ম্যানিয়ার জন্য সিবিটি থেরাপির (CBT) কিছু টেকনিক যা নিজের উপর এপ্লাই করা যায়

ম্যানিয়া হলো একটি মানসিক অবস্থা, যা সাধারণত বাইপোলার ডিসঅর্ডারের সাথে সম্পর্কিত। ম্যানিয়া চলাকালীন ব্যক্তি অত্যধিক উত্তেজনা, অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস, ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ, এবং বাস্তবতাকে অবহেলা করার মতো লক্ষণ প্রদর্শন করে। কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি (CBT) ম্যানিয়ার উপসর্গগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়ক হতে পারে।

ম্যানিয়ার জন্য সিবিটির কয়েকটি কার্যকর টেকনিক

১. কগনিটিভ রিস্ট্রাকচারিং (Cognitive Restructuring)

  • পদ্ধতি: ম্যানিয়ার সময় সৃষ্ট অপ্রয়োজনীয় এবং অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস বা নেতিবাচক চিন্তাগুলো চিহ্নিত করা এবং সেগুলোকে যুক্তিসঙ্গত ও বাস্তবসম্মত চিন্তায় রূপান্তর করা।
  • কিভাবে করবেন: যখনই আপনি অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী বা অবাস্তব চিন্তা অনুভব করেন, তখন নিজেকে প্রশ্ন করুন:
    • “এই চিন্তাটি কি বাস্তবসম্মত?”
    • “এটি আমাকে কোন ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারে?”
    • চিন্তাগুলোকে বাস্তবতার সাথে মেলানোর চেষ্টা করুন এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সময় নিন।

raju akon youtube channel subscribtion

২. ইমপালস নিয়ন্ত্রণ (Impulse Control)

  • পদ্ধতি: ম্যানিয়ার সময় ব্যক্তিরা ঝুঁকিপূর্ণ বা অযৌক্তিক কাজ করতে পারেন, যেমন অত্যধিক অর্থ খরচ করা বা ঝুঁকিপূর্ণ শারীরিক কার্যকলাপ। ইমপালস নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এই আচরণগুলো কমানো যায়।
  • কিভাবে করবেন: নিজেকে সময় দিন এবং আচরণটি করার আগে কয়েক মিনিট অপেক্ষা করুন। নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন, “এটি কি আমার জন্য নিরাপদ?” “এর দীর্ঘমেয়াদী ফলাফল কী হতে পারে?” আচরণটি করার আগে কিছুক্ষণের জন্য থামুন এবং নিজের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে চিন্তা করুন।

৩. মাইন্ডফুলনেস ও গ্রাউন্ডিং টেকনিক (Mindfulness and Grounding Techniques)

  • পদ্ধতি: ম্যানিয়ার সময় মানসিক অবস্থা অস্থির হতে পারে। মাইন্ডফুলনেস এবং গ্রাউন্ডিং কৌশলগুলো ব্যবহার করে বাস্তবতার সাথে নিজেকে সংযুক্ত রাখা সম্ভব।
  • কিভাবে করবেন: গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে নিজেকে স্থির করুন এবং নিজের শারীরিক উপস্থিতি সম্পর্কে সচেতন হোন। আপনার চারপাশের পরিবেশের প্রতি মনোযোগ দিন এবং বাস্তবতার সাথে নিজের সংযোগ দৃঢ় করুন। যেকোনো ধরনের বিভ্রান্তিকর চিন্তাকে উপেক্ষা করে মাইন্ডফুলনেসের মাধ্যমে নিজের বর্তমান অবস্থায় মনোযোগ দিন।

৪. স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট (Stress Management)

  • পদ্ধতি: ম্যানিয়া চলাকালীন অতিরিক্ত উত্তেজনা এবং মানসিক চাপ কমানোর জন্য স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট কৌশলগুলো প্রয়োগ করা হয়।
  • কিভাবে করবেন: ধ্যান, যোগব্যায়াম, বা গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের চর্চা করুন। যখনই আপনি মানসিক চাপ অনুভব করবেন, তখন স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট কৌশলগুলো ব্যবহার করে নিজেকে শিথিল করার চেষ্টা করুন।

৫. শিডিউলিং এবং রুটিন মেইনটেনেন্স (Scheduling and Routine Maintenance)

  • পদ্ধতি: ম্যানিয়ার সময় জীবনের দৈনন্দিন রুটিন থেকে বিচ্যুত হওয়া সাধারণ। রুটিন মেইনটেন করে এটি নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।
  • কিভাবে করবেন: একটি দৈনিক রুটিন তৈরি করুন এবং সেটি কঠোরভাবে মেনে চলার চেষ্টা করুন। নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম, কাজ, এবং বিশ্রাম নিন। আপনার রুটিন মেনে চলা মানসিকভাবে স্থিতিশীল থাকতে সহায়ক হবে।

৬. বিহেভিয়ারাল অ্যাক্টিভেশন (Behavioral Activation)

  • পদ্ধতি: ম্যানিয়ার সময় অতিরিক্ত সক্রিয়তা এবং ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ কমাতে সঠিক এবং নিরাপদ কার্যকলাপের দিকে মনোযোগ দেওয়া।
  • কিভাবে করবেন: আপনার অতিরিক্ত শক্তি এবং উত্তেজনাকে ইতিবাচক এবং নিরাপদ কাজে নিয়োজিত করুন, যেমন শারীরিক ব্যায়াম, সৃজনশীল কাজ বা শিক্ষামূলক কার্যকলাপ। ঝুঁকিপূর্ণ বা অযৌক্তিক আচরণের পরিবর্তে উৎপাদনশীল কার্যকলাপে মনোযোগ দিন।

৭. রিলাপ্স প্রিভেনশন (Relapse Prevention)

  • পদ্ধতি: ম্যানিয়ার লক্ষণগুলো পুনরায় দেখা দেওয়া রোধ করার জন্য রিলাপ্স প্রিভেনশন কৌশল ব্যবহার করা হয়।
  • কিভাবে করবেন: আপনার ম্যানিয়ার পূর্ববর্তী লক্ষণগুলো চিহ্নিত করুন এবং যদি পুনরায় সেগুলো দেখা দিতে শুরু করে, তবে দ্রুত সেই লক্ষণগুলো মোকাবেলা করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিন। এটি হতে পারে আপনার থেরাপিস্টের সাথে যোগাযোগ করা, স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট চর্চা করা, বা আপনার রুটিনকে ঠিক রাখা।

ম্যানিয়ার চিকিৎসায় সিবিটি একটি কার্যকর পদ্ধতি হতে পারে। যদিও নিজে নিজে এই কৌশলগুলো প্রয়োগ করা সম্ভব, তবে একজন পেশাদার থেরাপিস্টের সহায়তায় এই কৌশলগুলো আরও ফলপ্রসূ হতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top