কম বয়সেও স্ট্রোক হতে পারে: কারণ, লক্ষণ এবং প্রতিরোধ

স্ট্রোক সাধারণত বয়স্ক ব্যক্তিদের একটি সাধারণ সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হলেও সাম্প্রতিককালে তরুণ এবং মধ্যবয়সীদের মধ্যেও এই সমস্যা দেখা যাচ্ছে। এটি এক ধরনের মস্তিষ্কের আঘাত, যা রক্ত সঞ্চালনের ঘাটতির কারণে ঘটে। যদি মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহে বাধা সৃষ্টি হয়, তবে তা মস্তিষ্কের কোষের মৃত্যু ঘটায়, যার ফলে শারীরিক এবং মানসিক অক্ষমতা বা মৃত্যু ঘটতে পারে। তাই স্ট্রোকের ঝুঁকি এবং এর প্রতিরোধ সম্পর্কে সচেতন হওয়া অত্যন্ত জরুরি।

এই ব্লগে আমরা আলোচনা করব কেন কম বয়সীদের মধ্যেও স্ট্রোক হতে পারে, এর লক্ষণ এবং কীভাবে এটি প্রতিরোধ করা যায়।

১. কেন কম বয়সীদের স্ট্রোক হতে পারে?

তরুণদের মধ্যে স্ট্রোকের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাওয়ার পেছনে কিছু নির্দিষ্ট কারণ রয়েছে। সাধারণত, জীবনযাত্রার ধরন এবং কিছু শারীরিক অবস্থা তরুণ বয়সেও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

raju akon youtube channel subscribtion

১. উচ্চ রক্তচাপ (হাইপারটেনশন)

উচ্চ রক্তচাপ স্ট্রোকের প্রধান কারণগুলোর একটি। এটি মস্তিষ্কে রক্তবাহী ধমনীকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং রক্তপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

২. হৃদরোগ

কম বয়সীদের মধ্যে জন্মগত হৃদরোগ বা অনিয়মিত হৃদস্পন্দন (এট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন) স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

৩. ডায়াবেটিস

ডায়াবেটিস মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করে এবং রক্তনালীকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তরুণদের স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি থাকে।

৪. ধূমপান এবং মদ্যপান

ধূমপান এবং অতিরিক্ত মদ্যপান রক্তনালীর ক্ষতি করে, যা স্ট্রোকের কারণ হতে পারে। তরুণদের মধ্যে এই অভ্যাস স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

৫. অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস

অস্বাস্থ্যকর এবং তেল-চর্বি সমৃদ্ধ খাবার খেলে কোলেস্টেরল বেড়ে যায়, যা ধমনীতে জমা হয়ে রক্তপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। ফলে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।

৬. মানসিক চাপ ও উদ্বেগ

তীব্র মানসিক চাপ বা উদ্বেগ মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতায় প্রভাব ফেলে এবং দীর্ঘমেয়াদী মানসিক চাপ রক্তচাপ বাড়িয়ে স্ট্রোকের ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে।

২. স্ট্রোকের লক্ষণ

স্ট্রোকের লক্ষণগুলো দ্রুত শনাক্ত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ দ্রুত চিকিৎসা শুরু না করলে এটি মারাত্মক হতে পারে। কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:

মুখে, হাতে বা পায়ে হঠাৎ অসাড়তা বা দুর্বলতা: সাধারণত এটি শরীরের একপাশে ঘটে।

মুখ বেঁকে যাওয়া: এক পাশের মুখ বেঁকে যাওয়া বা মুখের স্বাভাবিক অঙ্গভঙ্গি হারানো।

দৃষ্টিশক্তি হ্রাস: এক বা দুই চোখে হঠাৎ করে দৃষ্টিশক্তি কমে আসা।

হঠাৎ বিভ্রান্তি বা কথা বলার সমস্যা: কথা বলার অসুবিধা বা কথা পরিষ্কারভাবে না বলতে পারা।

হঠাৎ তীব্র মাথাব্যথা: বিশেষ কোনো কারণ ছাড়াই তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।

৩. স্ট্রোক প্রতিরোধের উপায়

স্ট্রোকের ঝুঁকি কমানোর জন্য কিছু সাধারণ স্বাস্থ্যকর অভ্যাস এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তন প্রয়োজন, যা তরুণদেরও অনুসরণ করা উচিত।

১. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন

নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করুন এবং যদি উচ্চ রক্তচাপ থাকে, তবে তা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করুন।

২. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করুন

ফল, সবজি, শস্য এবং পুষ্টিকর খাবার বেশি করে খান। চর্বি এবং ট্রান্সফ্যাট এড়িয়ে চলুন, যা কোলেস্টেরল বাড়ায় এবং ধমনীতে জমা হয়।

৩. নিয়মিত ব্যায়াম করুন

নিয়মিত ব্যায়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে, হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হালকা থেকে মাঝারি মাত্রার ব্যায়াম করা উচিত।

৪. ধূমপান এবং মদ্যপান এড়িয়ে চলুন

ধূমপান এবং অতিরিক্ত মদ্যপান স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। এই অভ্যাসগুলো বাদ দিলে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে যায়।

৫. মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করুন

ধ্যান, যোগব্যায়াম, এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলনের মাধ্যমে মানসিক চাপ কমিয়ে রাখা উচিত। মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ কম থাকলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে।

৪. কবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন

যদি স্ট্রোকের কোনো লক্ষণ দেখা দেয়, তবে অবিলম্বে চিকিৎসা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। দ্রুত সময়ে চিকিৎসা না নিলে মস্তিষ্কের কোষে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। স্ট্রোকের লক্ষণ দেখা দিলে জরুরি বিভাগে যোগাযোগ করুন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

স্ট্রোক যে কোনো বয়সে হতে পারে এবং তরুণদের মধ্যেও এর ঝুঁকি বাড়ছে। তবে কিছু স্বাস্থ্যকর অভ্যাস এবং সচেতনতা মেনে চললে স্ট্রোক প্রতিরোধ করা সম্ভব। স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, এবং নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা তরুণদেরও স্ট্রোক থেকে রক্ষা করতে পারে। স্ট্রোকের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *