ডিসোসিয়েটিভ আইডেন্টিটি ডিসঅর্ডার (DID), যাকে পূর্বে মাল্টিপল পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার বলা হতো, একটি জটিল মানসিক সমস্যা। যদিও DID-এর জন্য কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি (CBT) সম্পূর্ণ নিরাময় প্রক্রিয়ায় কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়নি, তবে কিছু CBT টেকনিক রয়েছে যা নিজের উপর প্রয়োগ করে মানসিক অবস্থার উন্নতি করা যেতে পারে। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিবিটি টেকনিক উল্লেখ করা হলো:
১. গ্রাউন্ডিং টেকনিকস (Grounding Techniques):
- পাঁচ ইন্দ্রিয়ের ব্যবহার: বর্তমান মুহূর্তে নিজেকে স্থিত রাখার জন্য নিজের পাঁচটি ইন্দ্রিয়কে ব্যবহার করুন। উদাহরণস্বরূপ, আপনি কী দেখতে পাচ্ছেন, কী শুনতে পাচ্ছেন, কী স্পর্শ করছেন, কী স্বাদ গ্রহণ করছেন, এবং কী গন্ধ পাচ্ছেন তা অনুভব করুন।
- বস্তু শনাক্তকরণ: আপনার চারপাশের পাঁচটি বস্তু শনাক্ত করুন, তাদের রং, আকার এবং ব্যবহার লক্ষ্য করুন। এটি আপনাকে বর্তমান পরিস্থিতিতে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে।
- গভীর শ্বাসপ্রশ্বাস: আপনার শ্বাসের প্রতি মনোযোগ দিন। ধীরে ধীরে গভীর শ্বাস নিন এবং ছাড়ুন, এতে আপনার শরীর এবং মস্তিষ্ক শিথিল হবে।
২. কগনিটিভ রি-স্ট্রাকচারিং (Cognitive Restructuring):
- নেগেটিভ থটস বিশ্লেষণ: নিজের মধ্যে যেসব চিন্তা আসে সেগুলোকে বিশ্লেষণ করুন। যদি কোনো চিন্তা আপনাকে আতঙ্কিত করে তোলে, তবে সেটি কতটা বাস্তবসম্মত তা যাচাই করুন।
- বাস্তবমুখী চিন্তা প্রয়োগ: নেগেটিভ চিন্তাগুলি বাস্তবমুখী ও ইতিবাচক চিন্তায় পরিণত করুন। যেমন, “আমি ব্যর্থ হবো” এর পরিবর্তে “আমি চেষ্টা করব এবং যা শিখব তা আমার জন্য মূল্যবান হবে।”
৩. ইমোশনাল রেগুলেশন (Emotional Regulation):
- অনুভূতির পর্যবেক্ষণ: আপনার অনুভূতিগুলি পর্যবেক্ষণ করুন এবং সেগুলির উৎস বুঝতে চেষ্টা করুন। যেমন, আপনি কেন নির্দিষ্ট সময়ে বিষণ্ণ বা উত্তেজিত বোধ করছেন তা চিন্তা করুন।
- জার্নালিং: আপনার অনুভূতিগুলি লিখে রাখুন। এটি আপনার মনের অবস্থার স্পষ্ট চিত্র দিতে পারে এবং সমস্যা সমাধানের জন্য সহায়ক হতে পারে।
- রিলাক্সেশন টেকনিকস: প্রগ্রেসিভ মাসল রিলাক্সেশন, শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করুন।
৪. সেলফ-কম্প্যাশন ও সেলফ-কেয়ার (Self-Compassion and Self-Care):
- নিজের প্রতি সহানুভূতি: নিজের প্রতি সহানুভূতিশীল থাকুন। যদি আপনি নিজেকে কঠিন পরিস্থিতিতে পান, তাহলে নিজেকে সময় দিন এবং নিজের প্রতি দয়া দেখান।
- নিজের জন্য সময় বের করুন: আপনার পছন্দসই কাজগুলি করার জন্য সময় বের করুন। এটি আপনাকে মানসিক শান্তি দিতে পারে এবং আপনার অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বগুলি হ্রাস করতে সাহায্য করতে পারে।
৫. অ্যাফার্মেশনস (Affirmations):
- ইতিবাচক কথা বলুন: প্রতিদিন সকালে বা রাতে নিজের জন্য ইতিবাচক কথা বলুন। উদাহরণস্বরূপ, “আমি নিজের প্রতি যত্নবান হবো,” “আমি মূল্যবান,” ইত্যাদি।
- আয়নার সামনে প্র্যাকটিস: আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের প্রতি ইতিবাচক বার্তা দিন। এটি আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করতে সহায়ক হতে পারে।
DID একটি জটিল মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা, এবং সঠিক থেরাপিস্টের সাহায্য ছাড়া এটি মোকাবেলা করা কঠিন হতে পারে। তবে উপরোক্ত সিবিটি টেকনিকগুলো নিজে নিজে প্রয়োগ করে নিজের মানসিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি ঘটানো সম্ভব। তবুও, গুরুতর ক্ষেত্রে একজন পেশাদার থেরাপিস্টের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।