত চিকিৎসা নিয়ে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব। স্ট্রোকের লক্ষণগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং সময়মতো চিকিৎসা নেওয়া রোগীর জীবন বাঁচাতে সাহায্য করবে। স্ট্রোকের লক্ষণ দেখা দিলে “FAST” পদ্ধতি অনুসরণ করে দ্রুত ব্যবস্থা নিন এবং চিকিৎসা সেবা নিন।